গণ আন্দোলনের প্রেক্ষিতে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা, অগ্নিসংযোগ এবং পুলিশ সদস্যদের হত্যার ঘটনা ঘটে। এর ফলে, থানায় হামলা এবং সহকর্মীদের হত্যার প্রতিবাদে ট্র্যাফিক পুলিশ সদস্যরাও অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতিতে যান। পরবর্তীতে, সড়কে যান চলাচল বাড়ার প্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা স্বেচ্ছায় ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণে অংশ নেয়।
এরই ধারাবাহিকতায়, ৯ আগস্ট রাজধানীর সায়েন্সল্যাব এলাকায় একটি ওষুধ সরবরাহের গাড়ি সন্দেহজনক মনে হলে, শিক্ষার্থীরা সেটি আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। চালক গাড়ির ভেতরে ওষুধ থাকার কথা বললেও, দরজা খোলার পর সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনের ছবিসহ কিছু জিনিসপত্র পাওয়া যায়। শিক্ষার্থীরা দাবি করে, ওই জিনিসপত্রের সাথে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ নথি এবং তিন হাজার কোটি টাকার একটি চেকও পাওয়া গেছে। এই দাবি দ্রুতই গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
উক্ত দাবিতে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন দেখুন বাংলা টিভি, বাংলাভিশন, খবরের কাগজ, দৈনিক শিক্ষা, কালের কণ্ঠ, গ্রামের কাগজ, আমাদের সময়, খুলনা গেজেট, জুম বাংলা, সাতক্ষীরা নিউজ, আজকের দর্পণ, আজ সারাবেলা, ডেইলি বাংলাদেশ, জনকণ্ঠ, রূপালী বাংলাদেশ, একুশে সংবাদ, বায়ান্ন টিভি, দ্য মিরর এশিয়া, নিউজ২৪, এমটিনিউজ২৪, বার্তা বাজার (ফেসবুক) এবং দ্য বাংলাদেশ মোমেন্টস।
ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ওষুধ সরবরাহের গাড়িতে সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনের ৩ হাজার কোটি টাকার চেক পাওয়ার দাবিটি সত্য নয় বরং ওই গাড়িতে পাওয়া ক্রেডিট কার্ডের স্টেটমেন্টকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করার কারণে এই বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে।
দাবিটির সত্যতা অনুসন্ধানে গণমাধ্যমে এই বিষয়ে প্রচারিত ভিডিও প্রতিবেদনগুলো পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। সংবাদমাধ্যম বায়ান্ন টিভি’র ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের ৩ মিনিট ১১ সেকেন্ডের দৃশ্যে মোবাইল ফোনে কথিত ওই কথিত চেকের একটি ছবি দেখানো হয়।
পরবর্তীতে মূলধারার অনলাইন গণমাধ্যম বিডিনিউজ২৪-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ওই ওষুধ সরবরাহের ভ্যান থেকে সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনের মালামালের সাথে কথিত তিন হাজার কোটি টাকার চেক পাওয়ার দাবি করা হলেও প্রকৃতপক্ষে এটি ছিল একটি ক্রেডিট কার্ডের স্টেটমেন্ট।
উক্ত প্রতিবেদনে কথিত ওই চেকের একটি ছবিও যুক্ত করা হয়, যা বায়ান্ন টিভির ভিডিও প্রতিবেদনে প্রদর্শিত কথিত চেকের ছবির সাথে মিলে যায়। কথিত চেকের ছবিটি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এটি সিটি ব্যাংকের ভিসা ক্রেডিট কার্ডের একটি স্টেটমেন্ট, যা ২০১৯ সালের ২৮ নভেম্বর ইস্যু করা হয়েছিল। স্টেটমেন্টে অনুযায়ী, গ্রাহক আবু মোহাম্মদ আমিন উদ্দিনের ওই ক্রেডিট কার্ড বাবদ ব্যাংক ৩ হাজার টাকা পাওনা ছিল, যা তিনি ২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর পরিশোধ করেছেন। এই পেমেন্টের পর তার কার্ডের বর্তমান বকেয়া শূন্য টাকায় নেমে এসেছে। স্টেটমেন্টে ৩ হাজার টাকা পরিশোধের বিষয়টি (3000.00 CR) হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
অর্থাৎ, ক্রেডিট কার্ডের স্টেটমেন্টে উল্লিখিত ‘3,000.00 CR’ দ্বারা ৩ হাজার টাকার ক্রেডিট ব্যালেন্স বুঝানো হয়েছে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা এটি ভুলভাবে ৩ হাজার কোটি টাকা হিসেবে ধরে নিয়েছেন। এছাড়া, কার্ডের ‘নিউ ব্যালেন্স’ শূন্য দেখানোর কারণে শিক্ষার্থীরা ধরে নিয়েছেন, সেই টাকা তুলে নিয়েছেন ‘চেকের’ মালিক।
শিক্ষার্থীরা ওই গাড়িতে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ নথি পেয়েছেন বলেও দাবি করেছেন। তবে সেখানে সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের নিজস্ব নথি ও মালামাল ছিল, নাকি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ নথি ছিল, তা নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
সুতরাং, রাজধানীর সায়েন্সল্যাবে ওষুধ সরবরাহের গাড়িতে সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনের ৩ হাজার কোটি টাকার চেক পাওয়ার দাবিটি বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
- Rumor Scanner’s own analysis.
- Bdnews24 – ভ্যানে সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেলের ৩ হাজার কোটি টাকার চেক? যা জানা গেল