ইলন মাস্কের টুইটারের নাম পরিবর্তন করে এক্স রাখার কারণ হিসেবে ভুয়া তথ্য প্রচার

নানা নাটকীয়তার পর ২০২২ সালে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কোম্পানি টুইটার কিনে নেন বিলিয়নিয়ার ইলন মাস্ক। পরবর্তীতে ২০২৩ সালে টুইটারের নাম পরিবর্তন করে নতুন নাম হিসেবে এক্স নামকরণ করেন। সম্প্রতি এরই প্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দাবি প্রচার করা হচ্ছে, “ইলন মাস্কের প্রাক্তন প্রেমিকা অ্যাম্বার হার্ড টুইটারে নতুন প্রেমিক পাওয়ার পর তাকে ব্লক করেন, যা তাদের বিচ্ছেদের কারণ হয়। এতে ইলন মাস্ক বেশ ক্ষুব্ধ হন। এরপর ইলন মাস্ক টুইটার কিনে নেন, তার প্রাক্তন প্রেমিকাকে সাইট থেকে ব্যান করেন, এবং প্ল্যাটফর্মের নাম পরিবর্তন করে “X” রাখেন, যেনো এটি তার প্রভাবের প্রতীক হিসেবে থাকে।”

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, অ্যাম্বার হার্ডের কারণে টুইটার নাম পরিবর্তন করে এক্স করেননি ইলন মাস্ক বরং, দীর্ঘ সময় ধরে নিজের পছন্দের অক্ষর এক্স হওয়ায় ও টুইটারকে রিব্র্যান্ডিং ও ‘এভ্রিথিং এপ’ বানানো ত্বরান্বিত করতে টুইটারের নতুন নাম এক্স করেছিলেন ইলন মাস্ক। এমন নামের কারণ হিসেবে অ্যাম্বার হার্ডের কোনো সম্পৃক্ততার বিষয় ইলন মাস্ক প্রকাশ্যে কখনোই বলেননি।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আমেরিকান বিজনেস নিউজ চ্যানেল CNBC এ ২০২৩ সালের ২৪ জুলাই শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, রিব্রান্ডিং এর জন্য ইলন মাস্ক টুইটারের বিখ্যাত পাখির লোগো পরিবর্তন করে X করেছেন। টুইটারকে এক্সে পরিবর্তন করার এমন পদক্ষেপ প্ল্যাটফর্মটিকে মাস্কের কথিত এভ্রিথিং এপ বানানোর ভিশনকে প্রতিফলিত করে। এক্স অক্ষরের সাথে টেসলা সিইও ইলন মাস্কের সখ্যতা নতুন নয়৷ ইলন মাস্কের অন্যান্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানেও এই অক্ষরের উপস্থিতি পাওয়া যায়। যেমন: মাস্কের রকেট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান SpaceX এর লোগোতেও X দেখতে পাওয়া যায়। মাস্ক সেসময় নতুন একটি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স স্টার্টআপও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যার নাম xAI. এর আগে মাস্ক X.com নামে আরেকটি উদ্যোগ নিয়েছিলেন যা পরবর্তীতে Confinity এর সাথে একত্রিত হয়ে ২০০১ সালে পেপালে রূপ নেয়। এই X.com ডোমেইনটি তিনি ২০১৭ সালে পেপালের থেকে পুনরায় কিনে নিয়েছিলেন। 

একই গণমাধ্যমে প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মাস্ক একটি পোস্টে জানিয়েছেন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও এভ্রিথিং এপ ত্বরান্বিত করতে X Corp এর দ্বারা টুইটার কেনা হয়েছে। এটি তখনই যুক্তিযুক্ত ছিল যখন টুইটারে শুধুমাত্র ১৪০টি অক্ষরের বার্তা আদান-প্রদান হত। কিন্তু এখন আপনি প্রায় সবকিছুই পোস্ট করতে পারবেন, এমনকি কয়েক ঘণ্টার ভিডিওও। আসন্ন মাসগুলোতে, আমরা ব্যাপক যোগাযোগের সুবিধা এবং আপনার পুরো আর্থিক পৃথিবী পরিচালনার সক্ষমতা যোগ করবো। সেই পরিপ্রেক্ষিতে, টুইটারের নাম আর যুক্তিযুক্ত নয়, তাই আমাদেরকে পাখিটিকে (সাবেক টুইটার) বিদায় জানাতে হবে। এ বিষয়ে অনুসন্ধানে এক্সে ইলন মাস্কের উক্ত পোস্টটিও পাওয়া যায়।

একই তথ্য জানা যায় আমেরিকান টেলিভিশন সম্প্রচারক CBS News এবং যুক্তরাজ্যের লন্ডনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম লন্ডন স্ট্যান্ডার্ড থেকেও। ১৯৯৯ সালেই x.com নামে একটি আর্থিক বা ফিনান্সিয়াল স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পরবর্তীতে এটি পিটার থিয়েল এবং ম্যাক্স লেভচিনদের প্রতিষ্ঠা করা অন্য একটি কোম্পানির সাথে একত্রিত হয়ে পেপাল নাম ধারণ করে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ পেমেন্ট সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। শোনা যায় যে, মাস্ক চেয়েছিলেন নতুন কোম্পানির নাম x.com থাকবে যা মেনে না নেওয়ায় তিনি কোম্পানি পরিত্যাগ করেন এবং পরবর্তীতে তিনি স্পেসএক্স নামে মহাকাশবিষয়ক কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। তার ইলেক্ট্রিক কার কোম্পানি টেসলাতেও মডেল এক্স নামের গাড়ি উন্মোচন করেন এবং এমনকি এক্স নামে ইলন মাস্কের একটি সন্তানও রয়েছে।

উল্লেখ্য যে, প্রায় ১৬ বছর পর ২০১৭ সালে ইলন মাস্ক তার পুরোনো ডোমেইন X.com পেপালের থেকে পুনরায় কিনে নেন। 

এদিকে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে ২০১৭ সালে ইলন মাস্ক এবং হলিউড অভিনেত্রী অ্যাম্বার হার্ড ডেটিং শুরু করেন এবং ২০১৭-১৮ এর দিকে ব্রেকআপ করেন৷ তবে, অ্যাম্বার হার্ডের প্রাক্তন স্বামী জনি ডেপের দাবি ইলন মাস্ক এবং অ্যম্বার হার্ড ২০১৫ সালে ডেটিং শুরু করেন। 

অর্থাৎ এটি প্রতীয়মান যে, অ্যাম্বার হার্ডের সাথে প্রেম শুরুর আরো অনেক আগেই ইলন মাস্কের কাছে X.com নামের ডোমেইন ছিল। তাছাড়া, ইলন মাস্ক কখনোই টুইটারের নাম এক্স করার পিছনে অ্যাম্বার হার্ডের সম্পৃক্ততার কোনো দাবি প্রকাশ্যে জানাননি।

সুতরাং, প্রাক্তন প্রেমিকা অ্যাম্বার হার্ডের উপর ক্ষুব্ধ হয়ে ইলন মাস্ক টুইটারের নাম এক্স করেছেন শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img