মিলাদ কিয়াম বাহাস নিয়ে মুফতি রেজাউল করিমের বিষয়ে এই ফটোকার্ড যমুনা টিভি প্রকাশ করেনি

গত ০২ জুন টাঙ্গাইলের মধুপুরে প্রচলিত মিলাদ কিয়ামপন্থী ও প্রচলিত মিলাদ কিয়ামবিরোধীদের মধ্যে ‘মিলাদ-কিয়াম’ বিষয়ে বাহাস হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা অনুষ্ঠিত হয়নি। এর প্রেক্ষিতে ‘মিলাদ কিয়াম’ বাহাসে উপস্থিত হননি প্রচলিত মিলাদ কিয়ামবিরোধী মুফতি রেজাউল করিম আবরার শীর্ষক শিরোনামে যমুনা টিভির লোগো সম্বলিত একটি ফটোকার্ড ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে। ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যাচ্ছে, এটি প্রকাশের তারিখ উল্লেখ আছে গত ২ জুন।

মিলাদ কিয়াম

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

কিছু পোস্টের ক্যাপশনে এই ফটোকার্ডের জন্য যমুনা টিভির সমালোচনাও করা হয়েছে। HM AL-Amin Rahman নামে এক ব্যক্তি আলোচিত ফটোকার্ডটি পোস্ট করে ক্যাপশনে উল্লেখ করেন, ‘এটা কি শুনলাম,, মধুপুরে মিলাদ কিয়াম নিয়ে বাহাসে আসেনি আবরার সাহেব, কি ভাবছেন এটা মিথ্যা  কথা,,,আবার কওমিরা বললেন সুন্নিরা আসেনি,আসুন কোনটা সথ্যি আর কোনটা মিথ্যা, জাতিয় সংবাদ মাধ্যম যমুনা টেলিভিশনের পর্দায় দেখুন,হে যানি বলবেন এটাও মিথ্যা,তাহলে আপনারা যমুনা টিভির এমন সম্মান হানী  সংবাদের বিরুদ্ধে মামলা করুন,যদি মামলা করেন তাহলে বুজবো আপনারা সথ্যি আর না হয় আপনারা মিথ্যুক,আর মিথ্যুকদের উপর আল্লাহর লা’নত,,’।

আশরাফ মোহাম্মাদ সোলাইমান নামে আরেক ব্যক্তি ফেসবুকে লিখেছেন, “যমুনা টিভিতে একটা সময় ভালো জানতাম এখন দেখছি যমুনা টিভি ও ভুয়া নিউজ তৈরি করে।”

শেখ জাকারিয়া সাইফ নামে এক ব্যক্তি এই ফটোকার্ডের জন্য যমুনা টিভিকে রীতিমতো বয়কটেরই ঘোষণা দিয়েছেন। লিখেছেন, “ভুল মিথ্যা নিউজ দেওয়ার জন্য আজ থেকে আমি হলুদ মিডিয়া #_যমুনা_টিবিকে_বয়কট। যমুনা টিভি কে একটা সময় ভালো জানতাম। এখন দেখছি যমুনা টিভি ও ভুয়া নিউজ তৈরি করে।”

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ‘মিলাদ কিয়াম’ বাহাসে উপস্থিত হননি মুফতি রেজাউল করিম আবরার শীর্ষক দাবিতে কোনো সংবাদ বা প্রতিবেদন যমুনা টিভি প্রকাশ করেনি বরং ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় যমুনা টিভির ফটোকার্ড সম্পাদনা করে রেজাউল কারীম আবরার ও মুফতী আলাউদ্দীন জিহাদী’র ছবি যুক্ত করে ভুয়া ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে যমুনা টিভির ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলো পর্যালোচনা করে গত ০২ জুন প্রকাশিত উক্ত শিরোনাম সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও, গণমাধ্যমটির ওয়েবসাইট, ইউটিউব চ্যানেলেও এ বিষয়ে কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি।

বিষয়টি আরো নিশ্চিত হতে যমুনা টিভির চিফ নিউজ এডিটর তৌহিদুল ইসলাম এবং নিউ মিডিয়া এডিটর রুবেল মাহমুদের সাথে কথা বলেছে রিউমর স্ক্যানার। দুজনই আমাদের নিশ্চিত করেছেন যে, এই ফটোকার্ডটি যমুনার পেজে প্রকাশিত হয়নি। রুবেল মাহমুদ আরো জানালেন, এই ফটোকার্ডে যে ফন্ট ব্যবহার করা হয়েছে তা যমুনা টিভির পেজের ফটোকার্ডের সাথে মিল নেই।

রিউমর স্ক্যানার একাধিক ভিন্ন ভিন্ন কিওয়ার্ড সার্চ করেও এ বিষয়ে দেশের মূল ধারার অন্য কোনো গণমাধ্যমেও এ সংক্রান্ত সংবাদ বা তথ্য পায়নি। 

মূল ঘটনা সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে 

প্রচলিত মিলাদ কিয়ামপন্থী মুফতি আলাউদ্দিন জিহাদীর ফেসবুক পেজ ‘Mufti Alauddin Jihadi’-এ গত ৩১ মে প্রকাশিত একটি পোস্ট (আর্কাইভ) থেকে জানা যায়, ০২ জুন বিকেলে টাঙ্গাইলের মধুপুরের মহিষমারা পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে স্থানীয় কওমী ওলামাদের সাথে সুন্নী ওলামায়ে কেরামের “মিলাদ-কিয়াম” বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বাহাস অনুষ্ঠিত হবে। এই পোস্টে তিনি মিলাদ-কিয়ামের পক্ষে ও বিপক্ষে কারা কারা থাকবেন তাদের নাম উল্লেখ করেন। কিন্তু এই তালিকায় রেজাউল কারীম আবরার এর নাম ছিল না।

একই ফেসবুক পেজে গত ২ জুন ‘টাঙ্গাইল মধুপুরের বাহাস সম্পর্কে-’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত লাইভ ভিডিও থেকে জানা যায়, মিলাদ-কিয়াম এর পক্ষের হুজুররা যথাসময়ে উপস্থিত হলেও টাঙ্গাইলের মধুপুুর থানার প্রশাসনিক অনুমোদন না থাকায় বাহাস সংগঠিত হয়নি। লাইভ ভিডিও থেকে আরও জানা যায়, মিলাদ-কিয়ামের বিপক্ষের বক্তাদের মধ্যে মাওলানা রেজাউল করীম আবরার না থাকলেও পরবর্তীতে তার নাম যুক্ত করা হয়েছে।

এই বিষয়ে মাওলানা রেজাউল কারীম আবরার এর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ১ জুনের একটি পোস্ট (আর্কাইভ) পাওয়া যায়। পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমার পারিবারিক এবং সাংগঠনিক প্রচণ্ড ব্যস্ততা থাকার পরও ইমাম সাওয়াব রাহি., ইমাম আশার রাহি., কুল্লু ফায়িলুন মারফুউন সহ অসংখ্য মূর্খতা এবং ইলমি বিনোদনের জনক আলাউদ্দিন জিহাদির সাথে আগামীকাল অনুষ্ঠিত টাঙ্গাইলের মধুপুরের বাহাসে আমিও থাকব ইনশাআল্লাহ।’

মূলত, গত ০২ জুন টাঙ্গাইলে প্রচলিত মিলাদ কিয়ামপন্থী ও প্রচলিত মিলাদ কিয়ামবিরোধীদের মধ্যে ‘মিলাদ-কিয়াম’ বিষয়ে বাহাস হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা অনুষ্ঠিত হয়নি। এর প্রেক্ষিতে ‘মিলাদ কিয়াম’ বাহাসে উপস্থিত হননি প্রচলিত মিলাদ কিয়ামবিরোধী মুফতি রেজাউল করিম আবরার শীর্ষক শিরোনামে যমুনা টিভির লোগো সম্বলিত একটি ফটোকার্ড ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, আলোচিত ফটোকার্ডটি যমুনা টিভি প্রকাশ করেনি। ভুয়া এই ফটোকার্ড ব্যবহার করে উক্ত দাবিটি প্রচার করে গণমাধ্যমটিরও সমালোচনা করা হয়েছে। 

সুতরাং, ‘মিলাদ-কিয়াম’ বাহাসে উপস্থিত হননি মুফতি রেজাউল কারীম আবরার দাবিতে যমুনা টিভির নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি মিথ্যা ও বানোয়াট।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img