রমজান মাস চলাকালীন গত ৪ মার্চ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচ চলাকালীন দিনের বেলাতেই ভারতীয় ক্রিকেটার মোহাম্মদ শামিকে এনার্জি ড্রিঙ্ক পান করতে দেখা যায়। তিনি রোজা পালন না করায় তা নিয়ে পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ নানা জায়গায় চরম আলোচনা-সমালোচনা তৈরি হয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে মোহাম্মদ শামি বলেছেন “রোজা ভাঙতে জোর করা হয়েছে, নাহলে এরা আমার কেরিয়ার শেষ করে দিত”।

উক্ত দাবিতে গণমাধ্যমের ফেসবুক পেজে প্রচারিত পোস্ট দেখুন বিডি২৪রিপোর্ট।
উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত নেটিজেনদের পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সম্প্রতি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ম্যাচ চলাকালীন রোজা না রাখার কারণ হিসেবে “রোজা ভাঙতে জোর করা হয়েছে, নাহলে এরা আমার কেরিয়ার শেষ করে দিত” শীর্ষক কোনো মন্তব্য মোহাম্মদ শামি করেননি। প্রকৃতপক্ষে, মোহাম্মদ শামির পুরোনো একটি ভিডিওতে ডিপফেক প্রযুক্তি ব্যবহার করে আলোচিত ভুয়া মন্তব্যের অডিও যোগ করা হয়, যার প্রেক্ষিতে পরবর্তীতে আলোচিত দাবিটি ছড়িয়ে পড়ে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলো পর্যবেক্ষণ করলে তাতে প্রচারিত দাবিটির সপক্ষে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলেও মোহাম্মদ শামির এমন কোনো প্রকাশ্য মন্তব্য করার বিষয়ে গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রেও কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। প্রকৃতপক্ষে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ম্যাচে রোজা না রাখার বিষয়ে মোহাম্মদ শামি এরূপ কোনো মন্তব্য করে থাকলে তা গণমাধ্যমে প্রচার করা হতো।
পরবর্তীতে আলোচিত দাবিটির সূত্রপাতের বিষয়ে অনুসন্ধান করলে ইনস্টাগ্রামে এনার্জি ড্রিঙ্ক পান করা অবস্থায় ধারণকৃত শামির ছবিসহ প্রচারিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়, যেখানে দেখা যায় যে হিন্দি ভাষায় শামি বলছেন, “হ্যাঁ, আমি সেদিন রোজা ভেঙে ফেলেছিলাম। মুসলিম ভাই ও বোনেরা, দয়া করে আমাকে ভুল বুঝবেন না। আমি ইচ্ছাকৃতভাবে এটি করিনি। আমাকে আমার রোজা ভাঙতে বাধ্য করা হয়েছিল, অন্যথায়, ওই লোকেরা আমার ক্যারিয়ার ধ্বংস করে দিত। আমি আবারও আমার মুসলিম ভাইবোনদের কাছে ক্ষমা চাইছি।”
উল্লিখিত উক্ত ভিডিওটির সত্যতা যাচাই করতে ভিডিওটির একাধিক কি-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে মোহাম্মদ শামির ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ২০২৪ সালের ১১ এপ্রিলে ‘Wishing the magic of Eid bring never-ending happiness, peace, and prosperity in your life. Eid Mubarak! #shami #mdshami #eidmubarak #eid’ শীর্ষক ক্যাপশনে প্রচারিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওতে শামির পরিধেয় পাঞ্জাবী, পারিপার্শ্বিক অবস্থার সাথে প্রচারিত ভিডিওটির তুলনা করলে সাদৃশ্য পাওয়া যায় এবং নিশ্চিত হওয়া যায় যে প্রচারিত ভিডিওটির দৃশ্য মূলত উক্ত ভিডিওটি থেকেই নেওয়া হয়েছে।

মূলত ২০২৪ সালের ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রচার করা উক্ত ভিডিওতে শামিকে তার নিজের, পরিবার ও বন্ধুদের তরফ থেকে হিন্দি ভাষায় বলতে শোনা যায়, “ঈদের মিষ্টি উপভোগ করতে থাকো। আজ ঈদ। ঈদের উৎসব সুন্দরভাবে উদযাপন করো।” তবে, ভিডিওতে কোথাও তাকে রোজা রোজা ভাঙার বা এর জন্য ক্ষমা চাওয়ার বিষয়ে কথা বলতে দেখা যায়নি।
এছাড়া, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে তাতে সংযুক্ত অডিও এর সাথে শামির অঙ্গভঙ্গির কিছুটা অসামঞ্জস্যতা লক্ষ্য করা যায়, যেটি মূল ভিডিওতে পরিলক্ষিত হয়নি। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে ভিডিওটি ডিপফেক প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। এবং পরবর্তীতে এরই প্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচিত মন্তব্যটি মোহাম্মদ শামির মন্তব্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, ডিপফেক হল বাস্তবসম্মত দেখতে কিন্তু নকল বা কিছুটা পরিবর্তিত কন্টেন্ট যা ভিডিও বা অডিওর উপাদান সম্পাদনা করে তৈরি করা হয়। ডিপফেক ভিডিওতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআইI) প্রযুক্তি ব্যবহার করে একজন ব্যক্তির মুখের অবয়ব বা ভয়েসকে অন্য কারোর সাথে বিশ্বাসযোগ্যভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়। এই প্রযুক্তির সহায়তায় একজন ব্যক্তির এমন কিছু ভিডিও বা অডিও কন্টেন্ট তৈরি করা সম্ভব যা তিনি নিজে বলেননি বা করেননি।
সুতরাং, সম্প্রতি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ম্যাচ চলাকালীন রোজা না রাখার কারণ হিসেবে “রোজা ভাঙতে জোর করা হয়েছে, নাহলে এরা আমার কেরিয়ার শেষ করে দিত” শীর্ষক মন্তব্য মোহাম্মদ শামি করেছেন শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Md Shami: Instagram post
- Rumor Scanner’s analysis