২৬ তারিখে ডলার আসা প্রসঙ্গে ড. ইউনূসের নামে ভুয়া মন্তব্য প্রচার

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ২৬ সেপ্টেম্বর বেশ ভাইরাল একটি বিষয়। মূলত টেলিগ্রামভিত্তিক একটি গেমিং বট নিয়েই আলোচনায় রয়েছে ২৬ সেপ্টেম্বর। গেমিং বটটির নাম হামস্টার কমব্যাট। যেখানে বিভিন্ন টাস্ক পূরণ ও ট্যাপ করে গেম কারেন্সি (কয়েন, কি ইত্যাদি) অর্জন করা যায়। ফেসবুক, এক্স ও ইউটিউবে অনেকেই এই গেমটির বিষয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন। তারা দাবি করেছেন, ২৬ তারিখে এই গেমটির কয়েনগুলোকে ক্রিপ্টোকারেন্সিতে রূপান্তর করা যাবে বলে গেমসটির নির্মাতারা জানিয়েছেন। তবে এর সত্যতা যাচাই করা যায়নি। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দাবি প্রচার করা হচ্ছে যে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, “২৬ তারিখ যে পরিমান ডলার আসবে, এই টাকা দিয়ে বাংলাদেশ আমেরিকায় রুপান্তরিত করা যাবে”।

ডলার আসা প্রসঙ্গে ড. ইউনূসের

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়া অবধি উক্ত দাবিতে সবচেয়ে ভাইরাল পোস্টটিতে ৫৫ হাজারেরও অধিক পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে, প্রায় ২ হাজারটিরও অধিক মন্তব্য করা হয়েছে এবং ৩ হাজারেরও অধিক বার পোস্টটি শেয়ার করা হয়েছে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ২৬ সেপ্টেম্বর তারিখে ডলার আসা প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস এমন কোনো মন্তব্য করেননি বরং কোনরকম তথ্য প্রমাণ ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে শুরুতে দাবিটির সূত্রপাতের খোঁজে একাধিক ফেসবুক মনিটরিং টুল ব্যবহার করে সম্ভাব্য প্রথম পোস্টটি খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম।

হাসান মাহমুদ কায়েদ নামের একটি ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে গত ১৭ সেপ্টেম্বর তারিখে আলোচিত দাবিতে সম্ভাব্য সর্বপ্রথম পোস্টটি করা হয়। পোস্টটির ক্যাপশনে “Ten Unknown Facts About #BMW…” নামের সাম্প্রতিক সময়ের একটি বহুল জনপ্রিয় ক্যাপশন লিখে কোন রকম তথ্য প্রমাণ ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়। তাছাড়া প্রচারিত ফটোকার্ডটিতে কোন গণমাধ্যমের লোগো কিংবা নামও দেখা যায়নি। সাধারণত কোন ফটোকার্ড কোন মূলধারার সংবাদমাধ্যম প্রকাশ করে থাকলে তারা সেই ফটোকার্ডটিতে তাদের নিজেদের লোগো কিংবা নাম ব্যবহার করে থাকে। অর্থাৎ উক্ত ফটোকার্ডটি কোন মূলধারার সংবাদমাধ্যম প্রকাশ করার সম্ভাবনা কম।

পরবর্তীতে এ বিষয়ে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে ড. ইউনূসের উক্ত মন্তব্যের বিষয়ে আলোচিত দাবির স্বপক্ষে বিশ্বস্ত সূত্রে কোন তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। 

ড.ইউনূসের এমন মন্তব্যের তথ্যপ্রমাণ পাওয়া না গেলেও আজ (১৮ সেপ্টেম্বর) মূলধারার গণমাধ্যম প্রথম আলোতে “উন্নয়ন সহযোগীরা ইতিবাচক, এক হাজার কোটি ডলার পাওয়ার সম্ভাবনা” শিরোনামে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, “ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে একের পর এক বৈঠক করছেন অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। এসব বৈঠকে তিনি ভালো অঙ্কের বৈদেশিক সহায়তা পাওয়ার আশ্বাস পেয়েছেন।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে জুম প্ল্যাটফর্মে একটি বৈঠক হয়েছে। বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংক (আইএসডিবি) ও যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএআইডি) সঙ্গে অর্থ উপদেষ্টার বৈঠক হয়েছে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, ভারত, চীন প্রভৃতি দেশের রাষ্ট্রদূত এবং হাইকমিশনাররাও অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সবার কাছ থেকে মোট ১ হাজার ২০ কোটি মার্কিন ডলার পাওয়া যেতে পারে বলে জানা গেছে।”

তবে, উক্ত প্রতিবেদনেও আলোচিত দাবিটির সপক্ষে কোনো তথ্যের উল্লেখ পাওয়া যায়নি।

সুতরাং, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, “২৬ তারিখ যে পরিমান ডলার আসবে, এই টাকা দিয়ে বাংলাদেশ আমেরিকায় রুপান্তরিত করা যাবে” শীর্ষক দাবিটি ভিত্তিহীন এবং মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img