সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী সংঘাত-সংঘর্ষ ও ইন্টারনেট বন্ধ প্রবাসীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বৈধপথে রেমিট্যান্স না পাঠানোর আহ্বান জানায় অনেক প্রবাসী। এই প্রেক্ষিতে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক “রেমিট্যান্স না পাঠালে দেশে আসা বন্ধ করে দিবো” শীর্ষক মন্তব্য করেছেন দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এবং এখানে (আর্কাইভ)।
উক্ত দাবিতে টিকটকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এবং এখানে (আর্কাইভ)।
এছাড়া প্রতিমন্ত্রী পলক “টাকা না পাঠালে প্রবাসীদের নাগরিকত্ব বাতিল করা হবে” শীর্ষক আরেকটি মন্তব্য করেছেন দাবিতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আরটিভির ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড প্রচারিত হয়।
উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রতিমন্ত্রী পলক “রেমিট্যান্স না পাঠালে দেশে আসা বন্ধ করে দিবো” এবং “টাকা না পাঠালে প্রবাসীদের নাগরিকত্ব বাতিল করা হবে” শীর্ষক মন্তব্যগুলো করেননি বরং গণমাধ্যমের ভুয়া সূত্র ও ফটোকার্ড বিকৃত করে পলকের নামে উক্ত ভুয়া মন্তব্যগুলো প্রচার করা হয়েছে।
প্রথম দাবি যাচাই
প্রতিমন্ত্রী পলক “রেমিট্যান্স না পাঠালে দেশে আসা বন্ধ করে দিবো” শীর্ষক মন্তব্য করেছেন দাবিতে একটি তথ্য ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে এই বিষয়ে অনুসন্ধানের মাধ্যমে গত ২৫ জুলাই ‘Education News’ নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে উক্ত দাবিতে প্রচারিত সম্ভাব্য প্রথম পোস্টটি খুঁজে পাওয়া যায়। যেখানে প্রতিমন্ত্রী পলকের উক্ত মন্তব্যের সূত্র হিসেবে সময় টিভির নাম উল্লেখ করা হয়। একই দিন ‘Bangladesh Community Group USA’ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে এই দাবি প্রচার করা হয়।

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সময় টিভি এমন কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। গণমাধ্যমটির ওয়েবসাইট এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাকাউন্টগুলোতে এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
উক্ত পোস্টগুলোর একদিন পর গত ২৬ জুলাই কোনো সূত্র উল্লেখ বাদেই প্রতিমন্ত্রী পলক “রেমিট্যান্স না পাঠালে দেশে আসা বন্ধ করে দিবো” শীর্ষক মন্তব্য করেছেন দাবিটি ফেসবুক ও টিকটকে ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ২৫ জুলাই এবং তার পূর্ববর্তী দিনগুলোতে প্রতিমন্ত্রী পলকের ফেসবুক আইডি, পেজ এবং অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পর্যবেক্ষণ করেও এমন কোনো মন্তব্যের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। গত ২৭ জুলাই প্রতিমন্ত্রী পলক নিজের ফেসবুক পেজে একটি পোস্টে এই দাবিটি গুজব ও অপপ্রচার বলে উল্লেখ করেন।
সুতরাং, প্রতিমন্ত্রী পলক “রেমিট্যান্স না পাঠালে দেশে আসা বন্ধ করে দিবো” শীর্ষক কোনো মন্তব্য করেননি।
দ্বিতীয় দাবি যাচাই
দ্বিতীয় দাবিতে, প্রতিমন্ত্রী পলক “টাকা না পাঠালে প্রবাসীদের নাগরিকত্ব বাতিল করা হবে” শীর্ষক মন্তব্য করেছেন দাবিতে আরটিভির ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড ছড়িয়ে পড়ে।
দাবিকৃত ফটোকার্ডটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, আরটিভির লোগো সম্বলিত এই ফটোকার্ডটি প্রকাশের তারিখ হিসেবে গত ২৭ জুলাইয়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে এবং এতে প্রতিমন্ত্রী পলকের একটি ছবিও রয়েছে।
এই সূত্র ধরে রিউমর স্ক্যানার টিম আরটিভির ফেসবুক পেজে খুঁজে দেখে, গত ২৭ জুলাই প্রতিমন্ত্রী পলকের ছবি সহ পেজটিতে দুইটি (১,২) ফটোকার্ড প্রচারিত হয়েছে, তবে কোনোটি এই দাবির সাথে মিলে না।
আরও অনুসন্ধানে, ১৮ জুলাই আরটিভির পেজে প্রতিমন্ত্রী পলকের একই ছবি সহ একটি ফটোকার্ড পাওয়া যায়। যার শিরোনাম ছিল “মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের কারণ জানালেন পলক”। এছাড়া দাবিকৃত ফটোকার্ড এবং আরটিভির ফটোকার্ডের গ্রাফিক্স ডিজাইনে কিছুটা মিল থাকলেও এদের ফন্টের মধ্যে পার্থক্য দেখা যায়। যা নিশ্চিত করে পলকের মন্তব্য সম্বলিত আরটিভির নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি ভুয়া।

আরটিভির ফেসবুক পেজ থেকেও দাবিকৃত ফটোকার্ডটি ভুয়া জানিয়ে একটি পোস্ট করা হয়। এছাড়া প্রতিমন্ত্রী পলক প্রবাসীদের উদ্দেশ্যে এমন কোনো মন্তব্য করেননি, বরং গত ২৭ জুলাই বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠাতে প্রবাসীদের অনুরোধ করেছেন তিনি।
মূলত, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশে সংঘাত-সংঘর্ষের এবং ইন্টারনেট বন্ধের পরিস্থিতি তৈরি হয়, যা প্রবাসীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করে। এই ক্ষোভে বৈধপথে রেমিট্যান্স না পাঠানোর আহ্বান জানান অনেক প্রবাসী। এই প্রেক্ষাপটে, প্রতিমন্ত্রী পলক “রেমিট্যান্স না পাঠালে দেশে আসা বন্ধ করে দিবো” এবং “টাকা না পাঠালে প্রবাসীদের নাগরিকত্ব বাতিল করা হবে” শীর্ষক মন্তব্য করেছেন বলে দুইটি দাবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে। তবে, রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রতিমন্ত্রী পলক এমন কোনো মন্তব্য করেননি। প্রথম মন্তব্যটি সময় টিভির নামে সূত্র উল্লেখ করে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হলেও সময় টিভি এমন কোনো তথ্য প্রচার করেনি। দ্বিতীয় মন্তব্যটি আরটিভির ডিজাইন সম্বলিত ফটোকার্ডে প্রচার করা হলেও আরটিভি কর্তৃক কোনো সংবাদ প্রকাশ করা হয়নি।
সুতরাং, জুনাইদ আহমেদ পলক “রেমিট্যান্স না পাঠালে দেশে আসা বন্ধ করে দিবো” এবং “টাকা না পাঠালে প্রবাসীদের নাগরিকত্ব বাতিল করা হবে” শীর্ষক মন্তব্য করেছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত দাবিগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Rumor Scanner’s own analysis.
- Zunaid Ahmed Palak – Facebook post.
- RTV – Facebook post.