চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুুলিশ এবং আন্দোলনকারীদের মধ্যকার সংঘর্ষে নিহতদের মৃত্যুর বিষয়ে তদন্ত করে জড়িতদের আইনের আংতায় আনাসহ বিভিন্ন দাবি জানিতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন সরকারকে সাত দিনের আল্টিমেটাম দিয়ে আন্দোলন প্রত্যাহার করেছেন দাবিতে ৬ সমন্বয়কের স্বাক্ষরিত কথিত একটি বিজ্ঞপ্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত কথিত বিজ্ঞপ্তিটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
এছাড়া সাধারণ ছাত্ররা ৯ দফা দাবি জানিয়ে তা বাস্তবায়নে সরকারকে ৩ মাসের সময় দিয়ে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দাবিতেও আরেকটি তথ্য ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। এতে দাবি করা হয়, ৬ সমন্বয়ক ছাড়া অন্য কেউ সমন্বয়ক দাবী করে এই নতুন কর্মসুচি ব্যতীত অন্য কোনো কর্মসূচি দিলে তা ছাত্রদের সাথে প্রতারনার সামিল হবে।

ফেসবুকে প্রচারিত পোস্টটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আন্দোলন প্রত্যাহারের দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত বিজ্ঞপ্তি দুটিই ভুয়া বরং, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে এমন কোনো বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়নি।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুুল্লাহ এর ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে আজ ৩ আগস্ট ভোর ৩ টা ৩৭ মিনিটে প্রচারিত একটি পোস্ট (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়। যেখানে তিনি ছাত্র-জনতার সমন্বয়ে বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দেন।

পোস্টটিতে তিনি ‘আগামীকাল ৩ আগস্ট বিকাল ৩ টায় আশেপাশের সকল আন্দোলনরত ছাত্র-জনতা মিছিল নিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এসে জড়ো হবেন। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা আগামীকালকের বিক্ষোভ মিছিলের কেন্দ্রীয় কর্মসূচি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে উপস্থিত থাকবো। আগামীকাল এই জাতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। কর্মসূচি সফলে দেশবাসীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। মুক্তির বার্তা শহীদ মিনার থেকেই ছড়িয়ে পরবে সারাদেশে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ শীর্ষক কথাগুলো বলেন।
এছাড়াও তার ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টটি পর্যালোচনার মাধ্যমে আজ ৩ আগস্ট দুপুর সাড়ে বারোটায় “দেখা হবে রাজপথে।”… (আর্কাইভ) শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও পোস্টেরও সন্ধান পাওয়া যায়।

ভিডিওটিতে তাকে বলতে শোনা যায়, আমাদের বিভিন্ন সিগনেচার নকল করে বলা হচ্ছে আমরা নাকি আন্দোলন প্রত্যাহার করেছি। স্পষ্টভাবে ঘোষণা করছি, একজন সমন্বয়ক, দুইজন সমন্বয়ক বা পাঁচজন সমন্বয়কের সিগনেচারে এই আন্দোলন বন্ধ হবে না। এটি ছাত্র-জনতার আন্দোলন, ছাত্র-জনতাই এই আন্দোলনের গতি পথ নির্ধারণ করবে। তারা যখন চাইবে, তারা যখন মনে করবে আন্দোলন বন্ধ হওয়ার সময় আসছে, তারাই তখন সিদ্ধান্ত নিবে আন্দোলন কখন বন্ধ হবে। আমি হাসনাত আব্দুল্লাহ যদি কখনো দেখেন আমি ঘোষণা দিয়েছি আন্দোলন বন্ধ করার, ধরে নিবেন সেটি আমার নিজের কোনো বক্তব্য না। জোর করে সেটি নেওয়া হচ্ছে। আমরা আপনাদের কাছে প্রত্যাশা করবো শেষ পর্যন্ত, সুদিন আসা পর্যন্ত, আমাদের প্রত্যাশিত দিনটি আসা পর্যন্ত সবাই আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। সবাই ভালো থাকবেন এবং এই আইডি থেকেই যে বার্তাটি দেওয়া হবে সেটিই হচ্ছে স্পষ্ট বার্তা।’
পাশাপাশি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট পর্যালোচনা করেও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া সম্পর্কিত একাধিক পোস্ট (১, ২) দেখতে পাওয়া যায়। উভয় ব্যক্তির কারও অ্যাকাউন্টেই আলোচিত বিজ্ঞপ্তিটি কিংবা সাত দিন বা তিন মাসের জন্যে আন্দোলন প্রত্যাহার করার বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদের সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার৷ আসিফ নিশ্চিত করেছেন, প্রচারিত বিজ্ঞপ্তিটি ভুয়া।
মূলত, বাংলাদেশে চলমান সরকারি চাকরির কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের টানা আন্দোলনের মধ্যে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের পক্ষ থেকে সাত দিন এবং তিন মাসের জন্যে আন্দোলন প্রত্যাহার করা হয়েছে দাবিতে একটি বিজ্ঞপ্তি ও একটি ফেসবুক পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আন্দোলন প্রত্যাহারের দাবিতে প্রচারিত বিজ্ঞপ্তিগুলো আসল নয়। ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সমন্বয়কদের স্বাক্ষর নকল করে আলোচিত বিজ্ঞপ্তিটি তৈরি করা হয়েছে।
সুতরাং, সাত দিন ও তিন মাসের জন্যে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন প্রত্যাহারের দাবিতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নামে প্রচারিত বিজ্ঞপ্তিগুলো ভুয়া।
তথ্যসূত্র
- Hasnat Abdullah Facebook Post
- Hasnat Abdullah Facebook Account: “দেখা হবে রাজপথে।”…
- নাহিদ ইসলাম Facebook Post
- নাহিদ ইসলাম Facebook Post
- Rumor Scanner’s Own Analysis