জুলাইয়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হবে জানিয়ে তারিখ ঘোষণা দেয়নি নির্বাচন কমিশন

সম্প্রতি, নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে আগামী জুলাই মাসে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হবার তথ্য জানানো হয়েছে দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।  

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, জুলাই মাসে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে জানিয়ে নির্বাচন কমিশনের ঘোষনা দেওয়ার নামে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে আগামী ডিসেম্বর মাসে জাতীয় নির্বাচন করার প্রস্তুতির কথা জানানো হয়েছে।

দাবিটির বিষয়ে অনুসন্ধান অনলাইন গণমাধ্যম জাগোনিউজ২৪ এর ওয়েবসাইটে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ডিসেম্বরে নির্বাচনের জন্য কমিশন প্রস্তুত: ইসি আনোয়ার শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ২৬ ফেব্রুয়ারি ভোটার তালিকা হালনাগাদ বিষয়ে মুন্সিগঞ্জে এক মতবিনিময় সভায় নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আনোয়ার ইসলাম সরকার বলেন, প্রধান উপদেষ্টা কিছুটা সংস্কার হলে ডিসেম্বরে অথবা বড় সংস্কার হলে জুনে নির্বাচনের কথা বলেছেন। তবে ডিসেম্বরকে সামনে রেখেই প্রস্তুতি চলছে। ডিসেম্বরে নির্বাচন করতে আমরা প্রস্তুত।

এছাড়াও তিনি জানান, স্থানীয় নির্বাচন করতে গেলে এক বছর সময় প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন সম্ভব নয়। ডিসেম্বরে নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন প্রস্তুতি নিচ্ছে।

পরবর্তী অনুসন্ধানে জাতীয় দৈনিক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড এর ইউটিউব চ্যানেলে জুনে স্থানীয় নির্বাচন সম্ভব নয়: ইসি আনোয়ার ইসলাম শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একই মতবিনিময় সভার একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

ভিডিওটিতেও নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আনোয়ার ইসলাম সরকারকে একই কথা বলতে শোনা যায়। পাশাপাশি স্থানীয় সরকার নির্বাচন বিষয়ে তাকে বিশেষভাবে, ‘স্থানীয় নির্বাচন বলতে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন, পৌরসভা নির্বাচন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন, জেলা পরিষদ নির্বাচন এই সব নির্বাচনগুলোকে বোঝায়। এগুলো যদি শুরু করা হয় তাহলে প্রায় এক বছর সময় লাগবে। সেক্ষেত্রে ডিসেম্বরের মধ্যে এগুলো করা সম্ভব নয়।’ শীর্ষক কথাগুলো বলতে শোনা যায়।

তবে উক্ত বক্তব্যে নির্বাচন কমিশনার জুলাইয়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজন করা হবে বলে কোনো মন্তব্য করেননি।

আলোচিত দাবিটি ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাব্য কারণ জাতীয় দৈনিক যুগান্তর-এর ওয়েবসাইটে গত ২২ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন তাদের প্রাথমিক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এ মুহূর্তে সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন একসঙ্গে করা যেতে পারে। এছাড়াও চলতি বছরের জুনের মধ্যে সব সমতল ও পাহাড়ের ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন ও জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করা সম্ভব। ধারণা করা যাচ্ছে, সংস্কার কমিশনের উক্ত প্রতিবেদনের তথ্যটি থেকেই আলোচিত দাবিটি ছড়িয়ে পড়েছে।

তবে উক্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, সংস্কার কমিশন পরামর্শ দিয়েছে জুনে সম্ভব। সেটি সম্ভব হবে যদি ১৬ লক্ষ মৃত ভোটারকে বাদ দেওয়া না হয় এবং নতুন ৩৫ লাখ ভোটারদের বাদ দিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা হয়। ভোটার তালিকা হালনাগাদের কার্যক্রম শেষ হবে আগামী জুন মাসে। সুতরাং চূড়ান্ত ভোটার তালিকা না হলে আমরা নির্বাচনের জন্য তো প্রস্তুত হতে পারছি না।আমাদের টার্গেট ডিসেম্বর এবং জাতীয় নির্বাচন। ডিসেম্বরে নির্বাচন করতে গেলে অক্টোবরে তফসিল ঘোষণা করতে হবে।”

এছাড়াও প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, এমন পরিস্থিতির মধ্যে স্থানীয় সরকার কমিশনের সুপারিশ একান্ত তাদের ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি বলে মন্তব্য করেছেন সিইসি।

সুতরাং, নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে আগামী জুলাই মাসে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে শীর্ষক তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img