কাওয়ালি অনুষ্ঠানে হামলার দৃশ্যকে বাংলাদেশে হিন্দুদের অনুষ্ঠানে মুসলিমদের হামলার দৃশ্য দাবিতে প্রচার

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি অনুষ্ঠানে হামলা ও ভাঙ্গচুরের দৃশ্য প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, “বাংলাদেশে হিন্দুদের অনুষ্ঠানে মুসলিমরা হামলা করেছে”।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি হিন্দুদের অনুষ্ঠানে মুসলিমদের হামলার দৃশ্যের নয়, বরং ময়মনসিংহে হজরত শাহ সুফি সৈয়দ কালু শাহ (রহ.)-এর মিলাদ মাহফিল, দোয়া ও সামা কাওয়ালি অনুষ্ঠানে হামলার দৃশ্যকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্ট পর্যবেক্ষণ করলে তাতে প্রচারিত দাবিটির পক্ষে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণের উল্লেখ পাওয়া যায়নি। পরবর্তী অনুসন্ধানে সালমান সাদিক শাওন নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ০৯ জানুয়ারি পোস্টকৃত একটি পোস্ট পাওয়া যায়। পোস্টটিতে সংযুক্ত ভিডিওর সাথে প্রচারিত ভিডিওটির তুলনা করলে সাদৃশ্য পাওয়া যায়। 

Comparison : Rumor Scanner

ভিডিওটি সম্পর্কে পোস্টটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, “ময়মনসিংহের থানাঘাটে হযরত শাহ্সুফী সৈয়দ কালু শাহ (রাঃ)-এর ১১৯তম মিলাদ মাহফিল, দোয়া ও সামা কাওয়ালী অনুষ্ঠান চলছিলো। যেখানে প্রতি বছরই হয় এই আয়োজন। পাশেই অবস্থিত থানার ওসি ও পুলিশ সদস্যরা দৌড়ে এসে সাউন্ড বন্ধ করে শিল্পী ও যন্ত্রীদের ঠেলে নামালেন মঞ্চ থেকে। মুহূর্তেই বৃষ্টির মতো ছুটে এলো বিক্ষুব্ধ হুজুরগণ। মিনিটেই গুঁড়িয়ে দিয়ে চলে গেলো। তবে দর্শক স্রোতা কাউকে কোন আঘাত করে নি।”

এছাড়া, মূল ধারার গণমাধ্যম মাইটিভি’র ওয়েবসাইটেও উক্ত ভিডিওটি থেকে নেওয়া একটি স্ক্রিনশটসহ গত ০৯ জানুয়ারিতে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন পাওয়া যায়। “ময়মনসিংহে কাওয়ালি অনুষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুর” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত উক্ত সংবাদ প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “ময়মনসিংহ সদরে হযরত শাহ্সুফী সৈয়দ কালু শাহ (রা.)-এর মিলাদ মাহফিল, দোয়া ও কাওয়ালি অনুষ্ঠানে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। বুধবার (৮ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ৯টার দিকে নগরীর থানাঘাট ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে এ ঘটনা ঘটে। হামলার ভিডিও রাত ১১টার দিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যা জনমনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। ভিডিওতে দেখা যায়, প্রায় শতাধিক ব্যক্তি অনুষ্ঠানস্থলে হামলা চালিয়ে মঞ্চ, সাউন্ড সিস্টেম, এবং শতাধিক চেয়ার ভাঙচুর করেন। অনুষ্ঠান পরিচালনায় থাকা শিল্পী মিজান বাউলা জানান, “গত ৪৫ বছর ধরে এখানে শান্তিপূর্ণভাবে মিলাদ মাহফিল ও কাওয়ালি অনুষ্ঠান হয়ে আসছে। কখনো এমন ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু এবার বড় মসজিদ মাদ্রাসার একদল হুজুর এসে অনুষ্ঠান চলাকালীন ভাঙচুর শুরু করে। এতে কয়েকজন আহত হয়েছেন, এবং আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।”

কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি শফিকুল ইসলাম খান জানান, বড় মসজিদ জামিয়া ফয়জুর রহমান রহ. মাদ্রাসার ছাত্ররা কাওয়ালি অনুষ্ঠানে ভাঙচুর চালান। তবে পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। তিনি বলেন, “চেয়ার ও মঞ্চ ভাঙচুর করা হলেও গুরুতর আহত হওয়ার কোনো খবর পাওয়া যায়নি। ঘটনার পেছনে কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” এ ঘটনাকে ঘিরে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। স্থানীয়রা দীর্ঘদিন ধরে চলা এ ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠানে এমন হামলার নিন্দা জানিয়ে দোষীদের শাস্তির দাবি করেছেন।”

উক্ত একই ঘটনার দৃশ্যসহ দৈনিক ইত্তেফাকের ওয়েবসাইটেও গত ০৯ জানুয়ারিতে একটি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় যেখানে একই তথ্য জানা যায়৷ এছাড়া, জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো’তে গত ১৪ জানুয়ারিতে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্যের পাশাপাশি জানা যায়, ময়মনসিংহ নগরের থানাঘাট এলাকার হজরত শাহ সুফী সৈয়দ কালু শাহ (রহ)–এর মাজার ও আশপাশের এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে জেলা প্রশাসন।

সুতরাং, ময়মনসিংহে হজরত শাহ সুফি সৈয়দ কালু শাহ (রহ.)-এর মিলাদ মাহফিল, দোয়া ও সামা কাওয়ালি অনুষ্ঠানে হামলার দৃশ্যকে হিন্দুদের অনুষ্ঠানে মুসলিমদের হামলার দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img