ভাইরাল ভিডিওটি হিজাব না পড়ার কারণে হিন্দু তরুণীকে প্রহার করার কোনো ঘটনার নয়

সম্প্রতি এক তরুণীকে প্রহার করা অবস্থায় ধারণকৃত একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, প্রহারের শিকার উক্ত তরুণী হিন্দু ধর্মাবলম্বী, তাকে হিজাব না পরার কারণে তাকে প্রহার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

উক্ত দাবিতে এক্সে (সাবেক টুইটার) প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

উল্লেখ্য, উক্ত অ্যাকাউন্টগুলো মূলত ভারত থেকে পরিচালিত।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভাইরাল ভিডিওতে প্রহারের শিকার হওয়া তরুণী হিন্দু ধর্মাবলম্বী নন বরং তিনি একজন মুসলিম ধর্মাবলম্বী। তাছাড়া, তাকে হিজাব না পরার জন্য নয়, বরং, চুরির অভিযোগে প্রহার করা হয়।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির একাধিক কি-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ফেসবুকে হুবহু একই ভিডিও সম্বলিত একাধিক পোস্ট ফেসবুকে খুঁজে পাওয়া যায়।

উল্লেখ্য যে, আলোচিত দাবিতে Voice of Hindus নামের এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওটি প্রচারের (গত ০৭ অক্টোবর) অন্তত দুইদিন আগে (০৫ অক্টোবর) থেকেই উক্ত ভিডিওটি ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। উক্ত পোস্টগুলোতে ভিডিওতে প্রদর্শিত মেয়েকে প্রহারের কারণ হিসেবে কক্সবাজারের রামু সিটি পার্কের ভেতরে মোবাইল চুরি করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়ার অভিযোগ উল্লেখ করা হয়৷ কিছু কিছু পোস্টে তাকে টেকনাফের টিকটকার, টিকটকার কোহিনূর বলেও উল্লেখ করা হয়৷ কিছু পোস্টে টিকটক সেলিব্রিটি রোহিঙ্গা নারী এবং চোর বলেও অভিহিত করা হয়। 

Comparison : Rumor Scanner

অধিকতর অনুসন্ধানে উক্ত মেয়েকে নিয়ে আরো কিছু পোস্টভিডিও পাওয়া যায় যেখানে তাকে একাধিকবার চুরির অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে তার নাম হিসেবে টিকটকার কোহিনূর বা কোহিনূর কক্স উল্লেখ করা হয়৷ 

এরই সূত্র ধরে অনুসন্ধান করলে উক্ত নামে শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটকে কয়েকটি অ্যাকাউন্ট পাওয়া যায়। যার মধ্যে Cr Kohinoor Cox নামের একটি অ্যাকাউন্টে প্রায় ৯০ হাজারের কাছাকাছি ফলোয়ার ও ২৩ লক্ষের অধিক লাইক রয়েছে। অ্যাকাউন্টটি পর্যবেক্ষণ করলে কোহিনূর নামের একজন টিকটকার মেয়ের একাধিক ভিডিও পাওয়া যায় এবং উক্ত মেয়ের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত মেয়ের তুলনা করলে দুজন একই বলে প্রতীয়মান হয়। 

Comparison : Rumor Scanner

ঐ অ্যাকাউন্ট পর্যবেক্ষণ করে হিজাব পরিহিত অবস্থাতেও কোহিনূর নামে পরিচিত উক্ত তরুণীর একাধিক ভিডিও পাওয়া যায়। অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিওটিতে প্রহারের সম্মুখীন হওয়া উক্ত মেয়ে তথা কোহিনূর হিন্দু নন।

তাছাড়া, হিজাব না পরার কারণে প্রহারের সম্মুখীন হওয়ার দাবির সপক্ষেও নির্ভরযোগ্য সূত্রে কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি বরং উক্ত মেয়েকে চুরির অভিযোগে একাধিকবার অভিযুক্ত করে প্রহার করতে দেখা যায়।

সুতরাং, প্রচারিত ভিডিওটিতে হিজাব না পরার কারণে হিন্দু মেয়ে প্রহারের শিকার হয়েছেন শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img