বিএনপির মিছিল আসার খবরে আওয়ামী লীগ কর্মীদের পালিয়ে যাওয়ার ভুয়া দাবি

সম্প্রতি ‘বিএনপির মিছিল আসার খবরে আওয়ামিলীগের ভাড়াটিয়া কর্মিদের পলায়ন’ শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।

ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট  (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত ভিডিওটি বিএনপির মিছিল আসার খবরে আওয়ামী লীগ কর্মীদের পালিয়ে যাওয়ার নয় বরং এটি গত ২৮ জুলাই আওয়ামী লীগের তিন সংগঠন কর্তৃক আয়োজিত শান্তি সমাবেশে দলটির সমর্থকদের নিজেদের মধ্যকার হট্টগোলের সময়ে ধারণকৃত। এই ঘটনার সাথে বিএনপির কোনো সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিওগুলোর সূত্রে জাতীয় দৈনিক সমকালের ফেসবুক পেইজে গত ২৮ জুলাই ‘ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের মধ্যেই শান্তি সমাবেশে হট্টগোল’ শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত মূল ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Samakal

৩ মিনিট ৩৩ সেকেন্ডের ভিডিওটি বিশ্লেষণে দেখা যায়, সমাবেশে আগত নেতা-কর্মীরা সমাবেশস্থলে দৌড়াদৌড়ি করছেন এবং মাইকে একজন ঘোষণা করছেন, আপনারা তাড়াহুড়া করছেন কেন? আপনারা  তাড়াহুড়া  করবেন না, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবেন না। তবে পুরো ভিডিওটিতে বিএনপির মিছিল আসার খবরে আওয়ামী লীগ কর্মীদের পালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে কোনো তথ্য বা ভিডিও ফুটেজ পাওয়া যায়নি। 

প্রসঙ্গত, গত ২৮ জুলাই রাজধানীর নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সরকার পতনের দাবিতে মহাসমাবেশ করে বিএনপি এবং একইদিনে নয়াপল্টন থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ ফটকে শান্তি সমাবেশ করে আওয়ামী লীগের তিন সংগঠন ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ। দুই দলের এই দুই সমাবেশকে ঘিরে উক্ত দুই দলের মধ্যে কোনো ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সহিংসতার কোনো সংবাদ বা তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

তবে গণমাধ্যম সূত্রে দুই দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে পৃথক পৃথক  মারামারি, সংঘর্ষ ও হতাহতের বেশ কিছু ঘটনা সম্পর্কে জানা যায়। যেমন, বার্তা সংস্থা ইউএনবিতে গত ২৯ জুলাই ‘শান্তি সমাবেশের পর আ. লীগের ২ পক্ষের সংঘর্ষে নিহত ১’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, শান্তি সমাবেশ শেষে ফেরার পথে গুলিস্তানের গোলাপ শাহ মাজারের কাছের সড়কে শুক্রবার (২৮ জুলাই) আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে একজন নিহত ও অন্তত চারজন আহত হয়েছেন। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, শান্তি সমাবেশ চলাকালেও আওয়ামী লীগের দুইটি গ্রুপের সমর্থক ও কর্মীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছিল।

Screenshot: UNB

এ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত আরও প্রতিবেদন পড়ুন 

অনুরূপভাবে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ শেষেও দলটির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়ার তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়। 

 বিএনপি কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ নিয়ে প্রতিবেদন পড়ুন  

অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, বিএনপি ও আওয়ামী লীগের কর্মীরা পৃথক পৃথকভাবে নিজেরা সংঘর্ষে জড়ালেও কোনো দল একে অন্যের উপর আক্রমণ বা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেনি।

মূলত, গত ২৮ জুলাই সরকার পতনের দাবিতে মহাসমাবেশ করে বিএনপি এবং একইদিনে এর পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ ফটকে শান্তি সমাবেশ করে  আওয়ামী লীগের তিন সংগঠন। আওয়ামী লীগের এই সমাবেশে দলটির সমর্থকদের হট্টগোলের একটি ভিডিওকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিএনপির মিছিল আসার খবরে আওয়ামী লীগের কর্মীদের পলায়ন শীর্ষক দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, সেদিন বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে কোনো ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া বা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। উক্ত ভিডিওটি দলটি সমর্থকদের মধ্যকার হট্টগোলের সময় ধারণকৃত।

সুতরাং, বিএনপির মিছিল আসার খবরে আওয়ামী লীগ কর্মীদের পালিয়ে যাওয়ার দাবিতে ফেসবুকে একটি ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img