নবম-দশম শ্রেণির বাংলা সাহিত্য বইয়ের মলাটে আবু সাঈদের ছবি থাকার দাবিটি ভুয়া

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নবম ও দশম শ্রেণির বাংলা সাহিত্য বই এর মলাটের ছবি দাবিতে নবম-দশম শ্রেণির বাংলা সাহিত্য বইয়ের মলাটের আদলের একটি ছবি প্রচার করা হয়েছে। প্রচারিত মলাট সদৃশ ছবিটিতে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে নিহত হওয়া প্রথম ব্যক্তি আবু সাঈদের দুই হাত প্রসারিত ছবির সদৃশ একটি ছবি দেখা যায়। 

অর্থাৎ, দাবি করা হয়েছে নবম ও দশম শ্রেণির বাংলা সাহিত্য বই এর মলাটে আবু সাঈদের ছবি সংযুক্ত করা হয়েছে।

মলাটে

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি উক্ত দাবিতে প্রচারিত উপরোল্লিখিত পোস্টগুলোতে সম্মিলিতভাবে প্রায় ৫০ হাজারেরও অধিক পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, নবম ও দশম শ্রেণির বাংলা সাহিত্য বই এর মলাটে আবু সাঈদের ছবি সংযুক্ত করার দাবিটি সঠিক নয়৷ প্রকৃতপক্ষে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় নবম ও দশম শ্রেণির বাংলা সাহিত্য বইয়ের মলাট সদৃশ ছবিতে আবু সাঈদের ছবি সম্পাদনার মাধ্যমে সংযুক্ত করে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত সম্ভাব্য প্রথম ফেসবুক পোস্টটি খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম। মহিউদ্দিন ওসমানী নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে “নতুন বইয়ের কভার পৃষ্ঠা। “বাংলা সাহিত্য” নবম-দশম শ্রেণি” দাবিতে প্রচারিত উক্ত ছবিটি সংযুক্ত করে ২০২৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর তারিখে একটি পোস্ট করা হয়। তবে, পরবর্তীতে তিনি তার ক্যাপশনটি পরিবর্তন করে লিখেন “নতুন বইয়ের কভার পৃষ্ঠা হতে যাচ্ছে মনে হয় […]”। তার উক্ত পোস্টে প্রচারিত দাবিটির সপক্ষে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ উল্লেখ করা হয়নি।

পরবর্তী অনুসন্ধানে বাংলা সাহিত্যসহ নবম-দশম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ, বিতরণ ও পরিমার্জনের সঙ্গে যুক্ত থাকা জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এর ওয়েবসাইটে অনুসন্ধানে ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের মাধ্যমিক স্তরের নবম-দশম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকগুলো পাওয়া যায়৷ উক্ত ওয়েবসাইটে ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের মাধ্যমিক স্তরের নবম-দশম শ্রেণির বাংলা ভার্সন ও ইংরেজি ভার্সনের জন্য বাংলা সাহিত্য বইটিও পাওয়া যায়৷ 

 Collage: Rumor Scanner

উক্ত বইটির মলাট পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় তাতে আবু সাঈদের ছবির বদলে দুইটি পালকের ছবি রয়েছে। বাংলা সাহিত্য ছাড়াও বাংলা সহপাঠবাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও নির্মিতি বইয়ের মলাট পর্যবেক্ষণ করলেও আবু সাঈদের ছবি পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি, ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের দাখিল স্তরের নবম-দশম শ্রেণির বাংলা সাহিত্য বইয়ের মলাট পর্যবেক্ষণ করলেও তাতে আবু সাঈদের ছবি পাওয়া যায়নি বরং পাতা সদৃশ একটি ছবি পাওয়া যায়।

তাছাড়া, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলেও ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের মাধ্যমিক স্তরের নবম-দশম শ্রেণির বাংলা সাহিত্য বইয়ের মলাটে আবু সাঈদের ছবি সংযুক্তির বিষয়ে নির্ভরযোগ্য সূত্রে কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে, মূলধারার গণমাধ্যম প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে ২০২৪ সালের গত ২৮ অক্টোবরে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, “রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের পাঠ্যবইয়েও পরিবর্তন হচ্ছে। বিনা মূল্যের এসব পাঠ্যবইয়ে যুক্ত হচ্ছে জুলাই অভ্যুত্থানের গ্রাফিতি বা দেয়ালে আঁকা ছবি। আর এত দিন ধরে চলা পাঠ্যবইয়ের পেছনের প্রচ্ছদে থাকা ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ও তাঁর উদ্ধৃতি বাদ যাচ্ছে। একই সঙ্গে ইতিহাসনির্ভর বিষয়েও অনেক পরিবর্তন আনা হচ্ছে।” এনসিটিবির ওয়েবসাইটে প্রদত্ত ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের মাধ্যমিক স্তরের নবম-দশম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকের পেছনের প্রচ্ছদ পর্যবেক্ষণ করলে এর সত্যতা পাওয়া যায়। 

ছবি: ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের মাধ্যমিক স্তরের নবম-দশম শ্রেণির বাংলা সাহিত্য পাঠ্যপুস্তকের পেছনের প্রচ্ছদ। ছবিসূত্র: এনসিটিবি

নবম-দশম শ্রেণির বাংলা সাহিত্য বইয়ের পেছনের প্রচ্ছদেও জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের ছবি ও গ্রাফিতি দেখতে পাওয়া যায়।

পাশাপাশি, আলোচিত দাবিটির বিষয়ে জানতে রিউমর স্ক্যানার টিম জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এর চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসানের সাথে যোগাযোগ করে। তিনি আলোচিত দাবিটি ভুয়া নিশ্চিত করে জানান, এটি (প্রচারিত দাবিটি) পুরোপুরি অপতথ্য। আমাদের বাংলা সাহিত্য বইয়ে আবু সাঈদের ফটো দিয়ে মলাট করা হয়নি।

সুতরাং, নবম ও দশম শ্রেণির বাংলা সাহিত্য বই এর মলাটে আবু সাঈদের ছবি সংযুক্ত করা হয়েছে শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img