সম্প্রতি, “অফিস, স্কুল বা বাড়িতে শখ করে লাগানো এই পাতাবাহারটি যে আদতে কি ভয়ঙ্কর, তা আমরা ঘুণাক্ষরেও টের পাই না! এই গাছটির কারণে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন আপনি, এমনকি মারাও যেতে পারেন………..” শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, পাতাবাহার জাতীয় গাছটি দ্রুততম সময়ে মৃত্যু ঘটাতে সক্ষম দাবিটি সত্য নয় বরং এর রস চোখে কিংবা মুখে গেলে প্রাথমিকভাবে কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে।
কি-ওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে, সিঙ্গাপুর এর সংবাদ বিষয়ক ওয়েবসাইট Mothership.sg এ ২০১৯ সালের ১৯ জুন “ডাম্ব কেইন বা পাতাবাহার গাছ কামড়ানোর পর মেয়েটির মুখ ফুলে যায় (অনুবাদিত)” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গাছটির পাতা খাওয়া জীবন বিনাশী নয়, এবং এটি স্পর্শ করলে সমস্যা নেই। তবে এর রস স্পর্শ করে তারপরে চোখ এবং মুখ স্পর্শ করলে সমস্যা হতে পারে।

পাশাপাশি, আফ্রিকা মহাদেশের বিখ্যাত ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান Africacheck এর ওয়েবসাইটে ২০২০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারী “ডাম্ব কেইন বিষাক্ত, কিন্তু এর কারণে মারা যাবার সম্ভাবনা নেই (অনুবাদিত)” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ডাম্ব কেইন (পাতাবাহার) বিষাক্ত, কিন্তু এর প্রভাবে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। এমন কোন প্রমাণ নেই যে গাছটি অন্ধত্বের কিংবা মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
মূলত, ডাম্ব কেইন বা পাতাবাহার জাতীয় গাছ স্পর্শ করলে মৃত্যুর ঝুঁকি নেই। তবে এর রস চোখে কিংবা মুখে গেলে প্রাথমিকভাবে কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই বিষয়টিকেই তথ্যসূত্র ব্যতীত অতিরঞ্জিত করে পাতাটি দ্রুততম সময়ে মৃত্যু ঘটাতে পারে দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ডাইফেনবাচিয়া (পাতাবাহার জাতীয়) উদ্ভিদের অনেক প্রজাতি রয়েছে। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের “অক্সফোর্ড প্ল্যান্টস ৪০০” অনুসারে এর ২৫ থেকে ৫০ প্রজাতি রয়েছে। এই গাছের রসে ক্যালসিয়াম অক্সালেট থাকে, যা বিষাক্ত এবং কিডনিতে পাথর তৈরি করতে পারে। এর রসের একটি প্রতিক্রিয়া হলো গলা ফুলে যাওয়া, যার ফলে বাকশক্তিহীনতা ঘটতে পারে; তাই এর নাম দেয়া হয়েছে “ডাম্ব কেইন” বা ‘বোবা বেত’।
প্রসঙ্গত, যদি কারও চোখ গাছের রসের সংস্পর্শে আসে এবং ব্যথা অনুভব করে তবে তাদের চোখ ১৫ মিনিটের জন্য সাধারণ তাপমাত্রার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এরপরও যদি ফোলা ভাব কিংবা ১৫ মিনিটের বেশি সময় ধরে আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা অনুভব করতে থাকে তবে পেশাদার চিকিৎসক এর পরামর্শ নেয়া উচিত বলে জানিয়েছেন আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অফ পয়জন কন্ট্রোল সেন্টার এর ফার্মাসিস্ট ও বিশেষজ্ঞ লিন্ডসে লিউ।
বিষয়টি নিয়ে ইতোপূর্বে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান স্নুপস।
সুতরাং, ডাম্ব কেইন বা পাতাবাহার জাতীয় গাছ স্পর্শ করলে দ্রুততম সময়ে মৃত্যু ঘটাতে পারে শীর্ষক দাবিটি বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
Mothership.sg- M’sian girl’s mouth swells, spasms & drools uncontrollably after biting toxic dumb caneplant
Snopes- Is the Common Household Plant ‘Dieffenbachia’ Deadly?
Africacheck- Dumb cane houseplant poisonous, but unlikely to kill