সম্প্রতি ‘ভারতে সিলেবাস থেকে এবার বাদ পড়ছে উর্দু কবি আল্লামা ইকবালের জীবনী।‘ শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভারতের সিলেবাস থেকে উর্দু কবি আল্লামা ইকবালের জীবনী বাদ পড়ার তথ্যটি বিভ্রান্তিকর। প্রকৃতপক্ষে সমগ্র ভারত নয়, কেবল ভারতের দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাস থেকে উর্দু কবি আল্লামা ইকবালের জীবনী বাদ দেওয়া হচ্ছে।
কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে ভারতীয় গণমাধ্যম Hindustan Times এ গত ২৭ মে ‘Delhi University removes poet Mohd Iqbal, who wrote ‘Sare Jahan Se Acha’, from BA syllabus‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনটিতে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বিকাশ গুপ্তকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, গত শুক্রবার দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভায় কবি ইকবালকে বাদ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। পাশাপাশি দেশ ভাগ, হিন্দু ও উপজাতি বিষয়ক অধ্যয়ন যুক্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয় অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের এই সভায়।
প্রতিবেদনটি থেকে আরও জানা যায়, আগামী ৯ জুন বিশ্ববিদ্যালয়টির এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের সভায় এই প্রস্তাবগুলোর চূড়ান্ত অনুমোদনের ব্যাপারে আলোচনা হবে।
এছাড়া ভারতীয় আরেকটি গণমাধ্যম NDTV এর ওয়েবসাইটে একইদিনে ‘Poet Muhammad Allama Iqbal, Who Wrote ‘Saare Jahan Se Achha’, May Be Dropped From Syllabus‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়।
ভারতীয় গণমাধ্যমের এই প্রতিবেদনগুলো থেকে প্রতীয়মান হয় যে, উর্দু কবি আল্লামা ইকবালের জীবনী বাদ দেওয়ার বিষয়টি পুরো ভারত কেন্দ্রিক নয়, কেবল ভারতের দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের গত এপ্রিলে ভারতের দ্বাদশ ক্লাসের ইতিহাস বই থেকে মুঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাস সম্বলিত অধ্যায় সরিয়ে ফেলার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয় ভারতের কেন্দ্রীয় সংস্থা জাতীয় শিক্ষা গবেষণা ও শিক্ষণ কাউন্সিল বা এনসিইআরটি। তবে এসময় কবি আল্লামা ইকবাল সম্পর্কিত কোনো পাঠ্যসূচি বাদ দেওয়ার ব্যাপারে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অনুসন্ধানে ভারতের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কবি আল্লামা ইকবালের কবিতা পড়ানোর ব্যাপারে তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়। যেমন, চলতি বছরের গত ৯ জানুয়ারি ভারতীয় গণমাধ্যম Times of India এর ওয়েবসাইটে ‘UP teacher gets bail after 2 weeks in jail over Iqbal prayer‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জাতীয় শিক্ষা গবেষণা ও শিক্ষণ কাউন্সিলের অনুমোদিত কারিকুলামের কোর্স বইয়ে আল্লামা ইকবালের কবিতা উপস্থিত থাকার বিষয়টি সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়।
বাংলাদেশি গণমাধ্যমের বিভ্রান্তিকর শিরোনাম
ভারতের দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উর্দু কবি আল্লামা ইকবালের জীবনী বাদ দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে বাংলাদেশের একাধিক গণমাধ্যম। প্রতিবেদনগুলো থেকে দেখা যায়, প্রতিবেদনগুলোর শিরোনামে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়টি উল্লেখ না করে কেবল ভারত উল্লেখ করা হয়েছে। তবে প্রতিবেদনগুলোর বিস্তারিত অংশে আবার ঘটনাটি যে কেবল দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের, সে সম্পর্কিত উল্লেখ পাওয়া যায়।
এ সম্পর্কিত কিছু প্রতিবেদন দেখুন ভারতে এবার সিলেবাস থেকে বাদ উর্দু কবি ইকবাল (সময় টিভি), ভারতে এবার সিলেবাস থেকে বাদ উর্দু কবি ইকবাল (প্রথম আলো), পাকিস্তানের জাতীয় কবি ইকবালকে পাঠ্যবই থেকে বাদ দিল ভারত (আজকের পত্রিকা), ভারতে সিলেবাস থেকে বাদ কবি ইকবালের অধ্যায় (নয়া দিগন্ত)।
তবে এই ঘটনাটি যে কেবল দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক, এমনটি উল্লেখ করেও বাংলাদেশি গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ করতে দেখা যায়।
এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন দিল্লি বিশ্ববিদ্যায়ের সিলেবাস থেকে বাদ যাচ্ছেন আল্লামা ইকবাল (যুগান্তর), দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাস থেকে বাদ পড়ছে আল্লামা ইকবাল (ঢাকা ট্রিবিউন), এবার পাঠ্যসূচী থেকে কবি আল্লামা ইকবালের অধ্যায় বাদ দিচ্ছে দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়! ( দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড),আল্লামা ইকবালকে বাদ দিচ্ছে দিল্লি ভার্সিটি (ইনকিলাব)।
মূলত, ভারতের দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভায় বিশ্ববিদ্যালয়টির সিলেবাস থেকে পাকিস্তানের জাতীয় কবি ইকবালকে বাদ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। এই ঘটনায় দেশীয় একাধিক গণমাধ্যমে ভারতে সিলেবাস থেকে আল্লামা ইকবালকে বাদ দেওয়া হয়েছে শীর্ষক শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। পরবর্তীতে এই শিরোনামগুলোই কপি-পেস্ট হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। প্রকৃতপক্ষে, সিলেবাস থেকে আল্লামা ইকবালের জীবনী বাদ দেওয়ার ব্যাপারটি কেবল দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক, সমগ্র ভারতের নয়।
সুতরাং, ভারতে সিলেবাস থেকে পাকিস্তানের জাতীয় কবি আল্লামা ইকবালের জীবনী বাদ পড়ার দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর।