ভিডিওতে বক্তব্যরত নারী ড. আকবর আলি খানের মেয়ে নন

সম্প্রতি “স্মরণীয় হয়ে থাকবেন ড. আকবর আলি খান” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম গুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।

ইউটিউবে প্রচারিত এমন একটি ভিডিও দেখুন এখানে। আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওতে দেখানো নারী সদ্য প্রয়াত অর্থনীতিবিদ ড. আকবর আলি খানের মেয়ে নয় বরং তিনি সদ্য প্রয়াত চলচ্চিত্র পরিচালক গাজী মাজহারুল আনোয়ারের মেয়ে।

কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে জাতীয় দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় গত ৯ সেপ্টেম্বর “ড. আকবর আলি খান আর নেই” শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানে উল্লেখ করা হয়,” তার স্ত্রী ও একমাত্র মেয়ে বেশ আগেই মারা গেছেন।”

Screenshot from Jugantor website

এই তথ্যের সূত্র ধরে জাতীয় দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় ২০১৬ সালের ৬ ডিসেম্বরে প্রকাশিত একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ড. আকবর আলি খানের মেয়ে নেহরীন খানের মেয়ে মৃত্যুর খবর জানা যায়। বিজ্ঞপ্তিতে নেহরীনের একটি ছবি যুক্ত করা হয়৷ সেই ছবিটির সাথে আলোচিত ভিডিওতে দেখানো নারীর মিল খুঁজে পায়নি রিউমর স্ক্যানার৷ তাছাড়া বছর ছয়েক আগে মৃত ব্যক্তির পক্ষে এখন গান গাওয়াও সম্ভব নয়। 

Screenshot source : Bd pratidin

গুজবের সূত্রপাত

ফেসবুকে প্রচারিত একটি ভিডিওতে দেখা যে, উক্ত নারী যখন কথা বলছিলেন সেখানে মূল ধারার গণমাধ্যম আরটিভির মাইক্রোফোনও ছিল।

এই সূত্র ধরে আরটিভির ফেসবুক পেজে গত ৯ সেপ্টেম্বর আলোচিত ভিডিওটি (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটির থাম্বনেইলে শিরোনাম দেওয়া হয়, “স্মরণীয় হয়ে থাকবেন ড. আকবর আলি খান”। (আরটিভির ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিওটি দেখুন এখানে। আর্কাইভ দেখুন এখানে)

কিন্তু ভিডিওটির 2:12 মিনিট অংশে দেখা যায়, এক নারী তার বাবা সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করছেন। আরটিভি তখন তার পরিচয় দেয় ‘গাজী মাজহারুল আনোয়ারের মেয়ে দিঠি আনোয়ার।’

Screenshot from Rtv facebook page

এই তথ্যের সূত্র ধরে কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে একাধিক গণমাধ্যমে (চ্যানেল আই, সময় নিউজ, এটিএন নিউজ) প্রকাশিত কিছু ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানে দেখা যায়, গাজী মাজহারুল আনোয়ারের প্রতি সর্বস্তরের শ্রদ্ধার জন্য শহীদ মিনারে মরদেহ রাখা হয়েছে। ভিডিওগুলোতে একই নারী অর্থাৎ দিঠি আনোয়ারকে জাতীয় শহীদ মিনারে তার বাবা সম্পর্কে নিজের অভিমত প্রকাশ করতে দেখা যায়।

অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ৪ সেপ্টেম্বর অসংখ্য গানের গীতিকার, চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক গাজী মাজহারুল আনোয়ার রাজধানীর একটি হাসপাতালে মারা যান। গুণী এই ব্যক্তির এক ছেলে (সরফরাজ আনোয়ার) ও এক মেয়ে (দিঠি আনোয়ার) রয়েছে। পরবর্তীতে দিঠি আনোয়ারের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গিয়ে একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। পোস্টে বাবা গাজী মাজহারুল আনোয়ারের স্মরণসভায় যোগদানের আমন্ত্রণ জানান তিনি। 

পরবর্তীতে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো’র ২০১৬ সালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে গাজী মাজহারুল আনোয়ার ও দিঠি আনোয়ারের একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot source : Prothom Alo

নেহরীন খান ড. আকবর আলি খানের একমাত্র মেয়ে?

চলতি বছরের মে মাসে প্রথম আলো’র ঈদ সংখ্যায় একটি সাক্ষাৎকার দেন অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান। তার মৃত্যুর পর পত্রিকাটি গত ৯ সেপ্টেম্বর পুনরায় সাক্ষাৎকার প্রকাশ করে। নিজের সর্বশেষ প্রকাশিত আত্মজীবনীমূলক বই ‘পুরানো সেই দিনের কথা’র পাঠকপ্রিয়তা সম্পর্কে সেই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “আমার মেয়ে নেহরীন খানের খুব আগ্রহ ছিল আমার পরিবারের ইতিহাস সম্পর্কে যেন আমি লিখি। আমার মেয়েটা মারা গেছে। তার স্মৃতি রক্ষার্থে আমি একটু বিস্তারিতভাবে পরিবারের ইতিহাস লিখেছি।”

পরবর্তীতে ড. আকবর আলি খানের লেখা পুরানো সেই দিনের কথা বইতে (২১ পৃষ্ঠা) দেখা যায় তিনি তার মেয়ে নেহরীনকে নিজের একমাত্র সন্তান বলেছেন। 

Screenshot from rokomari website

মূলত, গত ৪ সেপ্টেম্বর শিল্পী গাজী মাজহারুল আনোয়ার মারা যান। বাবার মৃত্যুতে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেন মেয়ে দিঠি আনোয়ার। কিন্তু অনুভূতি প্রকাশের এই ভিডিওকে গত ৮ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করা অর্থনীতিবিদ ড. আকবর আলি খানের মেয়ে দাবি করে দেশীয় মূলধারার গণমাধ্যম আরটিভি ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোয় প্রচারিত হয়েছে। অথচ, ড. আকবরের একমাত্র মেয়ে ২০১৬ সালে মারা যান। 

উল্লেখ্য, ড. আকবর আলি খান গত ৮ সেপ্টেম্বর অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মারা যান৷

প্রসঙ্গত, ড. আকবর আলি খানের একমাত্র মেয়ে নেহরীন খান ২০১৬ সালের ৪ ডিসেম্বর হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান।

সুতরাং, ভিডিওতে দেখানো নারী ড. আকবর আলি খানের মেয়ে নয়।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img