কুমিল্লায় কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহতের গুজবে ফেসবুকে ছড়ালো পুরোনো ছবি

সম্প্রতি সকল গ্রেডের সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থার স্থায়ী সমাধানের দাবিতে দেশজুড়ে শিক্ষার্থীরা টানা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। এই প্রেক্ষিতে, বাংলা ব্লকেড কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত ১১ জুলাই কুমিল্লার কোটবাড়িতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধের জন্য যাত্রা শুরু করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, কিন্তু পথে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। ফলে, উভয়ের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা শুরু হয় এবং এক পর্যায়ে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এই সংঘর্ষে পুলিশ, সাংবাদিক এবং শিক্ষার্থীসহ অন্তত ২০ জন আহত হন।

এই বিষয়ে ‘Sumaiya Jannat Mim’ নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে একাধিক পোস্ট করার পর  “উনি মারা গেছেন” শীর্ষক শিরোনামে একজন মৃত ব্যক্তির ছবি প্রচার করা হয়। এর ফলে, নেটিজেনরা এই মৃত ব্যক্তির ছবিটিকে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আলোচ্য ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত বলে মনে করে বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানান।

নিহতের গুজবে

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের সাথে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে এই প্রতিবেদন প্রকাশ অবধি আন্দোলনকারী নিহত হননি এবং উক্ত দাবিতে প্রচারিত ছবিটি কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত কোনো শিক্ষার্থীর নয় বরং এটি ২০২২ সালে নারায়ণগঞ্জে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়া শাওন প্রধানের ছবি।

আলোচিত দাবির বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে প্রচারিত ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ‘Rakibul Islam Rakib’ নামের একটি ফেসবুক আইডিতে ২০২২ সালের ০১ সেপ্টেম্বর একই ছবি সম্বলিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টের ক্যাপশনে দাবি করা হয়, “নারায়ণগঞ্জে বিএনপির মিছিলে পুলিশের গুলিতে যুবদল কর্মী শাওনের মৃত্যু।”

Screenshot: Facebook. 

এই পোস্টের সূত্রে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে বিডিনিউজ২৪ এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। যেখানে জানানো হয়, “নারায়ণগঞ্জে বিএনপি ও পুলিশের সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান শাওন প্রধান। শাওনকে যুবদল নেতা বলছেন জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম রবি, তবে শাওন কোনো রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না বলে তার পরিবার দাবি করে।”

প্রতিবেদনে নিহত শাওন প্রধানের ছবির সাথে আলোচ্য নিহত ব্যক্তির ছবিতে থাকা পোশাকের মিল লক্ষ্য করা যায়।

Screenshot: bdnews24. 

০২ সেপ্টেম্বর ইনকিলাবের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় নিহত যুবদল কর্মী শাওনের মৃত্যুতে তার বড় ভাই মিলন হোসেন মামলা করেন। মামলায় অভিযোগ করা হয়, “শাওন বিএনপির ছোড়া ইট-পাটকেল ও আগ্নেয়াস্ত্রের গুলিতে নিহত হয়েছেন।”

এছাড়া, কুমিল্লায় কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষে কোনো ব্যক্তির মৃত্যুর সংবাদ বিশ্বস্ত কোনো সূত্রে পাওয়া যায়নি। তবে এই ঘটনায় একজন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন দাবিতে একটি গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল। রিউমর স্ক্যানার টিম ইতোমধ্যেই শিক্ষার্থী নিহতের খবরটি মিথ্যা জানিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

মূলত, গত ১১ জুলাই পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে সরকারি চাকরির সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিলের দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করতে যাওয়ার পথে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পুলিশের বাধার সম্মুখীন হয়। ফলে, উভয়ের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা শুরু হয় এবং এক পর্যায়ে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এই সংঘর্ষে পুলিশ, সাংবাদিক এবং শিক্ষার্থীসহ অন্তত ২০ জন আহত হন। এই ঘটনার পর সামাজিক মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন দাবিতে একটি গুজব ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে একজন মৃত ব্যক্তির ছবিও প্রচারিত হয়। তবে রিউমর স্ক্যানার টিম ইতোমধ্যেই শিক্ষার্থী নিহতের খবরটি মিথ্যা জানিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এছাড়া, নিহত ব্যক্তির যে ছবিটি প্রচার করা হচ্ছে তা ২০২২ সালে নারায়ণগঞ্জে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়া শাওন প্রধানের ছবি।

সুতরাং, কুমিল্লায় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশের হামলার ঘটনায় নিহত ব্যক্তির ছবি দাবিতে ২০২২ সালে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তির ছবি প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img