সাম্প্রতিক সময়ে কোটা সংস্কার বা সরকারি চাকরির সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিলের দাবিতে দেশজুড়ে আন্দোলন তীব্র বেগবান হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় গতকাল ১১ জুলাই বিকেলে আন্দোলনের অংশ হিসেবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করতে যাওয়ার পথে পুলিশের বাধার সম্মুখীন হয়েছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ সময় পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে দুই সাংবাদিকসহ অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থীসহ আহত হন।
এরই প্রেক্ষিতে “কুবি শিক্ষার্থীদের পেটাচ্ছে পুলিশ, ভিডিও করছেন প্রক্টর” শীর্ষক দাবিতে একটি ছবি গণমাধ্যম সহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
দাবি করা হচ্ছে- কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক ও সহকারী প্রক্টর অমিত দত্ত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার সময় ভিডিও ধারণ করছিলেন।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন- ডেইলি ক্যাম্পাস এবং কুমিল্লার পেপার।
গণমাধ্যমের ফটোকার্ড যুক্ত করে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ছবিতে লাল গোল চিহ্নিত অংশে মোবাইলে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ভিডিও ধারণা করতে দেখা যাওয়া ব্যক্তি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর অমিত দত্ত নন বরং, মোবাইলে ভিডিও ধারণ করা ব্যক্তিটি হলেন সহকারী প্রক্টরের ডান পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আজকের পত্রিকার কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আতিকুর রহমান তনয়।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ছবিটি পূঙ্খানুপুঙ্খ পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, সহকারী প্রক্টর অমিত দত্তের প্যান্টের বাম পকেটে মোবাইল সদৃশ একটি বস্তু রয়েছে। এছাড়া ছবিতে যে হাত দিয়ে মোবাইলে ভিডিও ধারণ করতে দেখা যাচ্ছে সে হাতের অবস্থানের সাথেও তার দেহের অসামঞ্জস্যতা পরিলক্ষিত হয়।
পরবর্তীতে বিষয়টি আরো যাচাইয়ের লক্ষ্যে উক্ত ঘটনার সময় ঘটনাস্থলে কর্তব্যরত সাংবাদিকদের ধারণকৃত একাধিক ভিডিও সংগ্রহ রিউমর স্ক্যানার টিম।
এরমধ্যে ২ মিনিট ৩২ সেকেন্ডের একটি ভিডিও পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ১ মিনিট ৪০ সেকেন্ড থেকে শিক্ষার্থীদের হামলার সময় অমিত দত্তকে মোবাইলে কোনো ভিডিও ধারণ করতে দেখা যায়নি। পাশাপাশি সেসময় তার হাতে কোনো মোবাইলও ছিল না।
এছাড়া, আমাদের হাতে থাকা ঘটনাস্থলের ২০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার সময় অমিত দত্ত নয় বরং তার পাশে থাকা পুদিনা সবুজ রংয়ের শার্ট পরা অন্য একজন ভিডিও ধারণ করছিলেন।
অনুসন্ধানে রিউমর স্ক্যানার টিম জানতে পারে সহকারী প্রক্টরের পাশে দাঁড়িয়ে ভিডিও করা ব্যক্তি হলেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী এবং আজকের পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আতিকুর রহমান তনয়।
এ বিষয়ে জানতে আতিকুর রহমান তনয়ের সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার। তিনি বলেন, অমিত স্যারের পাশেই আমি ভিডিও করছিলাম। ফেসবুকে এবং গণমাধ্যমে দেখলাম একটি ছবি দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। এটি আসলে ভুল। ভিডিও আমি করছিলাম অমিত স্যার নয়। আমি পাশেই থাকায় ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে ভিডিও অমিত স্যার করছেন।
পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের সময় সংবাদ সংগ্রহের কাজে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন প্রতিদিনের বাংলাদেশ পত্রিকার ক্যাম্পাস প্রতিনিধি জাভেদ রায়হান এবং দৈনিক জনকণ্ঠের ক্যাম্পাস প্রতিনিধি ইকবাল হাসান।
জাভেদ রায়হান বলেন, তখন অমিত স্যার ভিডিও করছিলেন না। আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম। তিনি তখন শিক্ষার্থী এবং পুলিশকে দমাতে চেষ্টা করছিলেন।
ইকবাল হাসান বলেন, সংবাদ সংগ্রহের জন্য আমি উপস্থিত ছিলাম। অমিত স্যারের ভিডিও করার দাবিটি আসলে ঠিক না। তিনি ভিডিও করছিলেন না, ভিডিও করছিলেন আমাদের সহকর্মী আতিকুর রহমান তনয়।
মূলত, গতকাল (১১ জুলাই) বিকাল তিনটার দিকে কোটা আন্দোলনের অংশ হিসেবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধের উদ্দেশ্যে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস থেকে রওনা দেয়। ক্যাম্পাস সংলগ্ন শালবন বিহারের সামনে আনসার ক্যাম্প পর্যন্ত আসার পর পুলিশ শিক্ষার্থীদের বাধা দেয়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে দুই সাংবাদিকসহ অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থীসহ আহত হন। এরই প্রেক্ষিতে “কুবি শিক্ষার্থীদের পেটাচ্ছে পুলিশ, ভিডিও করছেন প্রক্টর” শীর্ষক শিরোনামের সাথে একটি ছবি গণমাধ্যম সহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
দাবি করা হচ্ছে- কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক ও সহকারী প্রক্টর অমিত দত্ত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার সময় ভিডিও ধারণ করছিলেন। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে উঠে আসে ভিন্ন তথ্য। প্রকৃতপক্ষে, প্রচারিত ছবিতে সংঘর্ষের সময় মোবাইলে ভিডিও ধারণ করা ব্যক্তি হলেন অমিত দত্তের ডান পাশে দাঁড়িয়ে থাকা পুদিনা সবুজ রংয়ের শার্ট পরিহিত এক ব্যক্তি। তিনি মূলধারার গণমাধ্যম আজকের পত্রিকার কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আতিকুর রহমান তনয়। ছবিটি নিয়ে রিউমর স্ক্যানারের বিশ্লেষণে এই তথ্য জানা যায়। পাশাপাশি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঘটনার সময় উপস্থিত থাকা একাধিক সাংবাদিক।
সুতরাং, পুলিশের সাথে কুবি শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের সময় নৃবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক ও সহকারী প্রক্টর অমিত দত্তের ভিডিও করার দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Fact Video-1
- Fact Video-2
- Ajker Patrika CoU Correspondent Atikur Rahman Tonoy Statement
- Protidiner Bangladesh CoU Correspondent Javed Rayhan Statement
- Daily Janakantha CoU Correspondent Ikbal Hasan Statement
- Rumor Scanner’s Own Analysis