কনসেপ্ট আর্টের ছবিকে পৃথিবীর প্রথম আন্ডারওয়াটার টেনিস স্টেডিয়াম দাবিতে প্রচার

সম্প্রতি “পৃথিবীর প্রথম আন্ডারওয়াটার টেনিস স্টেডিয়াম, দুবাই।” শীর্ষক শিরোনামে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রচারিত ছবিটি পৃথিবীর প্রথম আন্ডারওয়াটার টেনিস স্টেডিয়ামের বাস্তব ছবি নয় বরং এটি একটি টেনিস কোর্টের কনসেপ্ট প্রজেক্টের ছবি।

কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘Daily Mail’ এর ওয়েবসাইটে ২০১৫ সালের ৩০ এপ্রিল “You cannot be serious! Architect serves up plans for an underwater tennis court off the coast of Dubai” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, পোলিশ আর্কিটেক্ট ক্রেজিসটফ কোটালা (Krzysztof Kotala) পানির নিচে একটি টেনিস কোর্টের কনসেপ্ট তৈরি করেছেন যা তিনি দুবাইতে নির্মাণ করাতে চান। তার ‘8+8 Concept Studio’ নামে একটি আর্কিটেক্ট ফার্ম রয়েছে। পানির নিচে টেনিস স্টেডিয়াম কমপ্লেক্স তৈরির পরিকল্পনায় মোট ৭ টি টেনিস কোর্ট থাকার কথা জানানো হয় প্রতিবেদনে।  

Screenshot source: Daily Mail

তবে পানির নিচে এই ধরনের কোর্ট সম্ভব কি না তা নিয়ে ডেইলি প্রতিবেদনে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন লন্ডনের সংশ্লিষ্ট একজন ইন্জিনিয়ার। লন্ডনের ইন্সটিটিউট অফ স্ট্রাকচারাল ইন্জিনিয়ারস এর ইন্জিনিয়ারিং এবং টেকনিক্যাল সার্ভিসের ডিরেক্টর সারাহ ফ্রে (Sarah Fray) জানিয়েছেন, “সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে একটি হল কোর্টকে ঢেকে রাখার জন্য কাচের বড় স্প্যান তৈরি করা। কোর্ট এবং দর্শকদের থাকার জন্য এটি কমপক্ষে ১০৮ ফুট (৩৩ মিটার) প্রশস্ত হতে হবে।”

সারাহ ফ্রে প্রশ্ন রেখেছেন, “আমি জানি না আপনি এটিতে টেনিস খেলতে পারেন কিনা – উপরে আলোর প্রতিসরণ হচ্ছে এবং আপনি কীভাবে এটি নিয়ন্ত্রণ করবেন তা আমি জানি না।” 

তাছাড়া উপরে সাঁতরাতে থাকা মাছ খেলোয়াড়দের মনঃসংযোগেও বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। 

একই বছরের (২০১৫) ৩০ নভেম্বর মার্কিন সংবাদমাধ্যম ‘Forbes’ এর এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, প্রজেক্টটি বেশ ব্যয়বহুল। খরচ হতে পারে প্রায় ১.৭ থেকে ২.৫ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত। তখন পর্যন্ত কেউই এই প্রজেক্টে বিনিয়োগ করার আগ্রহ দেখায়নি। 

Screenshot source: Forbes 

ডেইলি মেইলের প্রতিবেদনে এই প্রজেক্ট বাস্তবায়নে যে সমস্যাগুলোর বিষয়ে বলা হয়েছিল ফোর্বসের প্রতিবেদনে ক্রেজিসটফ কোটালার বরাতে সমস্যাগুলো সমাধানযোগ্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে।  

২০১৯ সালের ১৪ জুলাই মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক ব্যবসায়িক নিউজ পোর্টাল ‘Arabian Business’ কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ক্রেজিসটফ কোটালা জানান, তখনও এই প্রকল্পটিতে অর্থায়ন করার জন্য কেউ আগ্রহ দেখায়নি। তবে তিনি চেষ্টা করে যাচ্ছেন বলে জানান। 

Screenshot source: Arabian Business 

তাছাড়া, আলোচিত প্রকল্পটি বাস্তবায়নে দুবাই কর্তৃপক্ষের অনুমতিও তিনি পাননি তখন পর্যন্ত। 

Screenshot source: Arabian Business 

পরবর্তী সময়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এ বিষয়ে সর্বশেষ কোনো তথ্য পায়নি রিউমর স্ক্যানার। 

অনুসন্ধানে ‘8+8 Concept Studio’ এর ওয়েবসাইটে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot source:  8+8 Concept Studio

উক্ত ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, আলোচিত টেনিস কোর্টটির জন্য আলাদা একটি ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়েছে। তবে সেই ওয়েবসাইটে এই প্রজেক্টের অগ্রগতির বিষয়ে সর্বশেষ কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

এ বিষয়ে জানতে ‘8+8 Concept Studio’ কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে রিউমর স্ক্যানারকে জানানো হয়, “এটি একটি প্রকল্প মাত্র। একটি কাল্পনিক বাস্তবতা, বাস্তব কিছু নয়। মিডিয়া বাস্তবতাকে বিকৃত করেছে।”

মূলত, ২০১৫ সালে পোল্যান্ডের আর্কিটেক্ট ক্রেজিসটফ কোটালা পানির নিচে টেনিস কোর্টের একটি কনসেপ্ট তৈরি করেন এবং এই কনসেপ্ট ডিজাইনের মাধ্যমে দুবাইতে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে চান বলে জানান। তবে উক্ত প্রকল্পে এখনও কোনো বিনিয়োগকারী আগ্রহ না দেখানোয় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়নি। কিন্তু সম্প্রতি উক্ত কনসেপ্টের একটি ছবি ব্যবহার করে এটিকে পৃথিবীর প্রথম আন্ডারওয়াটার টেনিস স্টেডিয়াম দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। 

প্রসঙ্গত, ইতোপূর্বে ডিজিটাল প্রজেক্ট ও অ্যানিমেটেড ছবিকে বাস্তব দাবিতে প্রচারের বিষয় নিয়ে বেশকিছু গুজব যাচাই করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, কনসেপ্ট আর্টের ছবিকে পৃথিবীর প্রথম আন্ডারওয়াটার টেনিস স্টেডিয়াম দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img