সম্প্রতি, “পর্তুগিজ ফুটবল তারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো কখনোই ইউটিউব চ্যানেল খুলতে পারবেন না। কারণ রোনালদো ইউটিউব চ্যানেল খুললে, ইউটিউব ক্র্যাশ করবে। সেই ভয়েই ইউটিউব রোনালদোকে চ্যানেল না খুলতে অনুরোধ করেছে।” শীর্ষক একটি দাবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে।
উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
একই দাবিতে টিকটকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, রোনালদো কখনো ইউটিউব চ্যানেল খুলতে পারবেন না শীর্ষক দাবিটি সত্য নয় বরং কোনো প্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই ইন্টারনেটে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে।
উক্ত দাবি সংক্রান্ত পোস্টগুলোতে হিন্দি ভাষার একটি ভিডিও প্রচার হতে দেখা যায়। ভিডিওটিতে দাবি করা হয়, “ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো কখনো নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করতে পারবেন না কারণ তার বিপুল সংখ্যক সাবস্ক্রাইবার এবং দর্শকের কারণে ইউটিউবকে বিশাল অর্থনৈতিক চাপের মুখে পড়তে হবে। ২০২৩ সালে তার টিকটক অ্যাকাউন্ট দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করার পর ব্যান করা হয়েছিল। অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোও রোনালদোর বিপুল দর্শক সংখ্যার জন্য তাকে পর্যাপ্ত অর্থ দিতে অক্ষম। এজন্যই ইউটিউব রোনালদোকে চ্যানেল খুলতে বারণ করেছে।”
উক্ত ভিডিওটির নির্মাতার বিষয়ে অনুসন্ধান করে জানা যায়, Shivam Malik নামের একজন ভারতীয় কনটেন্ট নির্মাতা গত ২৫ জুন তার ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টে এই বিষয়ে একটি ভিডিও প্রচার করেন।
কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ (সাবেক টুইটার) একই দাবিতে ইংরেজি ভাষার একটি ভিডিও পাওয়া যায়। এই ভিডিওর সূত্রপাত সম্পর্কে অনুসন্ধানে জানা যায়, ভিডিওটি ‘goalsrush’ নামের একটি ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টে গত ০৬ জুন ইংরেজি ভাষার দাবিকৃত মূল ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।
তবে উপরিউক্ত কোনো ভিডিওতেই এই তথ্যের বিপরীতে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র প্রদান করা হয়নি।
রোনালদোর টিকটক অ্যাকাউন্ট ব্যানের বিষয়টি নিয়ে রিউমর স্ক্যানার টিম আরও অনুসন্ধান চালায়। ২০২৩ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর বিনোদন সংক্রান্ত খবরের অনলাইন পোর্টাল ডেক্সার্টোতে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, একজন প্রতারক রোনালদোর নামে একটি ভুয়া টিকটক অ্যাকাউন্ট খুলে সবাইকে বোকা বানায়। ২০২৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর এই অ্যাকাউন্টটি চালু হয় এবং এতে রোনালদোর সৌদি আরবে খেলার হাইলাইটস ও ভক্তদের সাথে সাক্ষাতের ভিডিও আপলোড করা হয়। ফলে, অ্যাকাউন্টটি দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং ফলোয়ার সংখ্যা ৬.৩ মিলিয়ন পর্যন্ত পৌঁছায়। পরে টিকটক সেই অ্যাকাউন্টটি ব্যান করে।
জনপ্রিয় টিকটক কনটেন্ট নির্মাতা Noah Glenn Carter একই তথ্য জানিয়ে একটি ভিডিও তৈরি করেছিলেন।
রোনালদোর আসল কোনো টিকটক অ্যাকাউন্ট ব্যান হয়েছে কিনা জানতে কি-ওয়ার্ড সার্চ করা হয়, তবে কোনো বিশ্বস্ত সূত্রে এই সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। রোনালদোর মতো জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বের সামাজিক মাধ্যম অ্যাকাউন্ট ব্যান হলে তা বিশ্বব্যাপী গণমাধ্যমে প্রচারিত হতো, কিন্তু এক্ষেত্রে এমনটি দেখা যায়নি।
অনুসন্ধানে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর অফিসিয়াল ইন্সটাগ্রাম, ফেসবুক ও এক্স অ্যাকাউন্ট খুঁজে পাওয়া গেলেও তার অফিসিয়াল কোনো টিকটক অ্যাকাউন্ট পাওয়া যায়নি।
ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা স্নোপসে ২০২২ সালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, রোনালদোর আসল অ্যাকাউন্ট হিসেবে জাহির করতে সেই সময়ে একটি ভুয়া অ্যাকাউন্ট রোনালদোর ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টে প্রচারিত পূর্বের কিছু লাইভ সেশন রেকর্ড করে ভুয়া লাইভ স্ট্রিম প্রচার করে।
অর্থাৎ, দাবিকৃত ভিডিওগুলোতে রোনালদোর যে টিকটক অ্যাকাউন্টের কথা বলা হচ্ছে সেটি তার নামে তৈরি একটি ভুয়া প্রোফাইল।
বিশ্বস্ত কোনো সূত্রেও ইউটিউব রোনালদোকে ইউটিউবে অ্যাকাউন্ট খুলতে বারণ করেছে এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
তাছাড়া, ইউটিউব প্রধানত বিজ্ঞাপন, প্রিমিয়াম সাবস্ক্রিপশন, সুপার চ্যাট, চ্যানেল সদস্যপদ এবং মার্চেন্ডাইজ বিক্রি থেকে আয় করে। রোনালদোর মতো বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব আরও দর্শক আনবে, যার ফলে ইউটিউবের বিজ্ঞাপন এবং অন্যান্য আয়ের উৎস উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে। ফলে, রোনালদোর উপস্থিতি ইউটিউবের আর্থিক সমস্যার কারণ হবে, এই দাবি সঠিক নয়। ইউটিউবের আয় এবং ক্রিয়েটরদের সাথে আয় ভাগ করার নীতির সাথে এটি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, বরং রোনালদোর উপস্থিতি ইউটিউবের জন্য লাভজনক হবে।
মূলত, সম্প্রতি ইন্টারনেটে “পর্তুগিজ ফুটবল তারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো কখনোই ইউটিউব চ্যানেল খুলতে পারবেন না, কারণ তার ইউটিউব চ্যানেল খোলার ফলে ইউটিউব ক্র্যাশ করবে এবং ইউটিউব তাকে চ্যানেল খুলতে বারণ করেছে।” শীর্ষক একটি দাবি ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, এই দাবিটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র নেই। ‘goalsrush’ নামের একটি ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টে এই বিষয়ে একটি ভিডিও প্রচারিত হয়। পরে ভারতীয় কনটেন্ট ক্রিয়েটর Shivam Malik একই দাবিতে হিন্দি ভাষায় ভিডিও প্রচার করলে একই দাবি বাংলায় অনুবাদ হয়ে ছড়াতে থাকে। তবে এসব ভিডিওতে এই দাবির কোনো নির্ভরযোগ্য উৎস বা প্রমাণ দেওয়া হয়নি। ভিডিওগুলোতে রোনালদোর টিকটক অ্যাকাউন্টও একই কারণে ব্যান হয়েছিল দাবি করা হয়। তবে, রোনালদোর টিকটক অ্যাকাউন্ট ব্যান হওয়ার দাবিও ভিত্তিহীন, কারণ যে অ্যাকাউন্ট ব্যানের কথা বলা হচ্ছে সেটি একটি ভুয়া অ্যাকাউন্ট ছিল। এছাড়া রোনালদোর অফিসিয়াল কোনো টিকটক অ্যাকাউন্ট নেই। ইউটিউব রোনালদোর মতো বিখ্যাত ব্যক্তিত্বের উপস্থিতি থেকে আর্থিকভাবে লাভবান হবে, তাই ইউটিউব রোনালদোকে চ্যানেল খুলতে বারণ করবে এমন হওয়ার বাস্তবিকভাবে কোনো সম্ভাবনা নেই এবং এ তথ্য কোনো বিশ্বস্ত সূত্রেও মেলেনি।
সুতরাং, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো কখনো ইউটিউব চ্যানেল খুলতে পারবে না দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Rumor Scanner’s own analysis.
- Dexerto – Fake Cristiano Ronaldo TikTok fools everyone before ban & now there’s a Messi copycat
- Noah Glenn Carter – TikTok video
- Snopes – Cristiano Ronaldo Featured in Fake Livestream on TikTok
- YouTube – How does YouTube make money?