সম্প্রতি, ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনার প্রেক্ষিতে ঢাকা কলেজের ছাত্ররা সেনাবাহিনীর ওপর বোমা হামলা করেছে দাবিতে সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার।
উক্ত দাবিতে এক্স (সাবেক টুইটার) পোস্ট দেখুন- এখানে (আর্কাইভ)
উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন- এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
শিবির-সমন্বয়ক জঙ্গিদের বোমা হামলায় সেনাবাহিনী উড়ে গেছে দাবিতে ফেসবুক পোস্ট দেখুন- এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সাম্প্রতিক ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে ঢাকা কলেজে সেনাবাহিনীর ওপর বোমা হামলার ঘটনা ঘটেনি বরং, সেদিন সেনাবাহিনীর ধাওয়ায় শিক্ষার্থীরা ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাসের ভেতরে দৌড় দিলে সেসময় ধাক্কাধাক্কিতে ঢাকা কলেজের একটি গেট খুলে পড়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে এক সেনা সদস্য পেছনে সরে আসতে গিয়ে পড়ে যান। সেসময়ের ফুটেজকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে ভিডিওটিতে বোমা বিস্ফোরণের কোনো ঘটনা বা বিস্ফোরণের কোনো শব্দ লক্ষ্য করা যায়নি। তবে, একজন সেনাসদ্যস্যকে পেছনে সরতে গিয়ে পড়ে যেতে দেখা যায় এবং তিনি যেখান থেকে পেছনে দিকে পড়ে যান সেখানে অর্থাৎ তার সামনে একটি গেট পড়ে থাকতে দেখা যায়।
পরবর্তী অনুসন্ধানে জাতীয় দৈনিক আজকের পত্রিকার মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিক হাসান সিকদার এর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ২০ নভেম্বর ‘ডিসিয়ানদের কি অবস্থা? এখন’ শীর্ষক ক্যাপশনে সেদিনের ঘটনার একটি ভিডিও পাওয়া যায়। এই ভিডিওতেও সেনা সদস্যের পড়ে যাওয়ার ঘটনার দৃশ্যটি ছিল।
ভিডিওতে বোমা বিস্ফোরণ হতে দেখা যায়নি। তবে, গেট পড়ে যাওয়ায় সেনা সদস্যকে পেছনে পড়ে যেতে দেখা যায়।
এই বিষয়ে জানতে হাসান সিকদারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তিনি যে ভিডিওটি প্রকাশ করেছেন সেটি ধারণ করেন কালের কণ্ঠের সাংবাদিক আবদুল হামিদ। তারা সেদিন ঘটনাস্থলেই ছিলেন।
জনাব হাসান বলছেন, “সেদিন ৪.৩০ মিনিটের সময় সাইন্সল্যাব এলাকায় পুলিশ – সেনাবাহিনী সাউন্ড গ্রানেড – টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। সেসময়ে মিরপুর সড়কে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা পুনরায় জড়ো হওয়ার চেষ্টা করলে সেনাবাহিনী তাদেরকে আবার ধাওয়া করে। সেনাবাহিনীর ধাওয়া খেয়ে শিক্ষার্থীরা যখন পিছু হটে তখন ক্যাম্পাসের ২য় / পকেট গেট ধাক্কা দিয়ে দৌড় দেয়, ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাসের ভিতরে তখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক সদস্যকে পরে যেতে দেখা যায়”
হাসান জানিয়েছেন, সেদিন এই ঘটনায় বোমা হামলার মতো কিছু ঘটেনি।
কালের কণ্ঠের সাংবাদিক আবদুল হামিদের সাথেও কথা বলেছে রিউমর স্ক্যানার। তিনি জানান, “মুলত গেইটা ছিলো অসংরক্ষিত। গেইটটা যখন পুরোটা লাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয় তখন গেইট পুরো আলগা হয়ে যায়। এবং লাগিয়ে দেওয়ার সময় ওপাশ থেকে ধাক্কা লাগে যার কারণে গেইটটা পড়ে যায়। গেইটের সাথে সেই সেনা সদস্য ছিলো। একপর্যায়ে সেই সেনা সদস্য পিছু হটতে গেলে সে পড়ে যায়।”
গণমাধ্যম সূত্রেও (১, ২, ৩) সেদিন ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনায় বোমা হামলার কোনো তথ্য উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনায় ঢাকা কলেজে সেনাবাহিনীর ওপর বোমা হামলা শীর্ষক একটি দাবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
- Hasan Shikdar: Facebook Video
- Statement from Hasan Shikdar
- Statement from Abdul Hamid
- Rumor Scanner’s Own Analysis