সম্প্রতি, ছাত্রদলের কথিত এক নেতা ট্রাফিকের দায়িত্ব পালনকারী একজন নারী সমন্বয়কের ওপর হামলা করেছেন দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ট্রাফিকের দায়িত্ব পালনকারী নারী সমন্বয়কের ওপর ছাত্রদল নেতার হামলার দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, ভুক্তভোগী ওই নারী সমন্বয়ক নন এবং অভিযুক্তের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার বিষয়েও জানা যায়নি। মূলত, ট্রাফিকের দায়িত্ব পালনকালে ওই নারী রিক্সার চাকার পাম্প ছেড়ে দিলে তা নিয়ে অভিযুক্তের সাথে বাকবিতণ্ডা হয়। পরবর্তীতে অভিযুক্তকে দায়িত্বপ্রাপ্ত সার্জেটের হাতে তুলে দেওয়া হয়। সেই মুহুর্তে ধারণ করা ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
আলোচিত ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে মূলধারার গণমাধ্যম কালের কণ্ঠের ফেসবুক পেজে গত ১৬ অক্টোবর একই ভিডিওটি প্রচারিত হতে দেখা যায়। তবে ভিডিওটির বিষয়ে পোস্টে কোনো তথ্য না থাকায় ঘটনাটির বিষয়ে বিস্তারিত জানা যায়নি।

পরবর্তীতে উক্ত পোস্টটির মন্তব্যের ঘর পর্যালোচনা করে, ভুক্তভোগীর একটি মন্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়। যার সূত্র ধরে তার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টও খুঁজে পাওয়া যায়। তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে জানা যায়, ভুক্তভোগীর নাম তাহসিনা জামান। এছাড়াও তার অ্যাকাউন্টটি পর্যালোচনার মাধ্যমে সেদিনের ঘটনার মূল ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়। পাশাপাশি অভিযুক্তের সাথে তার কথোপকথনের আরও দুইটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওগুলো দেখুন এখানে এবং এখানে। ভিডিওগুলোতে অভিযুক্তকে তার ব্যবহারের জন্যে ভুক্তভোগীর কাছে ক্ষমা চাইতে দেখা যায়। এছাড়াও তাকে ভুল স্বীকার করতেও দেখা যায়।
তাহসিনা জামানের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট পর্যালোচনা করে পরবর্তীতে তার সেদিনের ঘটনা নিয়ে মূলধারার গণমাধ্যম দ্য ডেইলি সানে প্রকাশিত তার একটি সাক্ষাৎকারও খুঁজে পাওয়া যায়।

তার দেওয়া সাক্ষাৎকার থেকে জানা যায়, ঘটনাটি ঢাকার কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় ঘটে। সেদিন উল্টো দিক থেকে আসা একটি রিকশাকে থামাতে গেলে রিকশাওয়ালা তার কথা অমান্য করে চলে যেতে থাকে। এ সময় তিনি তার হাতের লাঠি দিয়ে রিক্সার চাকা পাংচার করে দেন। এ ঘটনায় এক বাইকার সেখানে এসে তাকে উস্কানিমূলক ভাষায় অপমান করে, যার ফলে অনেক রিকশাচালক তাকে ঘিরে ধরে। যাদের মধ্যে একজন তাকে মারধরও করেন। পরবর্তীতে স্থানীয়রা ও পুলিশ সহকর্মীরা তাকে উদ্ধার করে এবং অভিযুক্তকেও আটক করে। তবে তাহসিনা অভিযুক্তকে ক্ষমা করে দেওয়ায় পুলিশ তাকে ছেড়ে দেয় বলেও সাক্ষাৎকার থেকে জানা যায়। কিন্তু ভিডিওটির কোথাও অভিযুক্ত ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে যুক্ত আছেন এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তিনি ছাত্রদলের পরিচয় ব্যবহার করে ভুক্তভোগীকে হুমকি দিয়েছেন বলেও জানা যায়নি। সাক্ষাৎকারটি থেকে শুধু জানা যায়, অভিযুক্ত ওই যুবক রাজধানীর তিতুমীর কলেজের একজন শিক্ষার্থী।
পরবর্তী অনুসন্ধানে তাহসিনা জামানের জুলাই আন্দোলনের সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালনের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এছাড়াও অভিযুক্ত ব্যক্তির ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে কোনো সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা সেটিও জানা যায়নি। তবে এটি নিশ্চিত যে তিনি সেদিন ছাত্রদলের পরিচয় ব্যবহার করেননি।
সুতরাং, ট্রাফিকের দায়িত্ব পালনকারী একজন নারী সমন্বয়কের ওপর ছাত্রদলের কথিত এক নেতা হামলা করেছেন শীর্ষক দাবিটি বিভ্রান্তিকর।