ইশরাক হোসেনের সাবেক স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ চাওয়ার বক্তব্যকে ড. ইউনূসের পদত্যাগ চাওয়ার দাবিতে প্রচার

গত জুলাই মাসের শুরুতে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া রাজপথের আন্দোলন শেষ পর্যন্ত সরকার পতনের আন্দোলনে রুপ নেয়। গণআন্দোলনের মুখে গত ০৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর গত ০৮ আগস্ট নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। এরই মধ্যে ড. ইউনূসের পদত্যাগ দাবি করলেন বিএনপি নেতা ইশরাক শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

ইশরাক হোসেনের

উক্ত দাবিতে ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

আলোচিত দাবিতে সবচেয়ে ভাইরাল ভিডিও পোস্টটি এই প্রতিবেদন প্রকাশ অবধি প্রায় ১৩ লক্ষ বার দেখা হয়েছে এবং শেয়ার করা হয়েছে প্রায় পাশাপাশি প্রায় ৮ হাজার ২ শতবার।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগের দাবি জানাননি বরং প্রচারিত ভিডিওতে তিনি সদ্য সাবেক স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনকে উদ্দেশ্য করে পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওর কিছু ফুটেজ রিভার্স ইমেজ সার্চ করে Bangladesh NewsYube নামক ইউটিউব চ্যানেলে গত ১৩ আগস্ট “১৫ ই আগস্টে কঠোর হাতে দমন হবে! ইশরাক হোসেন ‘স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে হুঁশিয়ারি” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত দৃশ্যের সাদৃশ্য পাওয়া যায়।

Video Comparison: Rumor Scanner

উক্ত ভিডিওতে ইশরাক হোসেন ১৫ আগস্টে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কর্মসূচী প্রতিহত করার কথা জানান।

উক্ত ভিডিওর তিন মিনিট ০৪ সেকেন্ড সময়ে উপস্থিত সাংবাদিকরা ইশরাক হোসেনকে “স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা (সাবেক স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন) একটি বক্তব্য দিয়েছে আপনারা কি এই বিষয়ে অনড় কিনা?” শীর্ষক প্রশ্ন করেন।

জবাবে ইশরাক হোসেন বলেন, “আমার দলীয় একটি বক্তব্য এখানে অবশ্যই আছে। তবে আমি দলীয় বক্তব্যের বাইরে গিয়ে ব্যক্তিগতভাবে কিছু বলতে চাই। আমার ব্যক্তিগত বক্তব্য হচ্ছে এই, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আইন মন্ত্রণালয় এই দুইটা মন্ত্রণালয়ের প্রথম দায়িত্ব এই যে গণহত্যা হয়েছে যতদূর নির্যাতন হত্যাকাণ্ড হয়েছে সেগুলোর তদন্ত অতিমাত্রায় প্রথমেই শুরু করা মামলার ব্যবস্থা করা এবং তাদেরকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা। এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে যারা থাকবে তাদের কে আগে সেটি প্রাধান্য দিতে হবে। কিন্তু আমরা উনার বক্তব্যে হতাশ হয়েছি উনি এখন আওয়ামী লীগকে দ্রুততম সময়ে পুনর্গঠনে রিহ্যাবিলিটেশন একথা বলেছে। এটা বাংলাদেশের জনগণ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। এটা আমরা মানিনা তারএ বক্তব্য। দ্বিতীয়তঃ উনি বলেছেন যে রাজনীতি আগামী দিনে করা কষ্টকর হয়ে যাবে। এই বক্তব্যের সাথে আমি অত্যন্ত জোরালো ভাবে দ্বিমত পোষণ করছি। উনার যদি বক্তব্য থাকে যে অপরাজনীতি চাঁদাবাজি রাজনীতি সন্ত্রাসের রাজনীতি তাহলে সেটা বলা উচিত যে আগামী দিনের সেই সকল অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করা কঠিন হয়ে যাবে। কিন্তু তিনি যে ভাষায় বলেছেন তাতে মনে হচ্ছে রাজনীতিবিদদের উপর উনার ক্ষোভ রয়েছে উনি রাজনীতিবিদদের শায়েস্তা করতে চাচ্ছেন। তাহলে যে এক সংগ্রামরত জীবন দান এত আন্দোলনের পরে আমরা কি আওয়ামী লীগ যে অবস্থায় বাংলাদেশকে বিরাজনীতিকরণের দিকে নিয়ে গিয়েছিল তার চেয়েও বড় স্বৈরশাসককে কি আমরা মেনে ক্ষমতায় বসিয়েছি। অতএব এটাও জনগণ মানেনা আমার বিশ্বাস যে ছাত্র-জনতা বাংলাদেশের জনগণ ঘোড়াকে প্রত্যাখ্যান করেছে তাদের উচিত হবে দ্রুততম সময়ে পদত্যাগ করে চলে যাওয়া। কারণ ওনার ভোটেই ক্ষমতায় বসায় নাই উনাকে একটা অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে আপনাকে খুব পছন্দ করতাম উনার টকশো এবং বিভিন্ন বিশ্লেষণমূলক কথাবার্তা শুনতাম ভালো লাগতো। কিন্তু ইদানিং কোনো অরণ্য বক্তব্যের কারণে আমরা মর্মাহত হয়েছি এবং আমরা দাবি জানাচ্ছি জোরালো দাবি জানাচ্ছি অতি দ্রুত পদত্যাগ করেন। এখানে উপযুক্ত কাউকে বসানো হোক যারা প্রথমে এই গণহত্যা আওয়ামী লীগেরই হত্যার বিচারের দায়িত্বটা আগে পালন করে আমরা এরকম একজনকে চাচ্ছি। আমরা এমন কাউকে চাচ্ছি না যিনি আবারও আওয়ামীলীগ সেই স্বৈরশাসন প্রতিষ্ঠা করতে চান।”

জাতীয় দৈনিক যায়যায়দিন’র ইউটিউব চ্যানেলে গত ১৩ আগস্ট “স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ করা উচিৎ: ইশরাক হোসাইন” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে সাবেক স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনকে নিয়ে আলোচিত বক্তব্যটি খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে বলা হয়, বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ১৫ আগস্টে আওয়ামী লীগের কর্মসূচী প্রতিহত করা এবং সদ্য সাবেক স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনকে উদ্দেশ্য করে পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন।

ইশরাক হোসেন তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ এবং এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে গতকাল ১৭ আগস্ট আলোচিত ভিডিওটি প্রকাশ করে জানান, সদ্য সাবেক স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনের পদত্যাগ চেয়ে মন্তব্যের ভিডিওতে বিকৃত শিরোনাম যুক্ত করে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তাকে নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। তিনি অনেক আগে থেকেই ড. মুহাম্মদ ইউনূসের একজন বড় ভক্ত বলে উল্লেখ করেন।

এছাড়া, ইশরাক হোসেন তার ফেসবুক পেজে আজ (১৮ আগস্ট) একটি ভিডিও প্রকাশ করে তার বক্তব্য বিকৃত করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সম্পর্কে মিথ্যা অপপ্রচার ছড়ানোর প্রতিবাদ জানান।

উল্লেখ্য, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের দাবির মুখে গত ১৬ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদ থেকে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনকে সরিয়ে লে. জে. (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং এম সাখাওয়াত হোসেনকে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা করা হয়েছে।

সুতরাং, বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগের দাবি করেছেন বলে তার সাবেক স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ চাওয়ার বক্তব্য প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img