বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে সংঘর্ষে বিজিবি ও মিয়ানমার সেনা নিহতের গুজব

- Advertisement -

সম্প্রতি, বাংলাদেশের বিজিবির গুলিতে মিয়ানমারের ৭ সেনা নিহত হয়েছে এবং বাংলাদেশের ২৭ বিজিবি নিহত হয়েছে মিয়ানমারের গুলিতে শীর্ষক ক্যাপশনে আলাদা দুইটি ভিডিও শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম টিকটকে প্রচার করা হয়েছে।

সীমান্তে সংঘর্ষে

বাংলাদেশের বিজিবির গুলিতে মিয়ানমারের ৭ সেনা নিহত হওয়ার দাবিতে টিকটকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

মিয়ানমারের গুলিতে বাংলাদেশের ২৭ বিজিবি নিহত হওয়ার দাবিতে টিকটকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর সদস্যের গুলিতে মিয়ানমারের ৭ সেনা নিহত হননি এবং মিয়ানমারের গুলিতেও বিজিবির ২৭ সদস্য নিহত হননি বরং কোনোপ্রকার গ্রহণযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে গত ০৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো’র ওয়েবসাইটে “মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে বাংলাদেশিসহ নিহত ২” শীর্ষক শিরোনামে একটি প্রকাশিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত কয়েক সপ্তাহ যাবৎ বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তসংলগ্ন এলাকায় আরাকান আর্মিসহ কয়েকটি গোষ্ঠী যুদ্ধ জোরালো করেছে। তারা সম্মিলিতভাবে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে। এরই মধ্যে গত ৫ ফেব্রুয়ারি বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের জলপাইতলী গ্রামের একটি রান্নাঘরের ওপর মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেল এসে পড়ে। মর্টার শেলটির আঘাতে একজন বাংলাদেশি নারী এবং একজন রোহিঙ্গা পুরুষ নিহত হন।

নিহত বাংলাদেশি নারীর নাম হোসনে আরা। জলপাইতলী গ্রামের বাদশা মিয়ার স্ত্রী। এছাড়া নিহত রোহিঙ্গার নাম নবী হোসেন। তিনি বালুখালী আশ্রয়শিবিরের ৮-ই ব্লকের শরণার্থী ছিলেন। তিনি নবী হোসেনের বাড়িতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করছিলেন।

যুক্তরাজ্য ভিত্তিক সংবাদ সংস্থা বিবিসি এর বাংলা বিভাগের ওয়েবসাইটে গত ৫ ফেব্রুয়ারি “মর্টার শেলে বাংলাদেশে দুই জনের মৃত্যু, জনশূন্য হচ্ছে গ্রামগুলো” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়।

পাশাপাশি, প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে গত ১০ ফেব্রুয়ারি “উখিয়া সীমান্ত থেকে লাশ উদ্ধার” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা রহমতের বিল নামক স্থান থেকে পুলিশ একটি অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার করেছে।

এছাড়া, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তে গোলাগুলি বা অন্য কোনো বিস্ফোরণ নিয়ে দেশিয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম প্রকাশিত প্রতিবেদনে কোনো বিজিবি সদস্যের  মৃত্যুর তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি এবং বিজিবি কর্তৃক মিয়ানমার সেনাদের গুলি করে হত্যা কিংবা হামলা করার তথ্যও পাওয়া যায়নি।

মূলত, বিগত বেশ কিছুদিন ধরে বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তসংলগ্ন এলাকায় আরাকান আর্মিসহ কয়েকটি গোষ্ঠী জোরালো অবস্থান নিয়েছে এবং তারা সম্মিলিতভাবে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে। এরই মধ্যে গত ৫ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমার থেকে ছোড়া একটি মর্টার শেল বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের জলপাইতলী গ্রামের একটি রান্নাঘরের ওপর এসে পড়ে। সেই মর্টার শেলের আঘাতে একজন বাংলাদেশি নারী এবং একজন রোহিঙ্গা পুরুষ নিহত হয়। এছাড়া গত ১০ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে পুলিশ একটি অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার করে। এসব ঘটনার মধ্যেই  সম্প্রতি, বাংলাদেশের বিজিবি সদস্যের গুলিতে মিয়ানমারের ৭ সেনা নিহত হওয়া এবং মিয়ানমারের গুলিতে ২৭ বিজিবি সদস্য মারা যাওয়ার দাবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে উক্ত দাবির কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।

সুতরাং, বাংলাদেশের বিজিবি সদস্যের গুলিতে মিয়ানমারের ৭ সেনা নিহত হওয়া এবং মিয়ানমারের গুলিতে ২৭ বিজিবি সদস্য মারা যাওয়ার দাবিতে প্রচারিত তথ্যগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img