সম্প্রতি, গাজার বুরেজ ক্যাম্পে হামলার কমান্ডার ইসরায়েলি কর্নেল ইয়ার শালাম সেনাবাহিনীর হাতে আটক হয়েছে শীর্ষক তথ্যসহ দুটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন, এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ইসরায়েলি কর্নেল ইয়ার শালাম আটক হওয়ার দাবিটি সত্য নয় বরং কোনো প্রকার গ্রহণযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার একাধিক ছবি যুক্ত এই সেনা কর্মকর্তার আটক হওয়ার তথ্য ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
প্রথম ছবি যাচাই
ছবিটির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ইসরায়েল ভিত্তিক গণমাধ্যম ‘Times of Israel’ এর ওয়েবসাইটে ২০১৩ সালের ১ নভেম্বর “4 Hamas gunmen killed, 5 soldiers injured in clash at ‘terror tunnel” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে সংযুক্ত একটি ফিচার ছবির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৩ সালের ৩১ অক্টোবরে ইসরায়েলি সৈন্য গাজা উপত্যকায় হামলা চালালে হামাসের ৪ জন মারা যান এবং ৫ জন্য ইসরায়েলি সৈন্য আহত হন।
দ্বিতীয় ছবি যাচাই
অনুসন্ধানে ইসরায়েল ভিত্তিক গণমাধ্যম ‘Mivzaklive’ এর ওয়েবসাইটে “Defense Minister Galant, the Chief of Staff, the head of the Mossad and the head of the Shin Bet held a situation assessment” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে সংযুক্ত একটি ছবির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত এই ছবির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ফিলিস্তিনের সাথে ইসরায়েলের যুদ্ধের সামগ্রিক অবস্থা নিয়ে আলোচনা করতে ইজরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইওভ গালান্ত ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকে বসেছিলেন।
উক্ত বৈঠকে ইসরায়েলের সেনা প্রধান হেরজি হালেভি, সিন বেট রোনান বার এর প্রধান, মোসাদের প্রধান ডেভিড বারনিয়া, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিচালক জেনারেল কর্নেল ইয়েল জামির ও কর্নেল নিতজান আলন।
তবে উক্ত প্রতিবেদনে কোথাও ইসরায়েলি কর্নেল ইয়ার শালাম নাম খুঁজে পাওয়া যায়নি এবং এই কর্মকর্তার আটক হওয়ারও কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এছাড়া, গাজার বুরেজ ক্যাম্পে হামলার কমান্ডার ইসরায়েলি কর্নেল ইয়ার শালাম কোন দেশের সেনাবাহিনীর হাতে আটক হয়েছেন সেই তথ্যও উক্ত দাবিতে প্রচারিত পোস্ট গুলোতে অস্পষ্ট।
আলোচিত দাবির বিষয়ে অধিকতর অনুসন্ধানে আইডিএফ প্রধান হেরজি হালেভির আটক হওয়ার ব্যাপারে ইসরায়েলের স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মূলত, ফিলিস্তিনের সাথে ইসরায়েলের যুদ্ধের সামগ্রিক অবস্থা নিয়ে আলোচনা করতে সম্প্রতি ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইওভ গালান্ত ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকে বসেছেন। সেই বৈঠকে ইসরায়েলের সেনা প্রধান হেরজি হালেভি সহ বেশ কয়েক জন উচ্চপদস্থ সামরিক উপস্থিত ছিলেন। তবে সম্প্রতি ইসরায়েলের সেনা প্রধান হেরজি হালেভির সে বৈঠকে উপস্থিত হওয়ার ছবি এবং ২০১৩ সালে ইসরায়েল কর্তৃক ফিলিস্তিনে হামলার ঘটনার পুরোনো দৃশ্যের ছবি যুক্ত করে গাজার বুরেজ ক্যাম্পে হামলার কমান্ডার ইসরায়েলি কর্নেল ইয়ার শালাম সেনাবাহিনীর হাতে আটক হয়েছে দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গত ০৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস ইসরায়েলে ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ নামে হামলা শুরু করে। এই হামলার প্রেক্ষিতে ইসরায়েলও হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজা উপত্যকায় পাল্টা হামলা চালায়। এতে দেশ দুইটির মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা সংঘাত নতুন মাত্রা পায়৷
উল্লেখ্য, চলমান ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের সংঘাত ইস্যুতে একাধিক ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার৷
সুতরাং, ইসরায়েলি কর্নেল ইয়ার শালাম আটক হয়েছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত বিষয়টি মিথ্যা।