সম্প্রতি, ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে উদ্ধৃত করে “বাংলাদেশের জনগণ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চায় আর জনগণ যা চায় আমরাও তা চাই।” শীর্ষক একটি মন্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশের জনগণ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চায় আর জনগণ যা চায় আমরাও তা চাই শীর্ষক কোনো মন্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস করেননি বরং বাংলাদেশের নির্বাচন প্রসঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের করা একটি মন্তব্যকে বিকৃত করে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের নামে ছড়ানো মন্তব্যটির সূত্রের খোঁজ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। তবে অনুসন্ধানে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে পিটার হাসের এমন মন্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের ওয়েবসাইটেও পিটার হাসের এমন মন্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক যুগান্তর এর ওয়েবসাইটে সর্বশেষ গত ৩০ সেপ্টেম্বর “সম্পাদক পরিষদের চিঠির জবাবে যা বললেন পিটার হাস” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে পিটার হাসের বক্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে গণমাধ্যমের ওপর মার্কিন ভিসানীতি প্রয়োগ নিয়ে দেওয়া মন্তব্যের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে গত ৩০ সেপ্টেম্বর সম্পাদক পরিষদের সভাপতি মাহফুজ আনাম একটি চিঠি দিয়েছিল। সেই চিঠির জবাবে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস সংবাদপত্রের স্বাধীনতা দৃঢ়ভাবে রক্ষা করার জন্য আমেরিকার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
পিটার হাস আরো বলেন, ‘এর মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ যেকোনো সরকারের সমালোচনামূলক মতামত অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, আমরা আমাদের নীতির যেকোনো উপাদানে জনসাধারণের প্রতিফলনকে স্বাগত জানাই’।
এছাড়া, জাতীয় দৈনিক ডেইলি স্টার এর ওয়েবসাইটে গত ৩ অক্টোবর “বাংলাদেশের জনগণ যা চায় যুক্তরাষ্ট্রও তা চায়: ম্যাথু মিলার” শীর্ষক শীরোনামে প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ৩ অক্টোবর মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতির আওতায় গণমাধ্যমও আসতে পারে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের এ মন্তব্য সম্পর্কে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলাকে প্রশ্ন করা হলে এর জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণের স্বাধীনভাবে তাদের নেতা নির্বাচনের আকাঙ্ক্ষাকে সমর্থন করে ভিসা নীতি ঘোষণা করে হয়েছে। বাংলাদেশের জনগণ যা চায় যুক্তরাষ্ট্রও তা চায়, তা হলো অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, যা শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের সরকার, রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ এবং গণমাধ্যম সবাই আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হওয়ার পক্ষে তাদের ইচ্ছা প্রকাশ করেছে, যেমনটি আমরাও চাই।’
তবে, পিটাস হাস কিংবা ম্যাথু মিলার কেউই বাংলাদেশের জনগণ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চায় এমন কোনো মন্তব্য করেননি।
মূলত, গত ৩ অক্টোবর মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতির আওতায় গণমাধ্যমও আসতে পারে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের এ মন্তব্য সম্পর্কে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারকে প্রশ্ন করা হলে এর জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণের স্বাধীনভাবে তাদের নেতা নির্বাচনের আকাঙ্ক্ষাকে সমর্থন করে ভিসা নীতি ঘোষণা করে হয়েছে। বাংলাদেশের জনগণ যা চায় যুক্তরাষ্ট্রও তা চায়, তা হলো অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, যা শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে। তবে সম্প্রতি বাংলাদেশের জনগণ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চায় আর জনগণ যা চায় আমরাও তা চাই।” শীর্ষক একটি মন্তব্য ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস করেছেন দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, পিটার হাস এমন কোনো মন্তব্য করেননি। প্রকৃতপক্ষে, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের “বাংলাদেশের জনগণ যা চায় যুক্তরাষ্ট্রও তা চায়, তা হলো অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, যা শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে।” শীর্ষক মন্তব্যকে বিকৃত করে তাতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা যুক্ত করে সেটিকে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বক্তব্য দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ২০১১ সালে বাংলাদেশে আপিল বিভাগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কিত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে। পরবর্তীতে এই ব্যবস্থা আর পূর্ণবহাল করা হয়নি।
উল্লেখ্য, পূর্বেও পিটার হাসের নামে ইন্টারনেটে একাধিক ভুল তথ্য প্রচার করা হলে সেগুলো শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন দুইটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে:
- এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যানদের ভিসানীতির আওতায় আনা নিয়ে পিটার হাসের নামে ভুয়া মন্তব্য প্রচার
- চটকদার থাম্বনেইলে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের গাড়িতে হামলার ভুয়া তথ্য প্রচার
সুতরাং, বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বাংলাদেশের জনগণ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চায় আর জনগণ যা চায় আমরাও তা চাই শীর্ষক মন্তব্য করেছেন দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- US Embassy Dhaka – Website
- Daily Jugantor – সম্পাদক পরিষদের চিঠির জবাবে যা বললেন পিটার হাস
- Daily Samakal – সম্পাদক পরিষদের উদ্বেগ ও মার্কিন রাষ্ট্রদূতের ব্যাখ্যা
- The Daily Star – বাংলাদেশের জনগণ যা চায় যুক্তরাষ্ট্রও তা চায়: ম্যাথু মিলার
- Banglanews24 – নির্বাচনের ফলাফলকে প্রভাবিত করতে চায় না যুক্তরাষ্ট্র: ম্যাথিউ মিলার