সম্প্রতি ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পদত্যাগ করলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক’ শীর্ষক শিরোনাম ও ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে কথা বলায় বহিস্কৃত হলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক’ শীর্ষক থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে।

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক পদত্যাগ করেননি এবং তাকে বহিস্কার করার কোনো ঘটনাও ঘটেনি বরং ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ছবি ও ভিডিও ক্লিপ সংযুক্ত করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় একটি ভিডিও তৈরি করে কোনোপ্রকার তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই দাবিগুলো প্রচার করা হচ্ছে।
গত ০৬ জুন Sabai Sikhi নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ১ মিনিট ২৮ সেকেন্ডের একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়।

অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। এতে দেখা যায়, এটি ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি ঘটনার ছবি ও ভিডিও ক্লিপ নিয়ে তৈরি একটি নিউজ ভিডিও। সেখানে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের পুরোনো কয়েকটি ছবি দেখা যায়।
১ মিনিট ২৮ সেকেন্ডের এই নিউজ ভিডিওটিতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের অন্য একটি ভিডিও সংযুক্ত করা হয়। এরপর প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘এবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে কথা বলার বহিস্কার হলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের ঘোষণায় তিনি বহিস্কৃত হলেন। এদিকে জাতীয় নির্বাচনের আগেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ঘোষণায় বিপাকে পড়লো আওয়ামী লীগ সরকার।’
উক্ত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক একাধিক কি ওয়ার্ড সার্চ করেও দাবিগুলোর কোনো সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি আলাদা ছবি এবং ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যসূত্র ছাড়াই দাবিগুলো প্রচার করা হচ্ছে।
পাশাপাশি ভিডিওটির কি ফ্রেম কেটে কয়েকটি স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে দেখা যায়, সেগুলো অনেক পুরোনো প্রতিবেদন থেকে নেওয়া ছবি ও ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে তৈরি করা হয়েছে।
এছাড়াও প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে নাগরিক টিভির ইউটিউব চ্যানেলে গত ০৪ জুন ‘নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রী নেবেন’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

এই ভিডিওটির সাথে প্রচারিত ভিডিওটির শুরুর অংশের হুবহু মিল পাওয়া যায়।

অর্থাৎ, গত ০৪ জুন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের সাথে নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়ে কথা বলার সময়ের একটি ভিডিও আইনমন্ত্রীর পদত্যাগ ও বহিষ্কার করা হয়েছে দাবির সাথে জুড়ে দেওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি, মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে আইন, বিচার এবং সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হকের পদত্যাগ কিংবা তার বহিস্কার সম্পর্কিত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তাছাড়া বাংলাদেশ সরকারের আইন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়েও নিশ্চিত হওয়া যায় যে, আনিসুল হক এখনো আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রীর পদে বহাল আছেন।

অর্থাৎ, আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের পদত্যাগ এবং তার বহিস্কৃত হওয়ার দাবিতে প্রচারিত তথ্যগুলো সঠিক নয়।
মূলত, সম্প্রতি ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পদত্যাগ করলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক’ শীর্ষক শিরোনাম ও ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে কথা বলায় বহিস্কৃত হলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক’ শীর্ষক থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি কয়েকটি ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার ছবি ও ভিডিও ক্লিপ ব্যবহার করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে আইনমন্ত্রীর পদত্যাগ কিংবা তাকে বহিস্কারের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
প্রসঙ্গত, গত ০৪ জুন রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে বিচারকদের এক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে নির্বাচনকালীন সরকার বিষয়ে সাংবাদিকদের সাথে এক আলাপচারিতায় আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যখন মনে করবেন পদত্যাগ করে নির্বাচনকালীন ছোট সরকার গঠন করবেন’। তবে পরবর্তীতে আইনমন্ত্রীর উক্ত বক্তব্যকে তার শব্দচয়নে ভুল উল্লেখ করে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রদান করে আইন মন্ত্রণালয়।
উল্লেখ্য, পূর্বেও ক্যাপশন এবং থাম্বনেইলে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করে ভিডিও প্রচার করা হলে তা নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, আইনমন্ত্রীর পদত্যাগ এবং তাকে বহিস্কারের দাবিতে প্রচারিত তথ্যগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Nagorik TV on YouTube: নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রী নেবেন
- Ministry of Law: Official Website
- Channel 24: প্রধানমন্ত্রী যখন মনে করবেন পদত্যাগ করে নির্বাচনকালীন ছোট সরকার গঠন করবেন
- Bangla Tribune: আইনমন্ত্রীর শব্দচয়নে ‘ভুল’, ব্যাখ্যা দিলো মন্ত্রণালয়
- Rumor Scanner Own Analysis