নয়াপল্টনে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষে ছাত্রদল নেতা রবিন খান নিহত হননি

সম্প্রতি “ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন, ১০ তারিখ এর প্রথম শহিদ ঢাকা মহানগর বিএনপির ছাএদল এর সাংগঠনিক সম্পাদক রবিন খান বাগসালি পুলিশের গুলিতে নিহত।” শীর্ষক শিরোনামের একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত হচ্ছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এরকম কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। 
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

ফ্যাক্টচেক

নয়াপল্টনে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ ছাত্রদল নেতা রবিন খান মারা যান নি বরং তিনি আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

গুজবের সূত্রপাত

ফেসবুক মনিটরিং টুলস ব্যবহার করে জানা যায়, ‘BNP Media Cell‘ এর ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ থেকে গত ৭ ডিসেম্বর বিকাল ৪ টা ৫২ মিনিটে উক্ত দাবিতে সর্বপ্রথম পোস্ট করা হয়।

পরবর্তীতে, ‘বিএনপি’র অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে‘ গতকাল বিকাল পাঁচটায় উক্ত দাবিতে একই পোস্ট করা হয়।

পরবর্তীতে এ দুটি পোস্ট ডিলিট করা হলেও উক্ত পোস্ট দুটির সূত্র ধরেই ফেসবুকে ছাত্রদল নেতা রবিন খানের মৃত্যুর দাবিটি ছড়িয়ে পড়ে।

অনুসন্ধানে যা জানা যায়

অনুসন্ধানে ঢাকা মহানগর পশ্চিম ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক ‘বদিউজ্জাম বিপ্লব’ এর ফেসবুক আইডিতে গত ৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় “পুলিশের গুলিতে আহত ঢাকা মহানগর পশ্চিম ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক, “মোঃ রবিন খান” ভাই আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন-বিঃ দ্রঃ তিনী মারা যাননি,কেউ ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত ছড়াবেন না।।” শীর্ষক শিরোনামের একটি পোস্ট পাওয়া যায়।

উক্ত পোস্টে বদিউজ্জামান, ছাত্রদল নেতা রবিন খানের নিহত হওয়ার খবরটিকে ভুল তথ্য বলে নিশ্চিত করেন। এছাড়াও রবিন খান বর্তমানে আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন বলে উক্ত পোস্টে উল্লেখ করেন তিনি।

পরবর্তীতে, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ‘Fakhrul Islam Fahad’ এর ফেসবুক একাউন্ট থেকে গতকাল (০৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় “ঢাকা মহানগর পশ্চিম ছাত্রদল এর সাংগঠনিক সম্পাদক রবিন ভাই মুমূর্ষু অবস্থায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন। উনি জীবিত আছেন , মারা যান নাই , সবাইকে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য অনুরোধ করছি” শীর্ষক শিরোনামের পোস্ট করা হয়। উক্ত পোস্টের ব্যবহৃত ছবিতে গুলিবিদ্ধ রবিন খানের সাথে পোস্টদাতা ফখরুল ইসলাম ফাহাদকে দেখা যায়। যা থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়, গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর পোস্টদাতা রবিন খানের সাথে ছিলেন।

এছাড়াও, সুইডেন ভিত্তিক অনলাইন পোর্টাল নেত্র নিউজের ফেসবুক পেজে গতকাল রাতে ঘটনার বিবরণ দিয়ে সংঘর্ষের একটি ভিডিও প্রকাশ করে। 

উক্ত ঘটনার বিবরনীতে লেখা হয়, 

“৭ ডিসেম্বর ২০২২ — বাংলাদেশের প্রধান বিরোধীদল বিএনপির প্রধান কার্যালয়ে পুলিশের গুলিবর্ষণে একজন নিহত হয়েছেন। শটগানের গুলিতে নিহত বিএনপি কর্মীর নাম মকবুল হোসেন। ১০ ডিসেম্বর বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ঢাকায় জমায়েত হচ্ছিলেন নেতাকর্মীরা। ঘটনাস্থলে উপস্থিত নেত্র নিউজের একজন প্রতিবেদক জানান, নয়াপল্টন এলাকায় পুলিশ হামলা শুরু করলে মকবুলসহ বিএনপির নেতা-কর্মীরা দলীয় কার্যালয়ের ভেতরে আশ্রয় নেন। কার্যালয়ের গেট থেকে পুলিশ ভেতরে অবস্থানরত ব্যক্তিদের উপর গুলি চালালে মকবুল গুলিবিদ্ধ হন। এরপর চিকিৎসার জন্য তাকে দুইবার হাসপাতালে নিতে চাইলেও পুলিশ বাধা দেয়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তিনি বিএনপি কার্যালয়ের নিচতলায় মৃত্যবরণ করেন। বিএনপি এই হামলা ও মৃত্যুর ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।”

এছাড়া, নেত্র নিউজের ফেসবুক পেজে প্রকাশিত ভিডিওতে ছাত্রদল নেতা রবিন খানকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দেখা যায়। উক্ত ভিডিওতে তিনি নয়া পল্টনে ঘটা সংঘর্ষের ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন।

পরবর্তীতে, বিএনপির অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে আজ (০৮ ডিসেম্বর) “গতকাল নয়াপল্টনে বিএনপির শান্তিপূর্ণ অবস্থানে পুলিশের অতর্কিত হামলা ও গুলি বর্ষণের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরছেন পুলিশের গুলিতে মারাত্মকভাবে আহত ঢাকা মহানগর ছাত্রদল নেতা রবিন খান।” শীর্ষক শিরোনামের একটি ভিডিও বার্তা পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওতে দেখা যায়, গতকালের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ ছাত্রদল নেতা রবিন খান হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। গুলিবিদ্ধ স্থানে ব্যান্ডেজ লাগানো অবস্থায় তিনি গতকালের ঘটনার বর্ননা দিচ্ছেন।

যা থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়, রবিন খান মারা যান নি এবং তিনি আহত অবস্থায় বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি।

এছাড়াও, গতকালের ঘটনার প্রেক্ষিতে বিএনপির ভার্চুয়াল সভার একটি বিবৃতি বিএনপির মিডিয়া সেলের ভেরিফাইড ফেসবুক একাউন্টে পাওয়া যায়। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কর্তৃক সাক্ষরিত উক্ত বিবৃতিতে পল্লবীর ৫ নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা মকবুল হোসেন নিহত হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়। এছাড়াও, পরবর্তী কার্যক্রম সম্পর্কে জানানো হলেও ছাত্রদল নেতা রবিন খানের নিহত হওয়ার কোনো তথ্য পাওয়া যায় নি।

এছাড়াও, উক্ত ঘটনায় রবিন খানের নিহত হওয়ার কোনো তথ্য মূলধারার গণমাধ্যমে প্রচারিত হয় নি।

জাতীয় গণমাধ্যম প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে গত ৭ ডিসেম্বর বিকাল ৪ টা ২০ মিনিটে “নয়াপল্টনে বিএনপি–পুলিশ সংঘর্ষ, নিহত ১” শীর্ষক শিরোনামের একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে হতে জানা যায়,

“রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, নিহত ব্যক্তির নাম মকবুল আহমেদ।”

মূলত, গতকাল (০৭ ডিসেম্বর) বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় মকবুল হোসেন নামে এক ব্যক্তি নিহত হন। এছাড়াও ঢাকা মহানগর পশ্চিম ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক রবিন খান সহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পাওয়া যায়। উক্ত ঘটনায় বিএনপির অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে রবিন খান নিহত হওয়ার দাবি করা হলে ফেসবুকে একই দাবিতে তথ্যটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে উক্ত পোস্ট সরিয়ে ফেলা হয় এবং রবিন খানের একটি ভিডিও বার্তার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায় তিনি গুলিবিদ্ধ অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছেন।

সুতরাং, বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষে ছাত্রদল নেতা রবিন খানের নিহত হওয়ার তথ্য প্রচারিত হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img