শুক্রবার, মে 23, 2025

চট্টগ্রামের সংঘর্ষের ঘটনায় সনাতন ধর্মাবলম্বী নিহতের গুজব

জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে দায়েরকৃত রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গত ২৫ নভেম্বর বিকেলে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র এবং পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেফতার করা হয়। পরদিন ২৬ নভেম্বর তাকে চট্টগ্রাম ষষ্ঠ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরীফুল ইসলামের আদালতে হাজির করা হলে জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয় আদালত। এরই প্রেক্ষিতে আদালত প্রাঙ্গণে উত্তেজনা ও বিক্ষোভের সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে পুলিশ, বিজিবি লাঠিপেটা ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। বিক্ষোভকারীদের হটাতে পুলিশের সাথে যোগ দেন একদল আইনজীবীও। শুরু হয় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। তখন সাইফুল ইসলাম নামের এক আইনজীবীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, আইনজীবী ও চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের অনুসারীদের মধ্যকার সংঘর্ষে সেদিন বেশ কয়েকজন সনাতন ধর্মাবলম্বীও নিহত হয়েছেন দাবিতে নিহতের ভিন্ন ভিন্ন সংখ্যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।

১৫ জন নিহত হওয়ার দাবিতে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

১৯ জন নিহত হওয়ার দাবিতে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

২২ জনা নিহত হওয়ার দাবিতে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

২৭ জন নিহত হওয়ার দাবিতে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, চট্টগ্রামে আদালত এলাকা  সংঘর্ষের ঘটনায় কোনো সনাতন ধর্মাবলম্বী নিহত হননি। সংঘর্ষের পরবর্তী সময়েও চট্টগ্রামে কোনো সনাতন ধর্মাবলম্বী নিহতের খবর পাওয়া যায়নি। প্রকৃতপক্ষে, ২৬ নভেম্বরের সংঘর্ষের ঘটনায় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ ব্যতীত আর কেউ নিহত হননি।

আলোচিত দাবির সত্যতা যাচাইয়ে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে দৈনিক প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে গত ২৭ নভেম্বর কারাগারে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস চট্টগ্রামে সংঘর্ষ, আইনজীবীকে হত্যা শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Prothom Alo

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, চট্টগ্রামে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আইনজীবীদের সঙ্গে সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর অনুসারীদের সংঘর্ষের সময় সাইফুল ইসলাম আলিফ নামের একজন আইনজীবী নিহত হয়েছেন। এছাড়াও সংঘর্ষে পুলিশের ১০ সদস্যসহ অন্তত ৩৭ জন আহত হয়েছেন। তবে প্রতিবেদনটির কোথাও কোনো সনাতন ধর্মাবলম্বী নিহত হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি।

একই ঘটনায় একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন (, , ) পর্যালোচনা করেও কোনো সনাতম ধর্মাবলম্বী নিহত হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি।

এছাড়া আদালত এলাকায় সংঘর্ষের পরবর্তী সময়ে চট্টগ্রামে কোনো সনাতন ধর্মাবলম্বী নিহত হয়েছেন কিনা তা জানতে অনুসন্ধান করে গণমাধ্যম কিংবা অন্য কোনো বিশ্বস্ত সূত্রে নিহতের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

সুতরাং, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের অনুসারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আইনজীবীদের মধ্যকার সংঘর্ষে সনাতন ধর্মাবলম্বী নিহত দাবিতে নিহতের ভিন্ন ভিন্ন সংখ্যা প্রচার করা হয়েছে; যার সবগুলোই সম্পূর্ণ  মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img