সম্প্রতি ‘বিএনপিকে আবারো সন্ত্রাসী সংগঠন বললো কানাডার আদালত’ শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য গণমাধ্যম সূত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচার করা হচ্ছে
গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন একাত্তর, সময় টিভি, আরটিভি, আজকের পত্রিকা ,কালের কণ্ঠ , দৈনিক বাংলা, নিউজ২৪, বাংলা ট্রিবিউন, কালবেলা, বার্তা২৪, বাংলা নিউজ২৪ , সমকাল, প্রতিদিনের বাংলাদেশ, দেশ টিভি, চ্যানেল আই, নিউজ বাংলা ২৪, দেশ রূপান্তর, ইত্তেফাক, ডিবিসি নিউজ, ডেইলি সান, বাংলাদেশ পোস্ট, ভোরের কাগজ ,বৈশাখী টিভি, সারা বাংলা ডট নেট, দীপ্ত টিভি, আজকালের খবর ,ঢাকা টাইমস, একুশে টিভি, জিটিভি, ভোরের পাতা, বাংলাদেশ বুলেটিন, বার্তা বাজার, এশিয়ান টিভি, জনবানী, বাংলা টিভি, নিউজ জি ২৪, বাংলাদেশ জার্নাল, গণকণ্ঠ, গ্রামের কাগজ, বিজনেস বাংলাদেশ , বাংলা ইনসাইডার , বহুমাত্রিক ,রিদমিক নিউজ ,ওমেন আই ,লাস্ট নিউজ বিডি, ওয়ান নিউজ বিডি।
এছাড়া মূলধারার সংবাদমাধ্যম যুগান্তরেও এই বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল এবং পরবর্তীতে তা পরিবর্তন করা হয়। তবে নিউজটির আর্কাইভ ভার্সন পাওয়া যায়নি।
ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ) ।
ইউটিউবে প্রকাশিত ভিডিও দেখুন সময় টিভি, একাত্তর টিভি, আরটিভি।
ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন সংবাদ প্রতিদিন।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বিএনপিকে কানাডার ফেডারেল কোর্ট কর্তৃক এবারও সন্ত্রাসী সংগঠন আখ্যায়িত করার দাবিটি সঠিক নয় বরং দেশটির উক্ত কোর্ট গত ১৫ জুন দেওয়া রায়ে বিএনপি’র সন্ত্রাসবাদের সাথে জড়িত থাকার বিষয়ে বিশ্বাসযোগ্য কোনো ভিত্তি খুঁজে না পাওয়ার কথা জানিয়েছে।
দাবিটির সূত্রপাত যেভাবে
চলতি বছরের গত ১৫ জুন কানাডার টরেন্টোর একটি ফেডারেল কোর্ট ‘Haque v. Canada (Public Safety and Emergency Preparedness)‘ শীর্ষক একটি বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার আবেদনে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানায়।
এই আবেদনটি করেছিলেন মোহাম্মদ জিপসেদ ইবনে হক নামে এক ব্যক্তি, যিনি ২০১১ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপির একজন কর্মী ছিলেন। বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার জন্য এই আবেদনে মোহাম্মদ জিপসেদ ইবনে হক ২০২২ সালের ১০ জুন কানাডার ইমিগ্রেশন অ্যান্ড রিফিউজি বোর্ডের ইমিগ্রেশন ডিভিশন (আইডি)’র দেওয়া একটি সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য আদালতকে অনুরোধ করেন।
ইমিগ্রেশন ডিভিশন (আইডি)’র সিদ্ধান্তটি কি ছিল?
কানাডার ইমিগ্রেশন ডিভিশন (আইডি) আবেদনকারী অর্থাৎ মোহাম্মদ জিপসেদ ইবনে হক কানাডায় নিরাপত্তাজনিত কারণে দেশটির দ্যা ইমিগ্রেশন অ্যান্ড রিফিউজি প্রটেকশন অ্যাক্টের ধারা ৩৪(১)(এফ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বসবাসের অনুমতি পাওয়ার যোগ্য নয় বলে জানায়।
আইডির সিদ্ধান্তে উপধারাটি আরও নির্দিষ্ট করে দিয়ে বলা হয়, মোহাম্মদ জিপসেদ ইবনে হক এমন একটি সংগঠনের সদস্য, ইমিগ্রেশন অ্যান্ড রিফিউজি প্রটেকশন অ্যাক্টের ধারা ৩৪(১) (বি) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, যেই সংগঠনের বিরুদ্ধে সরকারকে বলপ্রয়োগ করে উৎখাতের চেষ্টা করার বা এর সাথে জড়িত থাকার মতো ব্যাপারে যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে।
আইডির সিদ্ধান্তে আরও বলা হয়, মোহাম্মদ জিপসেদ ইবনে হক ২০১১ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)’র কর্মী ছিলেন। আইডি এই সময়ে এমন কিছু যুক্তিসঙ্গত কারণ খুঁজে পেয়েছে, যার মাধ্যমে প্রতীয়মান হয় যে, বিএনপি এমন একটি সংগঠন, যারা বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকারকে বলপ্রয়োগ করে উৎখাতের চেষ্টা করার বা এই চেষ্টার সাথে জড়িত ছিল।
তবে আইডি বিএনপি সন্ত্রাসবাদে লিপ্ত সংগঠন বলে বিশ্বাস করার মতো যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণ খুঁজে পায়নি।
এছাড়া কানাডার PUBLIC SAFETY AND EMERGENCY PREPAREDNESS মন্ত্রণালয়ের মিনিস্টারও আইডির সিদ্ধান্ত তথা ‘আবেদনকারী সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নন’ বিষয়টির সাথে দ্বিমত পোষণ করেননি, অর্থাৎ একমত পোষণ করেছেন।
উপরের এই অংশ থেকে আরও বোঝা যায়, আবেদনকারী এমন কোনো সংগঠনের সদস্য ছিলেন না যা অনুচ্ছেদ 34(1)(f) এবং (c) এর অধীনে সন্ত্রাসবাদে জড়িত বিশ্বাস করার যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে। অর্থাৎ 34(1)(f) এর অধীনে থাকা সন্ত্রাসবাদ তথা c এর সন্ত্রাসবাদের সাথে আবেদনকারীর সংগঠনকে বিবেচনা করা হয়নি।
অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, কানাডার ইমিগ্রেশন ডিভিশন (আইডি) দেশটির দ্যা ইমিগ্রেশন অ্যান্ড রিফিউজি প্রটেকশন অ্যাক্টের ধারা ৩৪(১)(এফ), [নির্দিষ্ট করে (বি)] অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, বিএনপির একজন কর্মীকে দেশটিতে থাকার অনুমতি দেয়নি। কারণ, উল্লেখিত আইনের ৩৪(১) (বি) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বিএনপির বিরুদ্ধে সরকারকে বলপ্রয়োগ করে উৎখাতের চেষ্টা করার বা এর সাথে জড়িত থাকার মতো ব্যাপারে যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে। তবে আইডি বিএনপির বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদ বা সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত থাকার ব্যাপারে যথাযথ কোনো ভিত্তি খুঁজে পায়নি। ফলে এটি প্রতীয়মান হয় যে, বিএনপিকে কানাডার আদালত এই রায়ে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করেনি।
কানাডার যে আইন নিয়ে এত আলোচনা, চলুন দেখে আসি সেই আইনে কি আছে
দ্যা ইমিগ্রেশন অ্যান্ড রিফিউজি প্রটেকশন অ্যাক্ট (আইআরপিএ) কানাডার অভিবাসন সংক্রান্ত একটি আইন, যার উদ্দেশ্য বাস্তুচ্যুত, নির্যাতিত বা বিপদগ্রস্ত ব্যক্তিদের শরনার্থী বিষয়ক সুরক্ষা প্রদান।
এই আইনের ৩৪ ধারা অনুযায়ী, কোনো অভিবাসী বা বিদেশী নাগরিক নিরাপত্তার কারণে দেশটিতে অগ্রহণযোগ্য হবেন যদি তিনি
এ. গুপ্তচরবৃত্তির কাজে জড়িত হন যা কানাডার বিরুদ্ধে বা কানাডার স্বার্থের পরিপন্থী
বি. যে কোন সরকারকে বলপ্রয়োগ করে উৎখাতের চেষ্টা করেন, এর সাথে জড়িত থাকেন বা কাউকে প্ররোচিত করেন
বি (১). কোনো গণতান্ত্রিক সরকার, প্রতিষ্ঠান বা প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে জড়িত হন
(সি) সন্ত্রাসে জড়িত হন
(ডি) কানাডার নিরাপত্তার জন্য বিপদ হিসেবে প্রতীয়মান হন
(ই) সহিংসতায় জড়িত হন যা কানাডার নাগরিকদের জীবন বা নিরাপত্তাকে বিপন্ন করতে পারে বা হতে পারে
(এফ) এমন কোনো সংগঠনের সদস্য হন, যে সংগঠনটি অনুচ্ছেদ (এ), (বি), (বি ১) কিংবা (সি) তে উল্লেখিত কাজগুলোতে জড়িত, বর্তমানে নিযুক্ত বা ভবিষ্যতে নিযুক্ত হবে বলে বিশ্বাস করার যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে৷
কানাডার কোনো অভিবাসী বা বিদেশী নাগরিক উপরিউক্ত বিষয়গুলোর কোনোটির সাথে সম্পৃক্ত হলে তিনি দেশটিতে থাকার জন্য অনুমতি পান না।
সম্প্রতি এই আইনের যে ধারায় মোহাম্মদ জিপসেদ ইবনে হককে কানাডায় থাকার বিষয়ে অনুমতি দেওয়া হয়নি তার সঙ্গে সন্ত্রাসবাদের সংশ্লিষ্টতা নেই। এই আইন অনুযায়ী, সন্ত্রাসবাদের ধারাটি হচ্ছে ৩৪(১) (সি), অপরদিকে মোহাম্মদ জিপসেদ ইবনে হককে যে ধারায় দেশটিতে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়নি সেটি নির্দিষ্ট করে ৩৪(১) (বি) বা ৩৪(১) (এফ) এর অন্তর্ভুক্ত (বি)। অর্থাৎ এই পর্যালোচনায় আবেদনকারীর আশ্রয় আবেদন নাকচ করার পিছনে (সি) তথা সন্ত্রাসবাদ উল্লেখ নেই। এদিকে পূর্বের একাধিক ঘটনায় যখন ‘বিএনপি সন্ত্রাসবাদে যুক্ত’ এই যুক্তিসঙ্গত বিশ্বাসের কথা উল্লেখ করা হয়েছিল, তখন সেখানে সরাসরি (সি) উপধারার উল্লেখ দেখা গেছে৷ এক্ষেত্রে জিপসেদ ইবনে হকের ঘটনায় সি উপধারাটি (সন্ত্রাসে জড়িত হওয়া) উল্লেখ করা হয়নি।
এছাড়াও এই বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনাটি মূলত হয়েছে অনুচ্ছেদ 34(1)(b) তথা বল প্রয়োগ করে সরকার উৎখাতের উদ্দেশ্য থাকা না থাকার বিষয়ে। বিএনপি বলপ্রয়োগ করে সরকার উৎখাতের চেষ্টা করেছে বা প্ররোচিত করেছে আইডি এটি বিশ্বাসের যুক্তিসঙ্গত কারণ খুঁজে পেয়েছিল। অপরদিকে আবেদনকারী যুক্তি দেখিয়ে বিএনপি সরকার উৎখাতের চেষ্টা করছে এমন কোনো প্রমাণ না থাকার দাবি করে তাদের হরতাল, আন্দোলন সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতের উদ্দেশ্যে ছিল বলে যুক্তি উপস্থাপন করে। তবে শেষ পর্যন্ত বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনায় আদালত আইডির সিদ্ধান্তের বিপক্ষে প্রমাণযোগ্য কোনো ক্রটি পায়নি এবং আবেদনকারীর আবেদন নাকচ করে এটি খারিজ করে দেয়।
অর্থাৎ মোহাম্মদ জিপসেদ ইবনে হক বা বিএনপির বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের কোনো বিষয় উত্থাপন করা হয়নি। বরং তার রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনার আবেদন বলপ্রয়োগ সরকার উৎখাতের চেষ্টা বা প্ররোচনা উপধারায় নাকচ করা হয়।
তবে এই আইনের অধীনেই একাধিকবার কানাডা বিএনপিকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ বলেছে
সাম্প্রতিক ঘটনায় এই আইনের অধীনে কানাডার আদালত বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন না বললেও ইতোপূর্বে চারবার এই আইনের অধীনেই দলটির বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি আনা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে এই সংক্রান্ত প্রথম ঘটনাটি পাওয়া যায় ২০১৭ সালে। সে বছরের ২৫ জানুয়ারি দেশটির ফেডারেল কোর্টের ‘Gazi v. Canada (Citizenship and Immigration)‘ শীর্ষক একটি বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনায় মুহাম্মদ জুয়েল হোসেন গাজী নামে এক বিএনপি কর্মীর আইআরপিএ’র ৩৪(১)(এফ) [সংগঠনের সদস্য] ও ৩৪(১) (সি) [সন্ত্রাসমূলক কার্যক্রম] এর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাওয়ায় অভিবাসী হওয়ার আবেদন বাতিল করে দেওয়া হয়।
এই সংক্রান্ত দ্বিতীয় ও তৃতীয় ঘটনাটি খুঁজে পাওয়া ২০১৮ সালের মে ও অক্টোবর মাসে।
২০১৮ সালের ৪ মে দেশটির ফেডারেল কোর্টের ‘Kamal v. Canada (Immigration, Refugees and Citizenship)‘ শীর্ষক একটি বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনায় বিএনপির সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ও সরকারকে বলপ্রয়োগ করে উৎখাতের চেষ্টা ও এর সাথে জড়িত থাকার কারণ দেখিয়ে মুহাম্মদ মুস্তফা কামাল নামে এক বিএনপি কর্মীর শরণার্থী হওয়ার আবেদন বাতিল করে দেওয়া হয়। এক্ষেত্রেও আইআরপিএ’র ৩৪(১)(সি) ও ৩৪(১) (বি) কে মানদণ্ড ধরা হয়।
অনুরূপভাবে একই বছরের ২৯ অক্টোবর ‘Rana v. Canada (Public Safety and Emergency Preparedness)’ শীর্ষক আরেকটি বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনায় মাসুদ রানা নামে এক বিএনপি কর্মীর শরনার্থী হওয়ার আবেদন আইআরপিএ’র ৩৪(১)(এফ) [এমন কোনো সংগঠনের সদস্য হন, যে সংগঠনটি অনুচ্ছেদ (এ), (বি), (বি ১) বা (সি) তে উল্লেখিত কাজগুলোতে জড়িত, বর্তমানে নিযুক্ত বা ভবিষ্যতে নিযুক্ত হবে বলে বিশ্বাস করার যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে৷], ৩৪(১)(সি) [সন্ত্রাসে জড়িত হওয়া], ৩৪(১) (বি) [যে কোন সরকারকে বলপ্রয়োগ করে উৎখাতের চেষ্টা, এর সাথে জড়িত থাকা বা কাউকে প্ররোচিত করা], ও ৩৪(১) (বি.১) [কোনো গণতান্ত্রিক সরকার, প্রতিষ্ঠান বা প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে জড়িত হওয়া] অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রত্যাখ্যান করা হয়।
এছাড়া ২০২২ সালের ২৮ নভেম্বর ‘Badsha v. Canada (Citizenship and Immigration)’ শীর্ষক আরেকটি বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনায় সেলিম বাদশা নামে বিএনপির ছাত্র সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের এক কর্মীর আবেদনও প্রত্যাখ্যান করা হয় আইআরপিএ’র ৩৪(১)(এফ) ও ৩৪(১)(সি) এর অধীনে।
অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, কানাডায় আশ্রয় গ্রহণের উদ্দেশ্যে করা উপরিউক্ত আবেদনগুলো প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিটিতেই কারণ হিসেবে আইআরপিএ’র ধারা ৩৪ (১) (সি) অনুচ্ছেদের বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। যা সম্প্রতি আলোচিত মোহাম্মদ জিপসেদ ইবনে হকের আবেদনের পর্যালোচনায় উল্লেখ নেই। এখান থেকেও প্রতীয়মান হয় যে, কানাডার ফেডারেল আদালত এবার বা পঞ্চমবার বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করেনি।
মূলত, চলতি বছরের গত ১৫ জুন কানাডার ফেডারেল আদালত মোহাম্মদ জিপসেদ ইবনে হক নামে এক বিএনপি কর্মীর কানাডায় আশ্রয় গ্রহণের আবেদন বাতিল করে দেয়। সেই বাতিলের রায়ে উল্লেখ করা হয়, মোহাম্মদ জিপসেদ ইবনে হক কানাডায় নিরাপত্তাজনিত কারণে দেশটির দ্যা ইমিগ্রেশন অ্যান্ড রিফিউজি প্রটেকশন অ্যাক্টের ধারা ৩৪(১)(এফ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বসবাসের অনুমতি পাওয়ার যোগ্য নয়। কারণ, মোহাম্মদ জিপসেদ ইবনে হক বিএনপির কর্মী এবং ইমিগ্রেশন অ্যান্ড রিফিউজি প্রটেকশন অ্যাক্টের ধারা ৩৪(১) (বি) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, বিএনপির বিরুদ্ধে সরকারকে বলপ্রয়োগ করে উৎখাতের চেষ্টা করার বা এর সাথে জড়িত থাকার মতো ব্যাপারে যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে। এই রায়ে বিএনপির সঙ্গে সন্ত্রাসবাদের সংশ্লিষ্টতা না পাওয়ার বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, রায়ের এই বিষয়টিকেই ভিত্তিহীনভাবে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে বিএনপিকে কানাডার আদালত কর্তৃক ‘সন্ত্রাসী’ সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করার দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং, বিএনপিকে কানাডার আদালতে পঞ্চমবারের মতো সন্ত্রাসী সংগঠন আখ্যায়িত করার দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
- Federal Court Canada (1): Haque v. Canada (Public Safety and Emergency Preparedness)
- Federal Court Canada (2): Gazi v. Canada (Citizenship and Immigration)
- Federal Court Canada (3): Kamal v. Canada (Immigration, Refugees and Citizenship)
- Federal Court Canada (4): Rana v. Canada (Public Safety and Emergency Preparedness)
- Federal Court Canada (5): Badsha v. Canada (Citizenship and Immigration)
- Justice Laws Website: https://laws-lois.justice.gc.ca/eng/acts/i-2.5/section-34.html