গত ১১ সেপ্টেম্বর গাজীপুরের কাশিমপুরের ভবানীপুর এলাকায় ‘বিগবস’ নামক একটি কারখানায় আগুন দেওয়া হয়৷ বকেয়া বেতনের দাবিতে আন্দোলনরত বেক্সিমকো গ্রুপের শ্রমিকেরা এই আগুন দেয়।
এরই প্রেক্ষিতে, পুড়ে যাওয়া ‘বিগবস’ কারখানাটি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান মালিকানাধীন ‘বেক্সিমকো’ গ্রুপের প্রতিষ্ঠান দাবিতে মূলধারার বেশকিছু গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়।
উক্ত দাবিতে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন- প্রথম আলো, সমকাল, কালের কণ্ঠ, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, মানবজমিন, দেশ রূপান্তর, সময় টিভি, নিউজ২৪, বিজয় টিভি, দীপ্ত টিভি, এটিএন বাংলা, বাংলাভিশন, বাংলা ট্রিবিউন, ঢাকা ট্রিবিউন, মানবকণ্ঠ, প্রতিদিনের বাংলাদেশ, বাংলাদেশ পোস্ট, ডেইলি এশিয়ান এইজ, জাগোনিউজ২৪, বার্তা২৪, ঢাকা পোস্ট (ইন্সটাগ্রাম), দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস, প্রতিদিনের সংবাদ, নয়া শতাব্দী, আলোকিত বাংলাদেশ, বায়ান্ন টিভি, বাংলাদেশ বুলেটিন, বিজনেস বাংলাদেশ, ভোরের পাতা, নতুন সময়, স্বদেশ প্রতিদিন, বাহান্ন নিউজ, ঠিকানা নিউজ, বার্তা বাজার, সময়ের কণ্ঠস্বর, দৈনিক করতোয়া, সংবাদ প্রকাশ, ঢাকা প্রকাশ, পিবিএ এজেন্সি, জুম বাংলা, বিডি২৪লাইভ, প্রতিদিনের কাগজ, সকালের সময়, আজকালের খবর, বিবার্তা২৪, শীর্ষ খবর, এমটিনিউজ২৪, সোনালী নিউজ, বিডিরিপোর্ট২৪, গ্রামের কাগজ, প্রবাসীর দিগন্ত, নিউজজি২৪, বাংলার কাগজ, ভিন্ন বার্তা, আওয়ার নিউজ, জবাবদিহি, নাগরিক সংবাদ, জাস্ট নিউজ বিডি, প্রতিদিনের চিত্র, দৈনিক জন্মভূমি, সংবাদ বেলা, নিউজনাউ২৪, দেশপত্র, খবর সংযোগ, নিরাপদ নিউজ এবং নিউজজোন।
এছাড়া, ইত্তেফাক, আজকের পত্রিকা, যায়যায়দিন, দৈনিক বণিক বার্তা, রাইজিং বিডি, ডেইলি বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ জার্নাল উক্ত দাবিতে সংবাদ প্রকাশ করে পরবর্তীতে সরিয়ে নিয়েছে৷ উক্ত সংবাদ প্রতিবেদনগুলোর লিংক বা আর্কাইভ সংস্করণ পাওয়া যায়নি।
পাশাপাশি, গণমাধ্যমের ফেসবুক পেজ এবং ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
এক্সে (সাবেক টুইটার) প্রচারিত পোস্ট দেখুন- এখানে (আর্কাইভ)।
ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, গাজীপুরে শ্রমিকদের দেওয়া আগুনে পুড়ে যাওয়া ‘বিগবস’ কারখানাটি বেক্সিমকো গ্রুপের মালিকানাধীন নয় বরং, কারখানাটি ‘এ্যাপটেক’ গ্রুপের, যার মালিক সৈয়দ রেজাউল হোসেন কাজী।
অনুসন্ধানের শুরুতে ‘বিগবস’ প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইট খুঁজে বের করে রিউমর স্ক্যানার টিম।
ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, ‘বিগবস করপোরেট লিমিটেড’ প্রতিষ্ঠানটি ‘এ্যাপটেক গ্রুপ’ নামক প্রতিষ্ঠানের অধীনস্থ একটি প্রতিষ্ঠান।
পরবর্তীতে এ্যাপটেক গ্রুপের সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। এ্যাপটেক গ্রুপের চিফ এইচআর মোঃ আলী আহাদ বিন জাহিদ বলেন, ‘বিগবস’ এ্যাপটেক গ্রুপের প্রতিষ্ঠান। আমরা শ্রমিকদের বেতন ক্লিয়ার করেছি আগেই। তবে, যে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে এটিতে আসলে আমাদের প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা জড়িত নন। আর বেক্সিমকো গ্রুপের যে প্রতিষ্ঠান সেটি আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এছাড়া আমাদের মালিকানাও আলাদা।
এরপর বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ‘বিগবস করপোরেট লিমিটেড’ প্রতিষ্ঠানটির মালিকানায় রয়েছেন সৈয়দ রেজাউল হোসেন কাজী। অপরদিকে, বেক্সিমকো গ্রুপের মালিক সালমান এফ রহমান।
এছাড়া, বিগবস কারখানায় আগুন দেওয়ার ঘটনায় কাশিমপুর থানায় করা সাধারণ ডায়েরি (জিডি) এর কপি রিউমর স্ক্যানারের হাতে এসেছে। সেখানেও কারখানাটি এ্যাপটেক গ্রুপের প্রতিষ্ঠান বলে উল্লেখ করা হয়৷ এমনকি বিগবস কারখানার মালিক সৈয়দ রেজাউল হোসেন কাজী গত ০৯ মে বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (সিআইপি) হিসেবে নির্বাচিত হয়ে কার্ড পেয়েছেন।
বিষয়টি অধিকতর যাচাইয়ের জন্য কাশিমপুর থানা এবং গাজীপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সাথে কথা বলেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।
কাশিমপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মহিউদ্দিন আহমেদ রিউমর স্ক্যানারকে বলেন, বিগবস আলাদা একটি প্রতিষ্ঠান। আমার জানামতে বেক্সিমকোর সাথে এটির কোনো সম্পর্ক নেই।
একই ভাবে গাজীপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ সহকারী পরিচালক মো: আব্দুল্লাহ্ আল আরেফীন বলেন, বিগবস আলাদা একটি প্রতিষ্ঠান। এটির সাথে বেক্সিমকোর কোনো সম্পর্ক নেই। তবে, বিগবস কারখানায় আগুন দিয়েছে বেক্সিমকোর শ্রমিকেরা।
অর্থাৎ, বিগবস প্রতিষ্ঠানটির সাথে বেক্সিমকো গ্রুপের মালিকানার কোনো সম্পর্ক নেই।
উল্লেখ্য, বেক্সিমকো গ্রুপের ওয়েবসাইটেও ‘বিগবস’ নামক কোনো সহপ্রতিষ্ঠানের তথ্য পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, গাজীপুরে শ্রমিকদের দেওয়া আগুনে পুড়ে যাওয়া ‘এ্যাপটেক’ গ্রুপের প্রতিষ্ঠান বিগবসকে বেক্সিমকো গ্রুপের দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র