দেশের চলমান বন্যা পরিস্থিতির মধ্যে বিভিন্ন সংগঠন এবং সংস্থা বন্যা কবলিত মানুষ এবং প্রাণীদের উদ্ধারে কাজ করে যাচ্ছে। এর প্রেক্ষিতে, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের ফেসবুক পেজ ‘এক টাকায় আহার’ এ প্রকাশিত একটি ছবি নিয়ে নেটিজেনদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা লক্ষ্য করেছে রিউমর স্ক্যানার৷
ছবিটি নিয়ে নেটিজেনদের মনে সন্দেহ কুকুরের অবস্থানের কারণে। প্রাণীটি দাঁড়িয়ে আছে পানির উপরে, তার পুরো শরীর শুকনো বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। অনেকেই এটিকে তাই এডিটেড ছবি বলে দাবি করছেন।
এই দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বন্যা কবলিত এলাকায় কুকুরকে খাওয়ানোর বিদ্যানন্দের এই ছবিটি সম্পাদিত নয় বরং ফেনী থেকে তোলা এই ছবিটির মেটাডাটা বিশ্লেষণ করে ছবিটি আসল বলেই নিশ্চিত হওয়া গেছে৷
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে এক টাকায় আহার এর ফেসবুক পেজে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়৷ ২২ আগস্ট রাত ০৮ টা ০৪ মিনিটে প্রকাশিত ছবিটির ক্যাপশনে দাবি করা হয়েছে, “সবাই চলে গেছে তারে ফেলে, তবুও কুকুরটি মালিকের বাড়ী পাহারায়। নৌকা দেখে এগিয়ে আসে, বাঁচার আকুতিতে উঠতে চায় আবার কিসে যেন পিছু টানে। বিদ্যানন্দের স্বেচ্ছাসেবীরা বিস্কিটের প্যাকেট খুলে তাকে আনার চেষ্টা করছে। হাজার অবলা প্রাণী এভাবেই ভেসে যাবে জলে, মানুষ ভুলেও যাবে এদেরত্যাগটুকু, এদের প্রতি দায়িত্বটুক।”
Screenshot source: Facebook
কোনো ছবি সম্পাদিত কিনা তা জানার কার্যকরী উপায় হচ্ছে ছবির মূল ফাইলের মেটাডাটা যাচাই করে দেখা। এক্ষেত্রে যিনি ছবিটি তুলেছেন তাকেই একই ডিভাইস থেকে মূল ছবিটি পাঠাতে হয়। এই ছবিটি বিশ্লেষণ করেই ছবিটি কখন এবং কোন ডিভাইস থেকে তোলা হয়েছে তা সহ আনুষঙ্গিক নানা বিষয় সম্পর্কে জানা যায়।
রিউমর স্ক্যানার বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনে যোগাযোগ করে এই ছবির মূল ফাইলসহ একই সময়ের একাধিক ছবি সংগ্রহ করেছে। এই ছবিটির মেটাডাটা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মূল ছবি আর এই ছবির মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। ছবিটি তোলা হয় ২২ আগস্ট বিকেল ০৪ টা ৩২ মিনিটে। ফেনীর বন্ধুুয়া ব্রিজের কাছ থেকে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের একজন বোর্ড সদস্য (নিরাপত্তার স্বার্থে নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না) শাওমির রেডমি থার্টিন সি ফাইভ জির মডেলের একটি ফোনের মাধ্যমে এই ছবিটি তোলেন।
একই সময়ে তোলা কুকুরটির আরো দুইটি ছবিও তিনি রিউমর স্ক্যানারকে দিয়েছেন যেগুলোর মেটাডাটা বিশ্লেষণ করেও ছবিগুলো আসল বলে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে৷ তিনি তার ফোনের গ্যালারির স্ক্রিনশটও পাঠিয়েছেন যেখানে ছবিগুলো দেখা যাচ্ছে। তবে সেসময় কোনো ভিডিও করা হয়নি বলে জানান তিনি।
Screenshot: Rumor Scanner
রিউমর স্ক্যানারকে বিদ্যানন্দের উক্ত বোর্ড সদস্য বলছিলেন, “কুকুরটি একটা মাটি কাটার স্কেভেটর গাড়ির উপর দাঁড়িয়েছিল। আমাদের বাম পাশের স্বেচ্ছাসেবকের পেছনে দেখবেন গাড়ির খাড়া অংশ পানির উপরে। গাড়ির হরাইজন্টাল অংশ পানির লেভেলে ছিল। পানি যথেষ্ট ঘোলা এবং স্কেভেটরের রঙ হলুদ হওয়ায় পানির নীচে কিছু একটা আছে সেটা বুঝা যায়না।” বিদ্যানন্দের এই সদস্য জানালেন, “কুকুরটা নিয়ে আসতে চাইলে দূর থেকে এক ব্যক্তি বলেন সেটি পালিত কুকুর। মালিক দূরে কোথাও আছে। আর নীতিগতভাবে এক এলাকার কুকুর আমরা অন্য এলাকায় ট্রান্সফার করিনা। তাই পাশের রাস্তায় রেখে এসেছি।”
কুকুরটির বিষয়ে তার এই বক্তব্য স্বাধীনভাবে যাচাই করা না গেলেও এটা নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে যে, ছবিটি সম্পাদিত না এডিটেড নয়।
সুতরাং, বন্যায় কুকুরকে খাওয়ানোর বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন প্রকাশিত একটি ছবিকে সম্পাদিত দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা৷
তথ্যসূত্র
- Image File: Metadata Analysis
- Rumor Scanner’s own analysis