গত ২৮ আগস্ট দুপুরে ডিআরইউতে একটি গোলটেবিল আলোচনা চলাকালে একদল ব্যক্তি নিজেদের জুলাই যোদ্ধা পরিচয় দিয়ে আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান (কার্জন), সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলমসহ ১৬ জনের ওপর চড়াও হন। এরপর দুপুর সোয়া ১২টার দিকে তারা এই ১৬ জনকে পুলিশের হাতে তুলে দেন। এবং পরবর্তীতে পুলিশ তাদের গ্রেফতার দেখায়। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি কথিত একটি সংবাদ ভিডিও অনলাইনে প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, “লতিফ সিদ্দিকী কে জামিন না দেওয়ায় আদালতের বাইরে আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীদের বিক্ষোভ”।
উল্লেখ্য, ভিডিওটিতে মিছিলের কয়েকটি দৃশ্য প্রদর্শিত হতে দেখা যায়।
এরূপ দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

এরূপ দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
এরূপ দাবিতে টিকটকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়া অবধি আলোচিত দাবিতে প্রচারিত উপরোল্লিখিত পোস্টগুলো সম্মিলিতভাবে প্রায় ১ লক্ষেরও অধিক বার দেখা হয়েছে এবং প্রায় ১৫ হাজারেরও অধিক পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওগুলোতে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, লতিফ সিদ্দিকীকে জামিন না দেওয়ায় আদালতের বাইরে আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীদের বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেনি। প্রকৃতপক্ষে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের পুরোনো ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার দৃশ্যকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে তাতে কয়েকটি মিছিলের দৃশ্যের সংযুক্তি পাওয়া যায়। এরূপ প্রথম মিছিলের দৃশ্যটির বিষয়ে অনুসন্ধানে ভিডিওটির একাধিক কী-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স সার্চে মূলধারার গণমাধ্যম ‘ইত্তেফাক’ এর ইউটিউব চ্যানেলে ‘সুপ্রিম কোর্টে বিএনপি পন্থী আইনজীবীদের বিক্ষোভ মিছিল’ শিরোনামে ২০২৩ সালের ২ নভেম্বরে প্রকাশিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। ভিডিওটিতে প্রদর্শিত দৃশ্যের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত দৃশ্যের তুলনা করলে মিল পাওয়া যায়।

ভিডিওটির প্রেক্ষাপট সম্পর্কে ‘ইত্তেফাক’ এর ভিডিওটিতে বলা হয়, বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গনে সেসময় বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠাসহ বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ও অবরোধকে সমর্থন জানিয়ে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এছাড়া, ভিডিওটিতে প্রদর্শিত অপর আরেকটি মিছিলের দৃশ্যটির বিষয়ে অনুসন্ধানে ভিডিওটির একাধিক কী-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স সার্চে অনলাইন সংবাদমাধ্যম ‘ঢাকা পোস্ট’ এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ৩০ আগস্টে প্রকাশিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। ভিডিওটিতে প্রদর্শিত দৃশ্যের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত দৃশ্যের তুলনা করলে মিল পাওয়া যায়।

ভিডিওটির প্রেক্ষাপট সম্পর্কে ‘ঢাকা পোস্ট’ এর ভিডিওটির বর্ণনা অংশে বলা হয়,“সুপ্রিম কোর্টসহ সব আদালত প্রাঙ্গণে কোনো ধরনের মিছিল সমাবেশ না করার বিষয়ে হাইকোর্টের রায় কঠোরভাবে অনুসরণের জন্য আইনজীবীদের নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। এ কারণে আপিল বিভাগের দুই বিচারপতির পদত্যাগের দাবিতে সুপ্রিম কোর্ট চত্বরের বাইরে কালো পতাকা মিছিল করেছেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা।”
উল্লেখ্য, গত ২৮ আগস্ট দুপুরে ডিআরইউতে একটি গোলটেবিল আলোচনা চলাকালে একদল ব্যক্তি নিজেদের জুলাই যোদ্ধা পরিচয় দিয়ে আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান (কার্জন), সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলমসহ ১৬ জনের ওপর চড়াও হন। এরপর দুপুর সোয়া ১২টার দিকে তারা এই ১৬ জনকে পুলিশের হাতে তুলে দেন। এবং পরবর্তীতে পুলিশ তাদের গ্রেফতার দেখায়। উল্লেখ্য, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে লতিফ সিদ্দিকীকে আটক করার ঘটনার একটি দৃশ্যেরও সংযুক্তি পাওয়া যায়।
অর্থাৎ, সংযুক্ত মিছিলের দৃশ্যগুলো লতিফ সিদ্দিকী আটক হওয়ারও আগেকার সময়ের এবং এর কোনোটির সাথেই লতিফ সিদ্দিকীর কোনো প্রাসঙ্গিকতা নেই।
এছাড়া, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলেও সম্প্রতি লতিফ সিদ্দিকীকে জামিন না দেওয়ায় আদালতের বাইরে আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীদের বিক্ষোভের কোনো ঘটনা ঘটার সপক্ষে নির্ভরযোগ্য সূত্রে কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, ‘লতিফ সিদ্দিকীকে জামিন না দেওয়ায় আদালতের বাইরে আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীদের বিক্ষোভ’ শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Daily Ittefaq – সুপ্রিম কোর্টে বিএনপি পন্থী আইনজীবীদের বিক্ষোভ মিছিল
- Dhaka Post – বিএনপির আইনজীবীদের কালো পতাকা মিছিল
- Rumor Scanner’s analysis