সম্প্রতি, “সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হচ্ছে সিইসি দেশে আসছে তারেক জিয়া নিরাপত্তা দিবে সেনাবাহিনী” শীর্ষক শিরোনাম এবং “এই মাত্র সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেফতার সিইসি সেনাবাহিনীর নিরাপত্তায় দেশে আসলেন তারেক” শীর্ষক তথ্য সম্বলিত থাম্বনেইলে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন একটি ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ইউটিউবে প্রচারিত এমন কিছু ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সেনাবাহিনী কর্তৃক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের গ্রেফতার এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার কোনো ঘটনা ঘটেনি বরং ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার একাধিক ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে কোনো প্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এটি ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি পুরোনো ঘটনার ভিডিও ক্লিপ এবং ছবি নিয়ে তৈরি একটি ভিডিও প্রতিবেদন, যেখানে তারেক রহমান, প্রধান নির্বাচন কমিশনার সহ সেনাবাহিনীর সদস্যদের কিছু ছবি এবং আলোচিত দাবিটি প্রসঙ্গে অনলাইন এক্টিভিস্ট ডঃ ফয়জুল হকের দুটি ভিডিও দেখানো হয়।
ভিডিও যাচাই
আলোচিত ভিডিওতে থাকা প্রথম ভিডিওটির অনুসন্ধানে কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে Dr. Fayzul Huq নামক ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৫ মে “তারেক রহমান আসছে! নিরাপত্তা দিবে এদেশের সব বাহিনী। তাকে ছাড়া নির্বাচন করতে পারবে না! ডঃ ফয়জুল হক” শীর্ষক শিরোনাম এবং গত ২৭ নভেম্বর “নিষেধাজ্ঞা আসছে! হতাশ সিইসি! ব্যালটে সীল মারার কথা স্বীকার! পদত্যগ করুন!ডঃ ফসজুল হক”শীর্ষক শিরোনামে অনুরূপ দুটি ভিডিও (১, ২) খুঁজে পাওয়া যায়।
সাত মিনিট তিন সেকেন্ডের প্রথম ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ভিডিওটিতে অনলাইন এক্টিভিস্ট ডঃ ফয়জুল হক আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে নিজস্ব মতামত ব্যাক্ত করেছেন।
একইভাবে দ্বিতীয় ভিডিওটিতে তিনি নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের পতদ্যাগের দাবিতে নিজস্ব অভিমত ব্যাক্ত করেন।
অর্থাৎ প্রচারিত ভিডিওটিতে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার যে ভিডিও ক্লিপগুলো যুক্ত করা হয়েছে সেগুলোতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের গ্রেফতার এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ক কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এছাড়া, বাংলাদেশের মূলধারার কোনো গণমাধ্যম কিংবা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে আলোচিত দাবিগুলো প্রসঙ্গে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মূলত, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বর্তমান সরকারের পদত্যাগ এবং সেনাবাহিনীর অধীনে নির্বাচন করার দাবিতে বিএনপি-জামায়াতসহ আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে আন্দোলন করে আসছে। এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ইন্টানেটে নানা ধরনের তথ্য প্রচার হয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় ইন্টানেটে “সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হচ্ছে সিইসি দেশে আসছে তারেক জিয়া নিরাপত্তা দিবে সেনাবাহিনী” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। ভিডিওটি নিয়ে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত দাবিগুলো সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে অধিক ভিউ পাবার আশায় ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ এবং ছবি যুক্ত করে তাতে চটকদার থাম্বনেইল ও শিরোনাম ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া, গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে দাবিগুলোর সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ২০০৮ সাল থেকে স্বপরিবারে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। সেনাসমর্থিত তত্বাবধায়ক সরকারের সময় গ্রেফতার হবার পর জামিন পেয়ে তিনি চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্য যান। সেখানে তিনি এখন স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি পেয়েছেন বলে জানা যায়।
সুতরাং, প্রধান নির্বাচন কমিশনারের গ্রেফতার এবং তারেক রহমানের দেশে ফেরার দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা।