অঞ্জন দত্তের বেলাকে নিয়ে লেখা গানের ‘বেলা’ চরিত্রটি কাল্পনিক

সম্প্রতি ‘ইনিই সেই বেলা বোস। যে বেলাকে নিয়ে গান ” চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি বেলা শুনছো!! পিছনে অঞ্জন দত্ত’ শীর্ষক শিরোনামে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানেএখানে
আর্কাইভ  দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানেএখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, অঞ্জন দত্তের গানের চরিত্র বেলা বোস দাবিতে প্রচারিত ছবিতে বিদ্যমান নারীটি বেলা বোস নয় বরং ছবির নারীটি তার স্ত্রী ছন্দা দত্ত। প্রকৃতপক্ষে বেলা বোস গানের বেলা চরিত্রটি ছিল কাল্পনিক। 

ছবির নারীটি অঞ্জন দত্তের স্ত্রী ছন্দা দত্ত 

কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে ভারতীয় গণমাধ্যম Times of India তে ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ‘Chanda to usher in spring with Burmese Delicacies‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বেলা বোস দাবিতে প্রচারিত নারীটির ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Times of India

প্রতিবেদনটিতে নারীটির পরিচয় সম্পর্কে বলা হয়, ছবির নারীটি ছন্দা দত্ত। তিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা এবং অঞ্জন দত্তের স্ত্রী। 

পাশাপাশি বাংলাদেশের মূলধারার জাতীয় দৈনিক  প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে ২০১৮ সালের ২৭ মার্চ ‘যা হতে চেয়েছি, পারিনি: অঞ্জন দত্ত‘ শীর্ষক শিরোনামে একটি প্রতিবেদনেও বেলা বোস দাবিতে প্রচারিত নারীটিকে অঞ্জন দত্তের স্ত্রী ছন্দা দত্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। 

Screenshot: Daily Prothom Alo 

এছাড়া প্রথম আলোর এই প্রতিবেদনটিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ২০১৮ সালে অঞ্জন দত্ত তাঁকে নিয়ে লেখা বই ‘অঞ্জনযাত্রা’র মোড়ক উন্মোচন করতে ঢাকায় এসেছিলেন। এসময় তিনি তার স্ত্রী ছন্দা দত্তকেও সঙ্গে নিয়ে এসেছেন।

Screenshot: Daily Prothom Alo 

বেলা বোস কে ছিলেন? 

অঞ্জন দত্তের বিখ্যাত ‘চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি বেলা সত্যি’ গানের চরিত্র বেলা বোসের পরিচয়  নিয়ে অনুসন্ধানে ভারতীয় গণমাধ্যম Hindustan Times এর বাংলা ভার্সনে ২০২১ সালের ৩০ জুলাই ‘বেলা বোসকে এবার সিনেমায় আনছেন অঞ্জন!‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Hindustan Times 

প্রতিবেদনটিতে অঞ্জন দত্তকে উদ্ধৃত করে এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা হয় যে, অঞ্জন দত্ত কাউকে ভেবে বা কারো প্রেমে পড়ে বেলা বোস গানটি লিখেননি। তিনি কেবল দুইটি মানুষের প্রেমের কথা ভেবেই এই গান তৈরি করেছিলেন।

Screenshot: Hindustan Times

এছাড়া গানে ব্যবহৃত ২৪৪১১৩৯ টেলিফোন নাম্বারটি প্রসঙ্গে অঞ্জন দত্ত বলেন, ২৪৪১১৩৯ নম্বরটা এক খবরের কাগজের অফিসের নম্বর ছিল। সেই কাগজের এডিটর রোজ এত ফোন পেতে লাগলেন বেলাকে একটিবার ডেকে দেওয়ার জন্য যে বাধ্য হয়ে রীতিমতো বিরক্ত হয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তাঁরা।

পাশাপাশি বাংলাদেশের মূলধারার অনলাইন পোর্টাল Dhaka Tribune এ ২০১৬ সালের ১৭ জানুয়ারি ‘Story of Bela, Ranjana and Marian revealed‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Dhaka Tribune 

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, সেসময় ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজের একটি পূণর্মিলনী অনুষ্ঠানে এসেছিলেন অঞ্জন দত্ত। সেখানে গানের পাশাপাশি দর্শকদের সঙ্গে ২০ মিনিটের একটি প্রশ্নোত্তর পর্বেও অংশগ্রহণ করেন অঞ্জন দত্ত।

এই প্রশ্নোত্তর পর্বে বেলা বোস কে এমন প্রশ্নের উত্তরে অঞ্জন দত্ত বলেন, বেলা বোসকে তিনি চিনেন না। এটি একটি কাল্পনিক চরিত্র এবং ২৪৪১১৩৯ নম্বরটি একটি সংবাদপত্র সম্পাদকের  ছিল। যিনি অঞ্জন দত্তের বিরুদ্ধে মামলা পর্যন্ত করেছিলেন।  

Screenshot: Dhaka Tribune

প্রশ্নের উত্তরে অঞ্জন দত্ত আরও বলেন, তিনি এমন অনেক পুরুষের সাথে দেখা করেছেন, যারা গানে বেলার প্রেমিকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ, যে প্রেমিক বারবার বেলাকে বলেছিল যে, সে চাকরি পেয়েছে এবং বেলা তাকে ত্যাগ করবে না। 

তবে এই প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, অঞ্জন দত্তের আরেকটি জনপ্রিয় গান মেরী এ্যানের নারী চরিত্র ‘মেরী এ্যান’ ছিলেন বাস্তব চরিত্র। তিনি ছিলেন অঞ্জন দত্তের চতুর্থ প্রেম। অঞ্জন দত্ত যখন নবম শ্রেণির ছাত্র, তখন তিনি তার প্রেমে পড়েছিলেন।

Screenshot: Dhaka Tribune

এছাড়া বাংলাদেশের আরেকটি মূলধারার অনলাইন পোর্টাল Dhaka Times এ ২০২১ সালের ৩ জুন ‘‘বেলা বোস’ গানের জন্য মামলা খেয়েছিলেন অঞ্জন দত্ত, জানুন কারণ‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বেলা বোস বলে অঞ্জন দত্তের জীবনে কখনো কেউ ছিলেন না। কেবল কল্পনা শক্তি দিয়ে তৈরি হয়েছিল অনবদ্য এই গানের কথা এবং সুর। তবে গানে ব্যবহৃত ওই সাত সংখ্যার নম্বরটি বাস্তবেই ছিল। এটি ‘দৈনিক বিশ্বামিত্র’ নামে এক হিন্দি সংবাদপত্রের সম্পাদকের বাড়ির ফোন নম্বর ছিল। এ প্রসঙ্গে অঞ্জন দত্ত জানিয়েছিলেন, ‘গানটি লেখার জন্য দুর্ভাগ্যবশত ওই সম্পাদক আমার নামে মামলা করেন। এই অভিযোগে, আমি তার টেলিফোন নম্বর ব্যবহার করেছি গানে।

Screenshot: Dhaka Times 

অর্থাৎ বেলা বোস গানের বেলা চরিত্রটি ছিল একটি কাল্পনিক চরিত্র। 

মূলত, ১৯৯৪ সালে প্রকাশ হয়েছিল বাংলা গানের জনপ্রিয় গায়ক অঞ্জন দত্তের জনপ্রিয় গান ‘চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি বেলা সত্যি’। এই গানে তিনি বেলা নামে যে চরিত্রটিকে তুলে ধরেছিলেন তা কাল্পনিক চরিত্রটি ছিল বলে অঞ্জন দত্ত নিজেই বিভিন্ন সময়ে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন। এছাড়া তার এসব সাক্ষাৎকার থেকে জানা যায়, বেলা বোসের নাম্বার হিসেবে গানে ব্যবহৃত টেলিফোন নাম্বারটি ছিল একটি সংবাদপত্রের সম্পাদকের। যা তিনি কাকতালীয়ভাবে ব্যবহার করেছিলেন এবং এজন্য তার বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছিল। তবে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই গানের বেলা বোসের ছবি দাবিতে একটি ছবি প্রচার করা হচ্ছে। এ নিয়ে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ছবির নারীটি বেলা বোস নন, এটি প্রকৃতপক্ষে অঞ্জন দত্তের স্ত্রী ছন্দা দত্ত। 

সুতরাং, অঞ্জন দত্তের গানের চরিত্র বেলা বোস উল্লেখ করে প্রচারিত ছবিতে বিদ্যমান নারীটির নাম বেলা বোস দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img