সম্প্রতি ‘“হিন্দুদের বাসা ভাড়া বা দোকান ভাড়া দেওয়া যাবে না। দিলেও সেখানে তারা তাদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন বা উপাসনা করতে পারবে না।- বিশিষ্ট ইসলামী পণ্ডিত শায়খ আহমদুল্লাহ।’ শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে।
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, হিন্দুদের বাসা ভাড়া দেয়া যাবে না এমন কোনো মন্তব্য শায়েখ আহমাদুল্লাহ দেননি বরং তাঁর এ সংক্রান্ত একটি বক্তব্যকে কাঁটছাট করে বিভ্রান্তিকরভাবে প্রচার করা হয়েছে।
কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইউটিউবে Mi tube24 নামের একটি চ্যানেলে গত ২৩ ডিসেম্বর ‘হিন্দু পরিবারকে বাসায় ভাড়া দেওয়া যাবে?‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত শায়েখ আহমাদুল্লাহ এর সম্পূর্ণ বক্তব্যটি খুঁজে পাওয়া যায়।

ভিডিওটির ৪ মিনিট ২৬ সেকেন্ডে আহমাদুল্লাহ সেলিম সাজ্জাদ নামে জনৈক ব্যক্তির ‘আমাদের বাসায় হিন্দু মানুষ ভাড়া থাকে। আর তারা ঘরের মধ্যে ছবির পূজা করে এখন তাদের ভাড়াটিয়া হিসেবে রাখা যাবে কি?’ শীর্ষক একটি প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘ভিন্ন ধর্মাবলম্বী হিন্দু হোক, বৌদ্ধ হোক, খ্রিস্টান হোক তাদের কাছে আমরা বাসা ভাড়া দিতে পারবো কি না, দোকান ভাড়া দিতে পারবো কি না, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ভাড়া দিতে পারবো কি না? এর উত্তর হলো যদি সে বসবাস করার উদ্দেশ্যে বাসা ভাড়া নেয়, এই বাসা ভাড়া দেওয়া আমাদের জন্য জায়েজ হবে। যদিও সে বাসার মধ্যে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো উপাসনা করে, এটি তার বাসা ভাড়ার মূল উদ্দেশ্য না৷ মূল উদ্দেশ্য হলো তার বসবাস করা। এর দায়ভার বাড়ির মালিকের উপর বর্তাবে না এবং তাকে বাসা ভাড়া দেওয়া জায়েজ হবে৷’
শায়েখ আহমাদুল্লাহ আরও বলেন, ‘কিন্তু যদি উপাসনার জন্যই সে ভাড়া নেয়, অর্থাৎ শিরক করবে। উদ্দেশ্যই হলো মূলত শিরকি কাজ করবে, কুফরি করবে ঐটা তার উদ্দেশ্য। বসবাস তার উদ্দেশ্য নয় তাহলে তাকে একজন ইমানদার বাসা ভাড়া দিতে পারবে না। অতএব বাসা ভাড়া দেওয়া যাবে যদি বসবাসের উদ্দেশ্যে ভাড়া নেয়৷
ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাড়া দেওয়া প্রসঙ্গে আহমাদুল্লাহ বলেন, ‘ঠিক একইভাবে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যদি আপনার থেকে ভাড়া নেয়, যেই ব্যবসা সেখানে করবে সে, সেটা বেসিক্যালি হারাম ব্যবসাই করবে আপনি জানেন, তাহলে তাকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাড়া দেওয়া জায়েজ হবে না। তবে কি ধরনের ব্যবসা করবে তা যদি আপনার জানা না থাকে তাহলে তাকে ভাড়া দেওয়া যাবে। কারণ, এখানে তখন কোনো অন্যায় কাজ করলে এর দায়ভার তার উপর বর্তাবে, মালিকের উপর বর্তাবে না।
অর্থাৎ ইসলামি বক্তা আহমাদুল্লাহ হিন্দু, খ্রিস্টান বা কোনো অমুসলিমকে বাসা বা দোকান ভাড়া দেয়া যাবে না এমন কিছু বলেননি। বরং তিনি বসবাসের উদ্দেশ্যে কোনো অমুসলিম বাসা ভাড়া চাইলে, তা দেওয়াকে জায়েজ বলেছেন। এমনকি তারা সেখানে বসবাসের সাথে উপসানা করলেও ভাড়া দেয়া জায়েজ বলেছেন।
তবে তার মূল বক্তব্য থেকে কেবল ‘কিন্তু যদি উপাসনার জন্যই সে ভাড়া নেয়, অর্থাৎ শিরক করবে। উদ্দেশ্যই হলো মূলত শিরকি কাজ করবে, কুফরি করবে ঐটা তার উদ্দেশ্য। বসবাস তার উদ্দেশ্য নয় তাহলে তাকে একজন ইমানদার বাসা ভাড়া দিতে পারবে না।’ এই অংশটুকু কেটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘হিন্দুদের বাসা ভাড়া বা দোকান ভাড়া দেওয়া যাবে না। দিলেও সেখানে তারা তাদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন বা উপাসনা করতে পারবে না।’ শীর্ষক দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
মূলত, ইসলামি বক্তা শায়েখ আহমাদুল্লাহ জনৈক ব্যক্তির হিন্দুদের বাসা ভাড়া দেওয়া যাবে না এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, হিন্দু বা অন্য ধর্মাবলম্বীদের বাসা ভাড়া দেওয়া যাবে যদি সে কেবল বসবাসের উদ্দেশ্যে ভাড়া নেয়। তবে যদি উপাসনার জন্যই ভাড়া নেয় তাহলে তাকে ভাড়া দেওয়া যাবে না। অনুরূপ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও তিনি একই উত্তর দেন। তবে তার পুরো বক্তব্য থেকে কেবল অংশ বিশেষ কেটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘হিন্দুদের বাসা ভাড়া বা দোকান ভাড়া দেওয়া যাবে না। দিলেও সেখানে তারা তাদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন বা উপাসনা করতে পারবে না।’ শীর্ষক দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং, হিন্দুদের বাসা ভাড়া দেয়া যাবে না এমন কোনো মন্তব্য শায়েখ আহমাদুল্লাহ দেননি; এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Mi tube24_YouTube: হিন্দু পরিবারকে বাসায় ভাড়া দেওয়া যাবে?