সম্প্রতি, “মসজিদে এ.সি ব্যবহার একটি সুস্পষ্ট বিদ’আত। আর যারা মসজিদে এ.সি চালিয়ে নামাজ পড়বে তারা সবাই বিদ’আতী। – শায়খ আহমাদুল্লাহ” শীর্ষক একটি বক্তব্য শায়েখ আহমাদুল্লাহ এর নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, শায়েখ আহমাদুল্লাহ মসজিদে এসি ব্যাবহার বিদআত এ সংক্রান্ত কোন বক্তব্য দেননি বরং তার নাম এবং ছবি ব্যবহার করে ভুয়া এই বক্তব্যটি একটি ব্যানার আকারে প্রচার করা হচ্ছে।
অনুসন্ধানে ‘মসজিদে এসি ব্যবহার একটি সুস্পষ্ট বিদআত সংক্রান্ত শায়েখ আহমাদুল্লাহ এর দেয়া কোন বক্তব্য কিংবা লেখা খুঁজে পাওয়া যায় নি। বরং সাম্প্রতিক সময়ে বিদুৎ সাশ্রয় করতে মসজিদে এসি চালানোর যে বিতর্ক তার প্রেক্ষিতে গত ১৮ জুলাই শায়েখ আহমাদুল্লাহ এর ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়, যেখানে তিনি লিখেছেন, “সরকারী, বেসরকারী ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ অপচয় হয় শুধু সেটা নিয়ন্ত্রণ করা গেলে বিদ্যুৎ সংকটের সমাধান সম্ভব।”
পরবর্তীতে বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিতের জন্য শায়েখ আহমাদুল্লাহ এর প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন এর সাথে যোগাযোগ করা হলে, আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন ছড়িয়ে পড়া বিষয়টি নিয়ে শায়েখ আহমাদুল্লাহ এর অনুমতিক্রমে রিউমর স্ক্যানার টিমকে একটি সাক্ষাতকার প্রদান করেন। মুঠোফোন কলে শায়েখ আহমাদুল্লাহ এমন কোন বক্তব্য দেননি নিশ্চিত করে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন আমাদের একটি লিখিত বিবৃতি প্রদান করে। তারা জানিয়েছে,
আমরা বলিনি, এরকম অনেক কথা প্রায়ই আমাদের নামে উদ্দেশ্যমূলকভাবে প্রচার করা হয়। এতে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। আমাদের বক্তব্য আমরা শায়খ আহমাদুল্লাহর ভেরিফায়েড পেইজ, আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের ভেরিফায়েড পেইজ এবং আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের ইউটিউব চ্যানেলে প্রচার করি। এর বাইরে কোনো মাধ্যমে আমাদের নামে উদ্ধৃত বক্তব্যের দায়-দায়িত্ব আমাদের নয় ৷ আমাদের নামে কোনো সন্দেহযুক্ত বক্তব্য নজরে পড়লে উল্লিখিত কয়েকটা পেইজ ও চ্যানেলের মাধ্যমে যাচাই করে নেয়ার জন্য অনুরোধ করছি।
মূলত, বৈশ্বিক জ্বালানি তেল ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে সৃষ্ট সংকট মোকাবেলায় গতকাল সোমবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানিবিষয়ক সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্তের কথা জানাতে গিয়ে এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক ই এলাহী চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, মসজিদে মুসল্লি যারা যান, আপাতত তারা এসি ব্যবহার থেকে বিরত থাকবেন এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমেদ কায়কাউস জানান, ‘একটা সিদ্ধান্ত হয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে এটা বলা যে আগামী কয়েকমাস যেন কোনো মসজিদে এসি চালানো না হয়।’
উক্ত বিষয়টিকেই কেন্দ্র করেই পরবর্তীতে শায়েখ আহমাদুল্লাহ এর নাম এবং ছবি ব্যবহার করে মসজিদে এসি ব্যবহার বিদআত শীর্ষক একটি বক্তব্য ব্যানার আকারে তার নামে প্রচার করা হয়। উক্ত ব্যানারটিতে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন এর নাম ও লোগোও ব্যবহার করা হয়।, বৈশ্বিক জ্বালানি তেল ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে সৃষ্ট সংকট মোকাবেলায় বেশকিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। গৃহীত সিদ্ধান্তের কথা জানাতে গিয়ে এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক ই এলাহী চৌধুরী বলেন, “মসজিদে মুসল্লি যারা যান, আপাতত তারা এসি ব্যবহার থেকে বিরত থাকবেন।”
এছাড়া, সরকারের সিদ্ধান্ত নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে আলাপচারিতায় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমেদ কায়কাউসও একই কথা জানান। তিনি বলেন, ‘একটা সিদ্ধান্ত হয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে যে আগামী কয়েকমাস যেন কোনো মসজিদে এসি চালানো না হয়।’
উপদেষ্টা ও মন্ত্রীর এই সিদ্ধান্ত জানানোর কয়েক ঘন্টা পর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতি মন্ত্রী নসরুল হামিদ এমপি এক সংবাদ সম্মেলনে মসজিদে নামাজ চলাকালীন এসি ব্যবহার করে নামাজ শেষে বন্ধ করার মাধ্যমে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের অনুরোধ জানান। মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা অনেক জায়গায় দেখেছি, নামাজের সময়টুকু বাদ দিয়েও অনেকে এসি চালায়। এজন্য আমি অনুরোধ করবো, আপনারা নির্দিষ্ট সময়ে এসি ছাড়তে পারেন। যতটুকু পারেন, সাশ্রয় করুন, এটাই আমার অনুরোধ।’
সুতরাং, “মসজিদে এসি ব্যবহার একটি সুস্পষ্ট বিদ’আত। যারা মসজিদে এসি চালিয়ে নামাজ পড়বে তারা সবাই বিদ’আতী” শীর্ষক যে বক্তব্যটি শায়েখ আহমাদুল্লাহ এর ফতোয়া দাবি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।