ষষ্ঠ শ্রেণির পাঠ্যবই দাবিতে অনার্সের বইয়ের ছবি প্রচার

সম্প্রতি, জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বেকারত্বকে উল্লেখ করে জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে বেকারত্বের প্রভাব সম্পর্কিত আলোচনা সম্বলিত একটি বইয়ের ছবিকে ষষ্ঠ শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের দাবি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

প্রচারিত ছবির বইয়ে যা উল্লেখ আছে

“বেকারত্ব একটি দেশের জন্য অভিশাপ। বেকার যুবকরা কাজ না পেয়ে হতাশায় ভোগে। তার কাজ না পেয়ে ঘরে বন্দি হয়ে। থাকে ফলে দেখা যায় তারা স্ত্রীদের সাথে অধিক হারে সহবাস করে, এবং এভাবে সময় কাটায় ফলত জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু কর্মব্যস্ত লোকেরা অধিক সন্তান নিতে আগ্রহী হয় না।”

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বেকারত্বকে উল্লেখ করে জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে বেকারত্বের প্রভাব সম্পর্কিত আলোচনা সম্বলিত বইয়ের ছবিটি ষষ্ঠ শ্রেণির বইয়ের নয় বরং এটি ব্যতিক্রম প্রকাশনীর হ্যান্ডনোট সিরিজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের বাংলাদেশের সমাজবিজ্ঞান বইয়ের ছবি।

ষষ্ঠ শ্রেণির বইয়ে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কিত কোনো পাঠ আছে?

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে রিউমর স্ক্যানার টিম প্রথমেই ২০২৩ সালে ষষ্ঠ শ্রেণিতে সরবরাহকৃত বইগুলো যাচাই করে।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এর ওয়েবসাইটে প্রদত্ত ষষ্ঠ শ্রেণির বই ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান (অনুসন্ধানী পাঠ), ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান (অনুশীলন বই), স্বাস্থ্য সুরক্ষাজীবন ও জীবিকা বইগুলো যাচাই করে ফেসবুকে প্রচারিত দাবির সঙ্গে মিলে এমন কোনো পাঠ খুঁজে পাওয়া যায়নি।

ষষ্ঠ শ্রেণির ২০২৩ সালের বিভিন্ন বইয়ের সূচিপত্র

২০২৩ সালের পাশাপাশি রিউমর স্ক্যানার টিম পূর্ববর্তী সময়ের ষষ্ঠ শ্রেণির এই সংক্রান্ত বইগুলো খুঁজে দেখে৷ অনুসন্ধানে ষষ্ঠ শ্রেণির ২০২২ সালের বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বইয়ে ‘বাংলাদেশের জনসংখ্যা পরিচিত’ নামে একটি অধ্যায় খুঁজে পাওয়া যায়। 

ষষ্ঠ শ্রেণির ২০২২ সালের বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বইয়ের সূচিপত্র

এই অধ্যায়টি যাচাই করে দেখা যায়, এখানে জন্মহার নিয়ে আলোচনা থাকলেও এর সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিটির কোনো মিল নেই।

ষষ্ঠ শ্রেণির বইয়ের দাবিতে প্রচারিত ফেসবুক পোস্ট ও একই শ্রেণির ২০২২ সালের বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বই

পরবর্তীতে ষষ্ঠ শ্রেণির ২০২১, ২০২০, ২০১৯, ২০১৮২০১৭ সালের একই বই যাচাই করেও আলোচিত ছবিটির সঙ্গে কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ষষ্ঠ শ্রেণির বইয়ের দাবিতে প্রচারিত ছবিটি বিশ্লেষণ করেও এটিকে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কর্তৃক প্রদত্ত কোনো বই বলে রিউমর স্ক্যানারের বিশ্লেষণে প্রতীয়মান হয়নি।

তাহলে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া এই ছবিটি কোন বইয়ের?

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ষষ্ঠ শ্রেণির বইয়ের দাবিতে প্রচারিত এই ছবি সম্পর্কিত একটি পোস্টের কমেন্টবক্সে মিফতা লিজা নামে এক ফেসবুক ব্যবহারকারী জানান, তিনি এই বইটি অনার্সে পড়ছেন। 

ফেসবুক থেকে নেওয়া স্ক্রিনশট

এম আর রিয়াজ নামে একজন লিখেন, এটা ক্লাস সিক্সের বইয়ের না। আমি মাত্র পড়ে উঠলাম এটা। মজার ব্যাপার হল আমি নিজেও এটার মানে পয়েন্টটার ছবি তুলে রাখছি।…

ফেসবুক থেকে নেওয়া স্ক্রিনশট

তিনি আরও লিখেন, এটা অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের,  অর্থনীতি সহ আরো কয়েকটা ডিপার্টমেন্টের ‘বাংলাদেশের সমাজবিজ্ঞান’ বিষয়ের ‘বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ’ প্রশ্নটার উত্তর, তাও ব্যতিক্রম গাইডের।

পরবর্তীতে ওপেন সোর্স অনুসন্ধানের মাধ্যমে রিউমর স্ক্যানার টিম এই বইটি সংগ্রহ করে।

ব্যতিক্রম প্রকাশনীর হ্যান্ডনোট সিরিজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের বাংলাদেশের সমাজবিজ্ঞান বইয়ের প্রচ্ছদ 

বইটির ৮৫ নাম্বার পৃষ্ঠায় গ-বিভাগ রচনামূলক প্রশ্নাবলি ও উত্তর অংশে জনসংখ্যা সমস্যা সংক্রান্ত একটি প্রশ্নের উত্তরে আলোচিত অংশটি খুঁজে পাওয়া যায়। 

বাংলাদেশের সমাজবিজ্ঞান বইয়ের মূল ছবি

এই প্রশ্নের উত্তরটির সঙ্গে ষষ্ঠ শ্রেণির বইয়ের দাবিতে প্রচারিত ছবিটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

ষষ্ঠ শ্রেণির বইয়ের দাবিতে প্রচারিত ফেসবুক পোস্ট ও ব্যতিক্রম প্রকাশনীর হ্যান্ডনোট সিরিজের বাংলাদেশের সমাজবিজ্ঞান বইয়ের ছবি

অর্থাৎ, প্রচারিত ছবিটি ব্যতিক্রম প্রকাশনীর হ্যান্ডনোট সিরিজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের বাংলাদেশের সমাজবিজ্ঞান বইয়ের।

মূলত, সম্প্রতি জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বেকারত্বকে উল্লেখ করে জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে বেকারত্বের প্রভাব সম্পর্কিত আলোচনা সম্বলিত বইয়ের ছবিকে ফেসবুকে ষষ্ঠ শ্রেণির বইয়ের ছবি বলে দাবি করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে ২০২৩ সালে প্রদত্ত ষষ্ঠ শ্রেণির নতুন বই সহ বিগত বছরের বইয়ের পুরাতন সংস্করণেও দাবি সংশ্লিষ্ট এমন কোনো আলোচনা খুঁজে পাওয়া যায়নি। বরং অনুসন্ধানে দেখা যায়, ষষ্ঠ শ্রেণির বইয়ের দাবিতে প্রচারিত ছবিটি ব্যতিক্রম প্রকাশনীর হ্যান্ডনোট সিরিজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের বাংলাদেশের সমাজবিজ্ঞান বইয়ের। যা বাংলা, ইংরেজি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, অর্থনীতি, দর্শন, ইতিহাস, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য প্রণয়ন করা হয়েছে। 

সুতরাং, ব্যতিক্রম প্রকাশনীর হ্যান্ডনোট সিরিজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের বাংলাদেশের সমাজবিজ্ঞান বইয়ের ছবিকে ষষ্ঠ শ্রেণির দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র 

আরও পড়ুন

spot_img