সম্প্রতি শেখ হাসিনার যুক্তরাজ্যে লাইভে এসে বক্তব্য দেওয়ার দাবিটি মিথ্যা

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ০৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে আশ্রয় নেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটক ও ইউটিউবে সম্প্রতি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, সম্প্রতি শেখ হাসিনা যুক্তরাজ্যে গিয়ে লাইভে এসে বলেছেন, হাইকমিশনে ঢুকে জাতির পিতার ছবি নিয়ে অপমান করার এত বড় সাহস কোথায় পেল জানতে চাই।

উক্ত দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়া অবধি উক্ত ভিডিওটি ৫৪ লক্ষেরও অধিক বার দেখা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে টিকটকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়া অবধি উক্ত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি প্রায় ৭০ হাজার বার দেখা হয়েছে এবং প্রায় সাড়ে তিন হাজারেরও অধিক পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওটিতে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। 

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাজ্যে শেখ হাসিনার কোনো বক্তব্যের দৃশ্যের নয় বরং, প্রায় ৬ বছর আগের ২০১৮ সালের একটি বক্তব্যের দৃশ্য। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে প্রচারিত ভিডিওটির একাধিক কি-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে অনুসন্ধান করে ফেসবুকে albd.org নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে ২০১৮ সালের ২২ এপ্রিলে প্রচারিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির শেখ হাসিনার বক্তব্য, পোশাক, পারিপার্শ্বিক দৃশ্যের সাদৃশ্য পাওয়া যায়। ভিডিওটির ক্যাপশনে বলা হয়, শনিবার (২০১৮ সালের ২১ এপ্রিল) লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টারে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্যে বিএনপির কঠোর সমালোচনা করেছেন তিনি (শেখ হাসিনা)।

Comparison : Rumor Scanner

এরই সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে দৈনিক জনকণ্ঠের ওয়েবসাইটে “তারেককে দেশ ফেরত নেবই ॥ প্রধানমন্ত্রী” শিরোনামে ২০১৮ সালের ২২ এপ্রিলে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন পাওয়া যায়৷ উক্ত সংবাদ প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, স্বল্পোন্নত দেশ হতে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ায় শনিবার (২০১৮ সালের ২১ এপ্রিল) লন্ডনে স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় ওয়েস্ট মিনস্টারের সেন্টার হলে যুক্তরাজ্যে আওয়ামী লীগ আয়োজিত শেখ হাসিনাকে দেয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, “বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে বলেই তো হাইকমিশন হয়েছে। সেই হাইকমিশনে ঢুকে জাতির পিতার ছবি নিয়ে অপমান করেছে। এত সাহস কোথায় থেকে আমি জিজ্ঞেস করি। তারেক রহমানরা ভুলে গেছে তার মা-বাবাও বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলার অনেক চেষ্টা করেছে, কিন্তু পারেনি। তিনি বলেন, হামলার সময় আমি জানি না আমাদের হাইকমিশনে তখন কারা বসেছিল এবং তারা সেখানে কিছুই করতে পারল না কেন, সেটাও একটা বড় প্রশ্ন? ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, আমাদের প্রবাসী বাঙালীদের আমি বলব যারা এই ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে তারা চলাফেরা করে না? তাদের দেখেন না? যে হাত দিয়ে ঐ জাতির পিতার ছবি নিয়ে তারা ভেঙ্গেছে তাদের চেহারা চেনেন না? এদের যা করার করতে হবে। আর তারেক রহমান তো দূরের থাক তার বাপ-মাও শত চেষ্টা করেও বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলতে পারেনি। জাতির পিতার নাম মুছে ফেলা যাবে না।”

উপরোল্লিখিত বক্তব্যের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে শেখ হাসিনার বক্তব্যের সাদৃশ্য পাওয়া যায়। তাছাড়া, উক্ত অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনার এমন বক্তব্য দেওয়ার প্রমাণ ইরানভিত্তিক গণমাধ্যম পার্স টুডে’র বাংলা বিভাগে ২০১৮ সালের ২২ এপ্রিলে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও পাওয়া যায়।

পাশাপাশি, সেসময়ে শেখ হাসিনার যুক্তরাজ্য সফর এবং উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার বিষয়ে মূলধারার গণমাধ্যম প্রথম আলোজাগোনিউজ২৪ এর সূত্রেও নিশ্চিত হওয়া যায়।

উল্লেখ্য যে, ২০১৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারিতে লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশনে জোর করে ঢুকে ভাঙচুর করেছিলেন বিএনপির যুক্তরাজ্য শাখার নেতা-কর্মীরা। এবং একপর্যায়ে তারা সেখানে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবিও ভাঙচুর করেছিলেন দাবিতেও সংবাদমাধ্যমে সংবাদ প্রচার করা হয়েছিল। এরপর দেশ-বিদেশে নানা জায়গায় নানা সময়ে আওয়ামী নেতাকর্মী ও সমর্থকরা এর প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। মূলত সেসব ঘটনার প্রেক্ষাপটেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এরূপ মন্তব্য করেছিলেন।

তাছাড়া, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে সাম্প্রতিক সময়ে গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে যুক্তরাজ্যে শেখ হাসিনার এমন কোনো মন্তব্য বা বক্তব্য দেওয়ার সপক্ষে কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত শেখ হাসিনা গত ০৫ আগস্টের পর থেকে ভারতেই অবস্থান করছেন।

সুতরাং, সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাজ্যে লাইভে এসে শেখ হাসিনার বক্তব্য দিয়েছেন শীর্ষক দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img