প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে মির্জা ফখরুলের সহায়তা নেওয়ার দাবিতে ভাইরাল চেকটি ভুয়া 

সম্প্রতি ‘প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে চিকিৎসা সহায়তা নিয়ে বিদেশ ভ্রমণে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর’ শীর্ষক দাবিতে একটি ব্যাংক চেকের ছবি মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট  (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ)।

টিকটকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে মির্জা ফখরুলের চিকিৎসা সহায়তা নেওয়া সংক্রান্ত ভাইরাল চেকটি ভুয়া। প্রকৃতপক্ষে চেকটিতে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের ব্যাংক একাউন্টের নাম ও নাম্বারের মিল না থাকাসহ বেশ কিছু অসংগতি পাওয়া গেছে। এছাড়া চেকটি বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের প্রণোদনার একটি চেক থেকে সম্পাদনা করা হয়েছে।

দাবিটি নিয়ে অনুসন্ধানের শুরুতেই রিউমর স্ক্যানার টিম চেকটিতে প্রদত্ত তথ্যসমূহ যাচাই করে। এ যাচাইয়ের কাজে ওপেন সোর্স থেকে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গকে দেওয়া একাধিক চেকের সাহায্য নেওয়া হয়।

অসংগতি ১: প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের অ্যাকাউন্ট নাম এবং নাম্বার ভুল

‘মির্জা ফখরুল ৫০ লাখ টাকা চিকিৎসা সহায়তা নিয়েছেন’* দাবিতে ভাইরাল চেকটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সেখানে প্রদত্ত প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের অ্যাকাউন্ট নাম PM’s Relief Fund এবং অ্যাকাউন্ট নাম্বার দেওয়া 4435403007037। 

Image Analysis: Rumor Scanner 

অপরদিকে ওপেন সোর্সে পাওয়া প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের চেক বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের অ্যাকাউন্ট নাম PRODHAN MONTRIR TRAN O KALYAN TAHABIL এবং অ্যাকাউন্ট নাম্বার হলো 0107333004093

অর্থাৎ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মির্জা ফখরুলের চিকিৎসা সহায়তা নেওয়া সংক্রান্ত ভাইরাল চেকটিতে প্রদত্ত প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের অ্যাকাউন্ট নাম এবং নাম্বারটি ভুল।

অসংগতি ২: একই চেকে ভিন্ন ভিন্ন অ্যাকাউন্ট নাম্বার

অনুসন্ধানে দেখা যায়, মির্জা ফখরুলের চিকিৎসা সহায়তা নেওয়া সংক্রান্ত ভাইরাল চেকটির দুই জায়গায় অ্যাকাউন্ট নাম্বারের ভিন্নতা রয়েছে। 

Image Analysis: Rumor Scanner 

চেকটি বিশ্লেষণে দেখা যায়, এর একস্থানে অ্যাকাউন্ট নাম্বার রয়েছে 4435403007037। আবার এরই নিচে যে অ্যাকাউন্ট নাম্বারটি রয়েছে সেটি হলো 4435403000037। অর্থাৎ শেষ চার সংখ্যার এক জায়গায় লেখা ৭০৩৭, অন্য জায়গায় লেখা ০০৩৭। 

অসংগতি ৩: প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিবের সিল ও স্বাক্ষর

পাশাপাশি ওপেন সোর্সে পাওয়া প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের চেকগুলোতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিবের সিল ও স্বাক্ষর লক্ষ্য করা যায়, যা আলোচিত চেকটিতে অনুপস্থিত।

Image Analysis: Rumor Scanner 

অসংগতি ৪: চেকে উল্লিখিত ব্যাংকের শাখায় বিভ্রান্তি 

ভাইরাল চেকটিতে দেখা যায়, সেখানে সোনালি ব্যাংকের শাখা উল্লেখ করা হয়েছে তেজগাঁও শাখা, ঢাকা। তবে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যান তহবিলের প্রকৃত চেকগুলোতে সোনালি ব্যাংকের শাখা উল্লেখ করা আছে প্রাইম মিনিস্টার অফিস কর্পোরেট, ঢাকা।

Image Analysis: Rumor Scanner 

অসংগতি ৫: চেকে ভাষাগত অসংগতি 

চেকটি নিয়ে বিশ্লেষণে দেখা যায়, চেকটিতে সহায়তা গ্রহণকারীর নাম অর্থাৎ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নাম ও অর্থের পরিমাণ ইংরেজিতে উল্লেখ রয়েছে। 

Image Analysis: Rumor Scanner 

তবে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের প্রাপ্ত চেকগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সেখানে এই তথ্যগুলো বাংলায় উল্লেখ থাকে। 

প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের প্রকৃত আরও কিছু চেকের সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল চেকটির তুলনা দেখুন এখানে। 

Image Analysis: Rumor Scanner 

চেকটি আসলে কার?

রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে চলতি বছরের গত ২৪ মে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ওয়েবসাইটে ‘ঢাকা আইনজীবী সমিতিকে ছয় কোটি সত্তর লক্ষ পনের হাজার আটশত পঁচাত্তর টাকার আইনজীবী প্রণোদনার চেক প্রদানের মাধ্যমে বার কাউন্সিল হতে প্রণোদনা অর্থ বিতরণ শুরু হল‘ শীর্ষক শিরোনামে একটি বিজ্ঞপ্তি খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Bangladesh Bar Council

এই বিজ্ঞপ্তিতে ব্যবহৃত চেকের ছবিটির সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মির্জা ফখরুলের চিকিৎসা সহায়তা নেওয়া সংক্রান্ত ভাইরাল চেকটির অ্যাকাউন্ট নাম্বার, সিজি নাম্বার, স্বাক্ষরের হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়। 

Image Analysis: Rumor Scanner 

চেকটি সম্পর্কে সংশ্লিষ্টরা যা বলছে

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে সহায়তা নেওয়ার দাবিতে প্রচারিত চেকটির বিষয়ে জানতে রিউমর স্ক্যানার টিম বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবিরের সঙ্গে যোগাযোগ করে। 

এ প্রসঙ্গে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে বলেন, ‘চমৎকার, নোংরামি উদাহরণ।  এ ধরনের নোংরামি যারা করতে পারে তাদেরকে কোনো সভ্যতার মধ্যে উল্লেখ করা যাবে না। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অনেক ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ তার ব্যপারে অবান্তর কোনো গুজব ছড়ানোর আগে ভেবে চিন্তে করা উচিত। এ ধরনের মানুষদের বলবো গুজব ছড়ানো থেকে বিরত থাকবার জন্য।’

একই প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘এটা নোংরামি ছাড়া আর কিছু নয়। মির্জা ফখরুল বাপের জমি বিক্রি করে চিকিৎসা ও রাজনীতি করে। আমাকে কেনা সম্ভব নয়।’

Screenshot: Manabzamin 

এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইংয়ের সদস্য ডিপিএস হাসান জাহিদ তুষার গণমাধ্যমকে চেকটি অসত্য  বলে নিশ্চিত করেন। 

Screenshot: Bangla Tribune

মূলত, গত ২৪ আগস্ট বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর যান। তাঁর এ সিঙ্গাপুর যাত্রাকে ঘিরে ২৭ আগস্ট সন্ধ্যা থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি চেকের ছবি প্রচার করে দাবি করা হতে থাকে যে, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ৫০ লাখ টাকার  চিকিৎসা সহায়তা নিয়ে বিদেশ ভ্রমণে গিয়েছেন। তবে চেকটি নিয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ৫০ লাখ টাকা চিকিৎসা সহায়তা নিয়ে মির্জা ফখরুলের বিদেশ ভ্রমণ দাবিতে ভাইরাল এই চেকটি ভুয়া। প্রকৃতপক্ষে ইন্টারনেট থেকে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের প্রণোদনার চেক সম্পাদনা করে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এই সিঙ্গাপুর যাত্রা নিয়ে পূর্বেও গণমাধ্যমের ফটোকার্ড সম্পাদনা করে বিকৃত তথ্য প্রচার করা হয়েছিল। এ নিয়ে রিউমর স্ক্যানার টিমের বিস্তারিত অনুসন্ধান পড়ুন

সুতরাং, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ৫০ লাখ টাকা চিকিৎসা সহায়তা নিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিদেশ ভ্রমণে যাওয়ার দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত চেকটি ভুয়া এবং উল্লিখিত দাবিটি মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img