সজীব ওয়াজেদ জয়ের ১০ বিলিয়ন ডলারের মানি লন্ডারিংয়ের সন্ধান পাওয়ার তথ্যটি ভিত্তিহীন

সম্প্রতি ‘যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারী বিভাগের অফিস অব টেরোরিজম অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স যুক্তরাষ্ট্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের ১০ বিলিয়ন ডলারের মানি লন্ডারিংয়ের সন্ধান পেয়েছে’ শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ) এবং এখানে(আর্কাইভ)।  

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারী বিভাগের অফিস অব টেরোরিজম অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্সের দেশটিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের ১০ বিলিয়ন ডলারের মানি লন্ডারিংয়ের সন্ধান পাওয়ার দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারী বিভাগের ওয়েবসাইটের মানি লন্ডারিং বিষয়ক সেকশনে এরকম কোনো তথ্য উল্লেখ নেই। তথ্যপ্রমাণ ব্যতীত সূত্র উল্লেখ করে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীনভাবে উক্ত তথ্যটি প্রচার করা হচ্ছে।

তথ্যের সূত্রপাত, সূত্রের সন্ধান ও তথ্যের বিকৃতি

দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সজীব ওয়াজেদ জয়ের মানি লন্ডারিংয়ের বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত পোস্টগুলোতে তথ্যসূত্র হিসেবে ওয়ালিউল্লাহ নোমান নামে এক ব্যক্তিকে উদ্ধৃত করা হয়েছে।

Screenshot: Mo Rahman Masum Facebook Post

এই তথ্যসূত্র ধরে অনুসন্ধানে দেখা যায়, ওয়ালিউল্লাহ নোমান আমার দেশ ডট ইউকের বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন। তিনি গত ১৪ জুন তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ‘আমেরিকান গোয়েন্দাদের অনুসন্ধানে এক বাংলাদেশি কম্পিউটার বিজ্ঞানীর মাত্র ১০ বিলিয়ন মানি লন্ডারিং খুঁজে পেয়েছে! (আর্কাইভ)’ শীর্ষক একটি পোস্ট দেন।

Screenshot: Oliullah Noman Facebook Post

তবে তার এই পোস্টটির এডিট হিস্ট্রি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এই স্ট্যাটাসটি যখন দেওয়া হয়েছিল তখন ক্যাপশন ছিল, ‘আমেরিকান গোয়েন্দাদের অনুসন্ধানে এক বাংলাদেশি কম্পিউটার বিজ্ঞানীর মাত্র ১০ বিলিয়ন মানি লন্ডারিং খুঁজে পেয়েছে! মামলা প্রস্তুতি চলমান-‘

Screenshot: Oliullah Noman Facebook Post

অর্থাৎ পূর্বের স্ট্যাটাসে তিনি মামলার প্রস্তুতি চলমান উল্লেখ করলেও পরে সম্পাদনা করে স্ট্যাটাসটি থেকে এই অংশটুকু মুছে ফেলেন।

অপরদিকে তথ্যটির সূত্রের অনুসন্ধানে ওয়ালিউল্লাহ নোমানের স্ট্যাটাসটিতে অনেকেই উক্ত দাবির সূত্র চেয়ে মন্তব্য করলে তার বিপরীতে তিনি যে উত্তর দেন সেগুলো থেকে তার দাবির পক্ষে কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি।

Image Collage: Rumor Scanner

যেমন, কাজী হেমায়েত উদ্দিন মিশন নামে জনৈক ব্যক্তির এক মন্তব্যের প্রেক্ষিতে ওয়ালিউল্লাহ নোমান লিখেন, ‘এটা আমার কাছে একেবারেই প্রাথমিক ইনফরমেশন। ডকুমেন্টস হাতে পেলে বিস্তারিত জানাতে পারবো ইনশাল্লাহ।’

সূত্র চেয়ে আরেফিন রঞ্জু নামে এক ব্যক্তির মন্তব্যের প্রেক্ষিতে তিনি লিখেন, ‘দয়া করে আমাকে অবিশ্বাস করুন!’ অম্বল ঠাকুর নামে এক ব্যক্তির মন্তব্যে তিনি লিখেন, ‘ দয়া করে আমাকে অবিশ্বাস করুন। ফালতু তর্কে আমি পছন্দ করি না। অথবা unfriend করে ত্যাগ করতে পারেন।’

একইভাবে ইকবাল হোসাইন নামে এক ব্যক্তির মন্তব্যে তিনি নির্ভরযোগ্য প্রমাণ ছাড়া কোনো তথ্য প্রচার করেন না-এমন একটি মন্তব্য করেন।

অর্থাৎ স্ট্যাটাসটিতে তিনি কম্পিউটার বিজ্ঞানীর পরিচয় ও কোনো সংস্থার নাম ও সূত্র উল্লেখ করেননি। পাশাপাশি তিনি জানান, এটি তার কাছে থাকা একটি প্রাথমিক তথ্য এবং এর কোনো ডকুমেন্টস বা নথি তার কাছে নেই।

অপরদিকে তার সূত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত পোস্টগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, কম্পিউটার বিজ্ঞানী হিসেবে সজীব ওয়াজেদ জয় ও যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারী বিভাগের অফিস অব টেরোরিজম অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে সূত্র হিসেবে জুড়ে দেওয়া হয়েছে।

Image Collage: Rumor Scanner

উল্লেখ্য, ওয়ালিউল্লাহ নোমানের স্ট্যাটাসের পর তার তথ্যটিকেই আরও বিস্তৃত করে এর সঙ্গে সজীব ওয়াজেদ জয় ও যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারী বিভাগের অফিস অব টেরোরিজম অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে সূত্র হিসেবে জুড়ে প্রথম পোস্ট দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশি Mo Rahman Masum।

তার ফেসবুক পেইজেই গত ১৬ জুন ‘সজীব ওয়াজেদ জয় সাহেবের আপডেট. জামাত ইসলামের আঁতাত! (আর্কাইভ)’ শীর্ষক একটি লাইভ ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Mo Rahman Masum  Facebook Post

ভিডিওটির ৭ মিনিট ২৯ সেকেন্ডে তিনি বলেন, ‘সজীব ওয়াজেদ জয় সাহেবের মানি লন্ডারিংয়ের ইনভেস্টিগেশন চলছে এবং এটা ক্লাস্টিফাইড ডকুমেন্টস, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে। এগুলা কেউ বেরও করতে পারবে না, কথাও বলতে পারবে না। কারণ, করলেই এটা যুক্তরাষ্ট্রের আইন বিরোধী হয়।’

রহমান মাসুমের লাইভে দেওয়া এই বক্তব্যের সাথে তার পূর্বের দেওয়া স্ট্যাটাসটি সাংঘর্ষিক। কারণ, তিনি সেখানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারী বিভাগের অফিস অব টেরোরিজম অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে ডকুমেন্টস হিসেবে দেখিয়েছেন, তার দাবি মতে যা কারো পক্ষে বের করা সম্ভব না। আবার একই বিষয়ে ফেসবুক লাইভও করছেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের আইন বিরোধী।

সজীব ওয়াজেদ জয়ের মানি লন্ডারিংয়ের বিষয়ে তথ্যের সূত্রপাত, সূত্রের সন্ধান নিয়ে রিউমর স্ক্যানার টিমের এই পর্যন্ত অনুসন্ধানে প্রতীয়মান হয় যে, সজীব ওয়াজেদ জয়ের মানি লন্ডারিংয়ের বিষয়টি নিয়ে তথ্যের সূত্রপাতকারী প্রথমে কোনো ডকুমেন্টস ছাড়া ও ব্যক্তি বিশেষ ও সংস্থার নাম উল্লেখ ব্যতীতই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন৷

এছাড়া পোস্টের প্রথমে এই নিয়ে মামলার প্রস্তুতি চলমান আছে বলে দাবি করলেও পরবর্তীতে তিনি তার পোস্ট থেকে এই অংশটি মুছে দেন। পরবর্তীতে তার সংশোধিত পোস্টটিকেই আরও বিস্তৃত করে এর সঙ্গে সজীব ওয়াজেদ জয় ও যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারী বিভাগের অফিস অব টেরোরিজম অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে জুড়ে দিয়ে ফেসবুকে প্রচার করা হয়।

আমার দেশ ডট ইউকের অসম্পূর্ণ ও মিথ্যা তথ্যে ভরা প্রতিবেদন যখন সূত্রপাতকারীর প্রাথমিক তথ্য

সজীব ওয়াজেদ জয়ের মানি লন্ডারিংয়ের দাবির বিষয়ে রিউমর স্ক্যানার টিমের আরও অধিকতর অনুসন্ধানে উক্ত দাবিটির সূত্রপাতকারী ওয়ালিউল্লাহ নোমানের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ১৬ জুন ‘গতকাল একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম। এটা নিয়ে অনেকেরই অনেক রকম প্রশ্ন। কিন্তু এর আগে ৬ জুন আমার দেশ অনলাইন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলাম আমরা। এখানে তার বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়ার তথ্য দেওয়া হয়েছিল। (আর্কাইভ)’ শীর্ষক একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Oliullah Noman Facebook Post

পোস্টটিতে তিনি এর আগে ১৫ জুন (১৪ জুন প্রথম প্রকাশ, ১৫ জুন এডিট করে প্রকাশিত) দেওয়া সজীব ওয়াজেদ জয়ের মানি লন্ডারিংয়ের পোস্টটির প্রাথমিক তথ্য হিসেবে লন্ডন থেকে প্রকাশিত আমার দেশ ডট ইউকে নামের একটি পত্রিকায় গত ৬ জুন ‘লাপাত্তা সজীব ওয়াজেদ জয়‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনকে উদ্ধৃত করেন।

Screenshot: amar desh UK

উক্ত প্রতিবেদনটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রতিবেদনটিতে অজ্ঞাত সূত্র উল্লেখ করে দাবি করা হয়, আমেরিকান গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সজীব ওয়াজেদ জয়কে কেন্দ্র করে একটি মামলার আসামী পক্ষের আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ করেছিলেন এবং তার কাছে জানতে চেয়েছিলেন তাদের কাছে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সম্পদ ও মানি লন্ডারিং নিয়ে আরো কী কী তথ্য আছে।

Screenshot: amar desh UK

তবে প্রতিবেদনটিকে ওয়ালিউল্লাহ নোমান তার সজীব ওয়াজেদ জয়ের মানি লন্ডারিং নিয়ে পোস্টটির প্রাথমিক সূত্র হিসেবে উল্লেখ করলেও উক্ত প্রতিবেদনটিতে সজীব ওয়াজেদ জয়ের কোন মামলা, আমেরিকার কোন গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত করছে এসব বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই।

এছাড়া প্রতিবেদনটি বিশ্লেষণ করে আরও দেখা যায়, প্রতিবেদনটির শুরুতেই দাবি করা হয়েছে যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক আমেরিকা সফরে সজীব ওয়াজেদ জয়কে দেখা যায়নি।

Screenshot: amar desh UK

তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক আমেরিকা সফরকালে সজীব ওয়াজেদ জয়কে দেশটিতে দেখতে না পাওয়ার দাবিটি মিথ্যা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার  সাম্প্রতিক যুক্তরাষ্ট্র সফরকালেই গত ২ মে ওয়াশিংটনে ইউএস চেম্বার অব কমার্সের এক অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনাকালে সজীব ওয়াজেদ জয়ের উপস্থিতি দেখা যায়।

Screenshot: Somoy TV Youtube 

এ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন ‘ডিজিটাল বাংলাদেশে দূর্নীতির কোনো সুযোগ নেই: সজীব ওয়াজেদ জয় (আর্কাইভ)।’

এছাড়া ইতোপূর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে সজীব ওয়াজেদ জয়ের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ ও অবস্থান নিয়ে গুজব ছড়িয়ে পড়লে সেটি নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল রিউমর স্ক্যানার টিম। 

রিউমর স্ক্যানার টিমের এ প্রসঙ্গে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনটি পড়ুন ‘সজীব ওয়াজেদ জয়কে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা।’

অর্থাৎ সজীব ওয়াজেদ জয়ের মানি লন্ডারিংয়ের বিষয়ে তথ্যের সূত্রপাতকারী তার প্রাথমিক তথ্য হিসেবে সে সূত্র দিয়েছেন সেখানেও কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই এবং সূত্রটিতে মিথ্যা তথ্যের উপস্থিতি বিদ্যমান।  

দৈনিক যুগান্তরের একটি সংবাদ, সজীব ওয়াজেদ জয় ও নাগরিক টিভি (কানাডা)

সজীব ওয়াজেদ জয়ের মানি লন্ডারিংয়ের বিষয়ে অনুসন্ধানের এ পর্যায়ে রিউমর স্ক্যানার টিম গত ১৫ জুন কানাডা থেকে পরিচালিত নাগরিক টিভি নামের একটি ফেসবুক পেইজে ‘সজীব ওয়াজেদ জয়: দি টেন বিলিয়ন ডলার ম্যান? (আর্কাইভ)’ শীর্ষক একটি ফেসবুক পোস্ট খুঁজে পায়।

Screenshot: Nagorik TV Facebook Post

পোস্টটিতে সজীব ওয়াজেদ জয়ের ছবির পাশে বাংলাদেশের মূলধারার জাতীয় দৈনিক যুগান্তরের চলতি বছরের গত ৩ মে ‘সরকারের কাছে ব্যাখ্যা চায় আইএমএফ’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট জুড়ে দিয়ে তৈরি ব্যানারে প্রশ্ন তোলা হয়, ‘জয়ের সাড়ে দশ বিলিয়ন ডলারের খোঁজ পাওয়া গেছে?’ যদিও এই প্রশ্নের উত্তরে ব্যানারটিতে উল্লেখিত বিস্তারিত বিবরণীতে যুগান্তরের এই প্রতিবেদনের সাথে জয়ের সম্পর্ককে একটি সম্ভাবনা হিসেবেই ব্যাখ্যা করা ছাড়া এর সাথে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে আর কোনো তথ্যের উল্লেখ পাওয়া যায়নি।

পরবর্তীতে রিউমর স্ক্যানার টিম যুগান্তরের উক্ত প্রতিবেদনটি বিশ্লেষণ করে দেখে। 

Screenshot: Daily Jugantor

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি বিভিন্ন রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের অন্তত ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আটকে আছে। সম্প্রতি বাণিজ্য সচিবের সঙ্গে এক বৈঠকে ঢাকায় সফরে আসা আইএমএফের প্রতিনিধিদল এই ডলার বাংলাদেশ কেন ফেরত আনছে না তা জানতে চায়।

Screenshot: Daily Jugantor

এই প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ তাদের বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ব্যাংকে আটকে থাকা বাংলাদেশিদের ওই অর্থ ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট সব ব্যাংককে এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছে। বিশেষ করে যেসব ব্যাংকের মাধ্যমে এলসি করেছিল রপ্তানিকারক ওইসব প্রতিষ্ঠান।

অর্থাৎ প্রতিবেদনটি থেকে জানা যাচ্ছে, বিদেশের বিভিন্ন ব্যাংকে আটকে থাকা এই ডলার মূলত বিভিন্ন রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের। বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে এই ডলার ফেরত আনার নির্দেশ দিয়েছে। তবে এই প্রতিবেদনের সাথে সজীব ওয়াজেদ জয়ের কোনো সংশ্লিষ্টতা রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

অর্থাৎ বিদেশের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের অন্তত ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আটকে থাকা প্রসঙ্গে আইএমএফের জানতে চাওয়া নিয়ে যুগান্তরের একটি প্রতিবেদনের সাথে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীনভাবে সজীব ওয়াজেদ জয়কে জুড়ে দেওয়া হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারী বিভাগের অফিস অব টেরোরিজম অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ডাটা থেকে যা জানা যাচ্ছে

অনুসন্ধানের শেষ ধাপে রিউমর স্ক্যানার টিম ফেসবুকে প্রচারিত পোস্টগুলো সূত্র যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারী বিভাগের অফিস অফ টেরোরিজম এন্ড ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ওয়েবসাইটে সজীব ওয়াজেদ জয়ের মানি লন্ডারিংয়ের বিষয়ে কোনো তথ্য আছে কিনা তা নিয়ে যাচাই করে। 

অনুসন্ধানে ট্রেজারী বিভাগের অফিস অফ টেরোরিজম এন্ড ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ওয়েবসাইটে মানি লন্ডারিং বিষয়ে ঘুরে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি চলতি বছরের গত মার্চে মানি লন্ডারিংয়ের বিষয়ে সবশেষ হালনাগাদ করেছে। এর বাইরে সাম্প্রতিক সময়ে আর কোনো তথ্য বা সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

Screenshot: U.S. Department of Treasury

এছাড়া ট্রেজারী বিভাগের ওয়েবসাইটেও সংশ্লিষ্ট কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানেও সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

Screenshot: U.S. Department of Treasury

ফেসবুকে প্রচারিত পোস্টগুলোতে সূত্র হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারী বিভাগের অফিস অফ টেরোরিজম এন্ড ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে উল্লেখ করলেও তাদের ওয়েবসাইটে সজীব ওয়াজেদ জয়কে নিয়ে কোনো তথ্যই খুঁজে পাওয়া যায়নি।

অর্থাৎ বিদেশের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের অন্তত ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আটকে থাকা প্রসঙ্গে আইএমএফের জানতে চাওয়া নিয়ে যুগান্তরের একটি প্রতিবেদনের সাথে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীনভাবে সজীব ওয়াজেদ জয়কে জুড়ে দেওয়া হয়েছে।

মূলত, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের যুক্তরাষ্ট্রে ১০ বিলিয়ন ডলারের মানি লন্ডারিংয়ের  সন্ধান পেয়েছে মার্কিন ট্রেজারী বিভাগের অফিস অফ টেরোরিজম এন্ড ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স শীর্ষক একটি দাবি ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা যায়, দাবিটি সর্বপ্রথম কোনো সুনির্দিষ্ট ব্যক্তির নাম ও সংস্থার নাম উল্লেখ ব্যতীত প্রচার হয় এবং পরবর্তীতে এটি পরিবর্তন করে সজীব ওয়াজেদ জয় ও ট্রেজারী বিভাগের নাম জুড়ে দেওয়া হয়। তবে এসব সূত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, কোনো ধরনের সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ ছাড়াই এসব সূত্রগুলো ব্যবহার করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ১৪ জুন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার বরাতে ‘মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে তারেক-জোবায়দা দম্পতি লন্ডনে গ্রেফতার’ শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দাবিটি গুজব বলে প্রতীয়মান হয়। এ নিয়ে রিউমর স্ক্যানার টিমের প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন ‘মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে তারেক-জোবায়দা দম্পতির লন্ডনে গ্রেফতার হওয়ার বিষয়টি গুজব।’

সুতরাং, যুক্তরাষ্ট্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের ১০ বিলিয়ন ডলারের মানি লন্ডারিংয়ের সন্ধান পাওয়ার দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img