২০১৮ ফুটবল বিশ্বকাপ নিয়ে টি-স্পোর্টসের বিভ্রান্তিকর তথ্য

সম্প্রতি “বিশ্বের প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা ম্যাচ দেখেছিল বলে বিশাল সংখ্যা রেকর্ড করা হয়েছিল সেদিন” শীর্ষক শিরোনামে একটি দাবি টি-স্পোর্টসের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। 

যা দাবি করা হচ্ছে

গত ২৫ অক্টোবর মূলধারার গণমাধ্যম ‘T Sports’ এর অফিশিয়াল ফেসবুকে পেজ থেকে প্রকাশিত একটি পোস্টের (আর্কাইভ) ক্যাপশনে লেখা হয়, “বিশ্বের প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা ম্যাচ দেখেছিল বলে বিশাল সংখ্যা রেকর্ড করা হয়েছিল সেদিন। এই সংখ্যার মধ্যে এমন লোক রয়েছে যারা ঘরে বসে, বাড়ির বাইরে বা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে টিভিতে ম্যাচটি দেখেছিলেন।” 

ক্যাপশনে ‘সেদিন’ বলতে কোনদিন বোঝানো হয়েছে পোস্টে তা স্পষ্ট করা হয়নি। 

পোস্টের সাথে সংযুক্ত ডিজিটাল ব্যানারটিতে বলা হয়েছে, “২০১৮ সালে বিশ্বকাপের ২১ তম আসরে ৩.২ বিলিয়ন (৩২০ কোটি) মানুষ এক সাথে খেলা দেখেছিল।”

একই দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০১৮ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ ৩.২ বিলিয়ন দর্শক দেখার দাবিটি সঠিক নয় বরং উক্ত আসরে ৩.৫৭২ বিলিয়ন দর্শক বিভিন্ন মাধ্যমে খেলা দেখেছে।

কি-ওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতির মাধ্যমে বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজক সংস্থা ‘FIFA’ এর ওয়েবসাইটে “More than half the world watched record-breaking 2018 World Cup” শিরোনামে ২০১৮ সালের ২১ ডিসেম্বর প্রকাশিত একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি খুঁজে পাওয়া যায়। 

বিজ্ঞপ্তিতে ফিফা জানায়, অফিশিয়াল ব্রডকাস্ট কাভারেজ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ ফুটবল বিশ্বকাপ দেখেছে চার বছর বা তার বেশি বয়সী ৩.৫৭২ বিলিয়ন মানুষ (৩৫৭ কোটি ২০ লাখ)। এই সংখ্যার অন্তর্ভুক্ত ছিলেন যারা বাসায় বসে, বাসার বাইরে এবং ডিজিটাল প্লাটফর্মগুলোয় খেলা দেখেছেন। 

এর মধ্যে ৩.২৬২ বিলিয়ন দর্শক টিভি পর্দায় এবং ৩০৯.৭ মিলিয়ন দর্শক ঘরের বাইরে (পাবলিক এলাকা, রেস্টুরেন্ট, বার) এবং ডিজিটাল প্লাটফর্মে খেলাগুলো উপভোগ করেছেন। 

অর্থাৎ, টি-স্পোর্টস কর্তৃক প্রকাশিত পোস্টের ক্যাপশনে কোনো একটি নির্দিষ্ট ম্যাচের কথা বলা হলেও সংযুক্ত ছবিতে টি-স্পোর্টস পুরো আসরের দর্শক সংখ্যার তথ্য দিয়েছে এবং সেই তথ্যেও ভুল রয়েছে।

পরিসংখ্যান কী জানাচ্ছে?

২০১৮ সালের বিশ্বকাপ আসরে সর্বমোট ৬৪ টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ফিফা বলছে, প্রতিটি ম্যাচ গড়ে ১৯১ মিলিয়ন দর্শক উপভোগ করেছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উক্ত আসরে গড়পড়তা ঘরে বসে টিভিতে দর্শকরা আগের ফিফা বিশ্বকাপের (২০১৪ ব্রাজিল) তুলনায় বেশি সময় ধরে খেলা দেখেছে। ২০১৮ এর আসরে অন্তত তিন মিনিট খেলা দেখেছে এমন দর্শকের সংখ্যা ছিল ৩.০৪ বিলিয়ন, যা ব্রাজিল বিশ্বকাপের তুলনায় ১০.৯ শতাংশ বেশি। তাছাড়া, অন্তত, ৩০ মিনিট খেলা দেখেছে এমন দর্শকের সংখ্যা ছিল ২.৪৯ বিলিয়ন, ২০১৪ সালে যা ছিল ১.৯৫ বিলিয়ন।

পুরো বিশ্বকাপ দেখতে দর্শকরা ব্যয় করেছেন ৩৪.৭ বিলিয়ন ঘন্টা। আসরটি সবচেয়ে বেশি দর্শক দেখেছে এশিয়া মহাদেশ থেকে (৪৩.৭ শতাংশ)। 

কোন ম্যাচ সবচেয়ে বেশি দর্শক দেখেছে?

ফিফা বলছে, ২০১৮ সালের ফুটবল বিশ্বকাপে ফ্রান্স ও ক্রোয়েশিয়ার মধ্যকার ১৫ জুলাইয়ের ফাইনাল ম্যাচটি সবচেয়ে বেশি ৫১৬.৬ মিলিয়ন দর্শক (গড় হিসাব) ঘরে বসে সরাসরি কাভারেজ উপভোগ করেছে। ম্যাচটির সরাসরি কাভারেজ অন্তত এক মিনিট দেখেছে এমন দর্শকের সংখ্যা ১.১২ বিলিয়ন। 

সবচেয়ে বেশি দর্শক দেখেছে এমন ম্যাচগুলোর তালিকায় ২য় অবস্থানে আছে ক্রোয়েশিয়া-ইংল্যান্ড সেমিফাইনাল (৩২৭.৫ মিলিয়ন), ৩য় অবস্থানে আছে ফ্রান্স-বেলজিয়াম সেমিফাইনাল (৩১৪.৬ মিলিয়ন)। 

কীভাবে পাওয়া গেল এই হিসাব?

ফিফা জানিয়েছে, ২০১৮ সালের বিশ্বকাপ ফুটবলের দর্শক পরিসংখ্যান প্রস্তুত করা হয়েছে ফিফার মিডিয়া রাইট লাইসেন্সের (MRLs) মাধ্যমে। বাজারে থাকা অফিশিয়াল টেলিভিশন অডিটিং এজেন্সির মাধ্যমে পাবলিক মিডিয়া স্পোর্ট ও এন্টারটেইনমেন্টের উৎস থেকে পরিসংখ্যানের সিংহভাগ তথ্যগুলো পেয়েছে সংস্থাটি। 

মূলত, ২০১৪ সালের ফুটবল বিশ্বকাপের ম্যাচগুলো সর্বমোট ৩.৫৭২ বিলিয়ন দর্শক ঘরে বসে টিভিতে, ঘরের বাইরে এবং ডিজিটাল প্লাটফর্মে উপভোগ করে। এর মধ্যে ৩.২৬২ বিলিয়ন দর্শক ঘরে বসে টিভি পর্দায় দেখেছে বিশ্বকাপ। কিন্তু উক্ত আসরে ৩.২ বিলিয়ন মানুষ এক সাথে খেলা দেখেছে দাবি করে টি-স্পোর্টসের মাধ্যমে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে, যা বিভ্রান্তিকর। তাছাড়া ‘বিশ্বের প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা ম্যাচ দেখেছিল বলে বিশাল সংখ্যা রেকর্ড করা হয়েছিল সেদিন’ এমন তথ্য ক্যাপশনে থাকলে ‘কোনদিন’ তা স্পষ্ট করা হয়নি টি-স্পোর্টসের পোস্টে। 

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ১৪ জুন থেকে ১৫ জুলাই রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত হয় ফিফা বিশ্বকাপ। ফাইনালে ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়ে আসরের চ্যাম্পিয়ন হয় ফ্রান্স। 

প্রসঙ্গত, আগামী ২০ নভেম্বর কাতারে বসছে ফিফা বিশ্বকাপের ২২ তম আসর। 

সুতরাং, ২০১৮ ফুটবল বিশ্বকাপ নিয়ে টি-স্পোর্টসের তথ্যগুলো বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img