ভারতীয় যাত্রীবাহী বিমান সমুদ্রে তলিয়ে যাওয়ার দাবিতে এআই ভিডিও প্রচার 

সম্প্রতি অনলাইনে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে যেখানে চারপাশে পানির মধ্যে কথিত এক বিমানের ভেতর হিন্দি ভাষায় এক নারীকে বলতে শোনা যায়, ‘জানি না বিমান কোন সমুদ্রের মধ্যে ক্র্যাশ (দুর্ঘটনার শিকার) করেছে। কেউ যদি এই ভিডিওটি দেখছেন তাহলে প্লিজ সব জায়গায় শেয়ার করে দাও।’ উক্ত ভিডিওটি ভারতীয় যাত্রীদের নিয়ে সমুদ্রে বিমানের তলিয়ে যাওয়ার আসল ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

এই দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

একই দাবিতে টিকটকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ইউটিউবে প্রচারিত দাবি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত দাবি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি ভারতীয় যাত্রীদের নিয়ে সমুদ্রে বিমানের তলিয়ে যাওয়ার আসল ভিডিও নয় বরং, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে তৈরি ভুয়া এই ভিডিওকে আসল দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির একাধিক কি-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স সার্চ করলে দেশি বা বিদেশি (বিশেষত ভারতীয়) মূলধারার গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে আলোচিত ভিডিওটি আসল হওয়ার সপক্ষে কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। প্রকৃতপক্ষে এভাবে কোনো বিমান দুর্ঘটনা হলে ও যাত্রীদের ধারণকৃত এরূপ কোনো আসল ভিডিও থাকলে তা দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে ব্যপকভাবে প্রচার করা হতো।

তাছাড়া, প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণে পানি ও বিমানের ভেতরের মানুষের নড়াচড়া, বিমানের পরিস্থিতি ও পারিপার্শ্বিক অবস্থাতেও অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয়, যা সাধারণত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির সাহায্যে তৈরি ভিডিওতে দেখা যায়।

ভিডিওটি আরও পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, এতে ‘Sora’ লেখা একটি জলছাপ রয়েছে। ‘সোরা’ হলো যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও চ্যাটজিপিটির মালিকানাধীন কোম্পানি ওপেনএআইয়ের তৈরি ভিডিও এবং অডিও জেনারেশন মডেল। এই মডেলটি বাস্তবসম্মত, শারীরিকভাবে সঠিক এবং শব্দসমন্বিত দৃশ্য তৈরি করতে সক্ষম। ২০২৪ সালের মূল সোরা মডেলের ভিত্তিতে তৈরি উন্নত সংস্করণ ‘সোরা ২’ ২০২৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর প্রকাশ করা হয়।

Collage : Rumor Scanner/Hive Moderation, DeepFake-O-Meter

এ বিষয়ে অধিকতর নিশ্চিত হতে এআই ও ডিপফেক কনটেন্ট শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্ম ‘ডিপফেক ও মিটার’ এ আলোচিত ভিডিওটি বিশ্লেষণ করলে এটি ভুয়া হওয়ার সম্ভাবনা বেশি দেখা যায়। প্ল্যাটফর্মটির ‘AVSRDD’ ডিটেক্টরের বিশ্লেষণমতে ভিডিওটি ভুয়া বা এআই তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ১০০ শতাংশ। এছাড়াও, এআই কনটেন্ট শনাক্তকারী আরেক প্ল্যাটফর্ম ‘হাইভ মডারেশন’ এ আলোচিত ভিডিওটি বিশ্লেষণ করলে এটি এআই দিয়ে তৈরি কনটেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৯৯.৯ শতাংশ বলে জানা যায়।

এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে প্রচারিত ভিডিওটি মূলত এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির সাহায্যে তৈরি করা হয়েছে।

সুতরাং, এআই দিয়ে তৈরি ভিডিওকে ভারতীয় যাত্রীদের নিয়ে সমুদ্রে বিমানের তলিয়ে যাওয়ার আসল ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img