সম্প্রতি, “এইমাত্র পদত্যাগ করলেন ডঃইউনুস! সেনাপ্রধানের হাত থেকে ক্ষমতা নিল শেখ হাসিনা” শীর্ষক ক্যাপশনে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে টিকটকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
উক্ত প্রতিবেদন প্রকাশ অবধি ভিডিওটি প্রায় ৮৩ হাজারবার দেখা হয়েছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগ করেননি এবং শেখ হাসিনাও ক্ষমতা গ্রহণ করেননি। প্রকৃতপক্ষে, ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ভিডিও যুক্ত করে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
ভিডিও যাচাই ১
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল জাজিরার ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ৮ মার্চ ‘Sheikh Hasina Bangladesh Prime Minister interviewed by Al Jazeera’ শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর মিল রয়েছে।

উক্ত ভিডিওর বিবরণী থেকে জানা যায়, সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা ইস্যুতে কথা বলেন।
অর্থাৎ, ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়।
ভিডিও যাচাই ২
এই বিষয়ে অনুসন্ধানে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের ফেসবুক পেজ পর্যবেক্ষণ করে ২০২৪ সালের ১০ আগস্ট ‘প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ’ শীর্ষক শিরোনামে ভিন্ন ফ্রেমের একটি ভিডিও পাওয়া যায়। এই ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর মিল রয়েছে।

ভিডিওটিতে সাবেক প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের পদত্যাগের কথা জানিয়েছিলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল।
উল্লেখ্য, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আল্টিমেটামের মুখে ২০২৪ সালের ১০ আগস্ট সাবেক প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান পদত্যাগ করেন।
অর্থাৎ, ভিডিওটি ড. ইউনূসের পদত্যাগ সম্পর্কিত নয়।
ভিডিও যাচাই ৩
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম যমুনা টিভির ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট ‘আমার কথা না শুনলে, আমার কোনো প্রয়োজন এখানে নাই: ড. ইউনূস’ শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর ৮ মিনিট ১২ সেকেন্ড অংশ থেকে ৮ মিনিট ১৯ সেকেন্ড অংশের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর মিল রয়েছে।

এ বিষয়ে আরো অনুসন্ধান করে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সেদিন ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস থেকে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে স্বাগত জানায় সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, অন্য দুই বাহিনীর প্রধান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। এরপর তিনি বিমানবন্দরে অপেক্ষমাণ গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বলেন, ‘এটা যদি আমি করতে না পারি, আমার কথা যদি না শোনেন আপনারা, তাহলে আমার প্রয়োজন এখানে নাই। আমাকে বিদায় দেন। আমি আমার কাজে থাকি, সেখানেই ব্যস্ত থাকি। যদি আমাকে প্রয়োজন মনে করেন, তাহলে আপনাদেরকে দেখাতে হবে যে আমার কথা আপনারা শোনেন। আমার কথা না শুনলে, আমার কোনো প্রয়োজন নাই।’
অর্থাৎ, ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ে ড. ইউনূসের পদত্যাগ সম্পর্কিত নয়।
ভিডিও যাচাই ৪
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম এনটিভির ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৬ আগস্ট ‘শপথ নিলেন হাইকোর্টের নতুন ২৫ বিচারপতি’ শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর ১৮ সেকেন্ড অংশ থেকে ২১ সেকেন্ড অংশের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর মিল রয়েছে।

এ বিষয়ে আরো অনুসন্ধান করে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে গত ২৬ আগস্ট প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সেদিন সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে নিয়োগ পাওয়া ২৫ জন অতিরিক্ত বিচারক শপথ নিয়েছেন। সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ নতুন বিচারকদের শপথ পাঠ করান। শপথ অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার (বিচার) মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন।
অর্থাৎ, ড. ইউনূসের পদত্যাগ কিংবা শেখ হাসিনার ক্ষমতা গ্রহণের সাথে উক্ত ভিডিওর কোনো সম্পর্ক নেই।
তাছাড়া, কিওয়ার্ড সার্চ করে আলোচিত দাবিটির বিষয়ে বিশ্বস্ত সূত্রে কোনো তথ্য মেলেনি।
সুতরাং, ড. ইউনূসের পদত্যাগে সেনাপ্রধানের হাত থেকে শেখ হাসিনার ক্ষমতা গ্রহণের দাবিটি মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Dr. Asif Nazrul: প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ
- Jamuna TV – আমার কথা না শুনলে, আমার কোনো প্রয়োজন এখানে নাই: ড. ইউনূস
- NTV News – শপথ নিলেন হাইকোর্টের নতুন ২৫ বিচারপতি