ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ কমপ্লেক্স ভবনে গত ১৮ অক্টোবর ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ১৩টি ফায়ার স্টেশনের ৩৭টি ইউনিটের প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্সের একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, ‘বিমানবন্দর থেকে লা/শ নিয়ে বের হচ্ছে একের’পর-এক অ্যাম্বুলেন্স।রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো সেকশনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে প্রবাসীদের ফেরত আনা একাধিক মরদেহ সম্পূর্ণভাবে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ফায়ার সার্ভিসের বেশ কয়েকটি ইউনিট টানা কয়েক ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও তখন পর্যন্ত মূল্যবান কার্গোসহ প্রবাসীদের কফিনে রাখা লাশগুলো রক্ষা করা সম্ভব হয়নি।’

এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
এছাড়াও, আরেকটি ভিডিও প্রচার করে ক্যাপশনে দাবি করা হয়েছে, ‘৬/৭ দিন পরে লা’শ দেশে আসলো!বাড়িতে পৌঁছার আগেই বিমানবন্দরে পু’ড়ে ছা’ই’।
এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওগুলো সাম্প্রতিক সময়ের ঢাকার বিমানবন্দর এলাকায় আগুনের সাথে সংশ্লিষ্ট নয় এবং প্রদর্শিত মরদেহের কফিনগুলো ঢাকার বিমানবন্দরের আগুনে দগ্ধ হয়নি৷ প্রকৃতপক্ষে, ভিডিওটিতে প্রদর্শিত মরদেহগুলো গত ৮ অক্টোবর ওমানে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত প্রবাসীদের এবং প্রচারিত ভিডিওটিতে গত ১৮ অক্টোবরে মরদেহগুলো চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের দৃশ্য প্রদর্শিত হয়েছে।
আলোচিত দাবিতে প্রচারিত প্রথম ভিডিওর বিষয়ে অনুসন্ধানে ‘প্রবাসের সাতকাহন – সাইফুল রাজীব’ নামের একটি ফেসবুক পেজে গত ১৮ অক্টোবরে প্রচারিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত দৃশ্যের তুলনা করলে মিল পাওয়া যায়। ভিডিও সম্পর্কে ক্যাপশনে বলা হয়, ‘একসাথে বের হলো ওমানে নি’হ’ত ৮ প্রবাসীর লা’শবা’হী এম্বুলেন্স ’।

এছাড়াও, অনুসন্ধানে ‘কর্ণফুলী মিডিয়া’ ও ‘স্বন্দীপ টিভি’ নামে দুইটি ফেসবুক পেজেও গত ১৮ অক্টোবরে আলোচিত ঘটনার ভিডিও পোস্ট হতে দেখা যায়। পোস্টগুলোতে ভিডিও সম্পর্কে বলা হয়, ‘ওমানে নি-হত সন্দ্বীপের ৮ প্রবাসীর ম’রদেহ বুঝে নিতে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে স্বজনরা।’
এ বিষয়ে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো’র ওয়েবসাইটে ‘ওমানে নিহত সন্দ্বীপের সাত প্রবাসীর লাশ দেশে ফিরল’ শিরোনামে গত ১৮ অক্টোবরে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ওমানে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের সাত প্রবাসীর লাশ দেশে এসে পৌঁছেছে। শনিবার (১৮ অক্টোবর) রাত সোয়া আটটায় বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে লাশগুলো পৌঁছায়। রাত ৯টা ২০ মিনিটে নিহত প্রবাসীদের স্বজনদের কাছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ লাশ হস্তান্তর করে।
ওই সাত ওমানপ্রবাসী সাগরে মাছ শিকারের কাজ করতেন। নিহত ব্যক্তিরা হলেন আমিন মাঝি (৫০), মো. সাহাবুদ্দিন (২৮), মো. বাবলু (২৮), মো. রকি (২৭), মো. আরজু (২৬), মো. জুয়েল (২৮) ও মোশারফ হোসেন রনি (২৬)। স্বজনদের বরাতে জানা গেছে, ৮ অক্টোবর ওমানের ধুকুম প্রদেশের সিদরা এলাকায় ওই সাত প্রবাসীকে বহনকারী গাড়ির সঙ্গে অন্য একটি গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে তাঁরা প্রাণ হারান।’
পরবর্তীতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত দ্বিতীয় ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে মূলধারার গণমাধ্যম ‘নিউজ২৪’ এর ফেসবুক পেজে গত ১৮ অক্টোবরে প্রচারিত একটি লাইভ ভিডিও পাওয়া যায়। ভিডিওটির প্রায় ৯ মিনিট পরবর্তী সময়ের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত দৃশ্যের মিল পাওয়া যায়। ভিডিও সম্পর্কে বলা হয়, ‘সরাসরি>>>চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে পৌঁছেছে ওমানে সড়ক দু/র্ঘটনায় নি/হত ৭ প্রবাসীর’।

এছাড়াও, এ বিষয়ে আরো একাধিক সংবাদমাধ্যমের ফেসবুক পেজে প্রচারিত ভিডিওর দৃশ্যের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত দৃশ্যের মিল পাওয়া যায়।
এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে প্রকৃতপক্ষে ভিডিও দুইটি ওমানে প্রবাসীদের নিহত হওয়ার একই ঘটনার। এ বিষয়ে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চে মূলধারার আরেক গণমাধ্যম একাত্তর টিভিসহ একাধিক গণমাধ্যম সূত্রেও একইরকম তথ্য জানা যায়। উল্লেখ্য, এ বিষয়ে কিছু গণমাধ্যমে সাত প্রবাসী ও কিছু গণমাধ্যমে আট প্রবাসী উল্লেখ করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, সন্দ্বীপের সাত প্রবাসীসহ উক্ত দুর্ঘটনায় মোট আটজন নিহত হন। অপরজন ‘রাউজান উপজেলার চিকদাইর ইউনিয়নের ইউসুফের ছেলে আলাউদ্দিন’।
তবে এ বিষয়ে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চে আলোচিত প্রবাসীদের মরদেহ ঢাকার বিমানবন্দর এলাকায় দগ্ধ হওয়ার দাবির সপক্ষে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। এছাড়াও, সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেনি।
সুতরাং, ওমানে নিহত প্রবাসীদের মরদেহ চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে নেওয়ার দৃশ্য ঢাকায় বিমানবন্দর এলাকায় আগুনে প্রবাসীদের মরদেহ পুড়ে ছাই হয়েছে শীর্ষক দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- প্রবাসের সাতকাহন – সাইফুল রাজীব – Facebook Post
- Sandwip.Tv – Facebook Post
- Prothom Alo – ওমানে নিহত সন্দ্বীপের সাত প্রবাসীর লাশ দেশে ফিরল
- News24 – সরাসরি>>>চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে পৌঁছেছে ওমানে সড়ক দু/র্ঘটনায় নি/হত ৭ প্রবাসীর ম/র/দেহ
- Ekattor – দেশে ফিরেছে ওমানে নিহত আট প্রবাসীর মরদেহ
- The Daily Star – ওমানে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৮ প্রবাসীর মরদেহ ফিরছে রাতে