দীর্ঘ ৩৫ বছর পর ১৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচন। নির্বাচনকে ঘিরে ক্যাম্পাসের আশেপাশের এলাকাগুলোতে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা অবস্থান নেন। এর প্রেক্ষিতে ক্যাম্পাস সংলগ্ন এলাকায় জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্র শিবিরের নেতাকর্মীরা নিজেদের মধ্যে অস্ত্র বিলি করছেন দাবিতে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ আমানউল্লাহ আমান তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি ভিডিও প্রচার করেন।

মোঃ আমানউল্লাহ আমানের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
মোঃ আমানউল্লাহ আমানকে সূত্র দেখিয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজেও ভিডিওটি প্রচার করা হয়।
একই দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহীও তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ভিডিওটি প্রচার করেন।
মোঃ আমানউল্লাহ আমান একই দাবি করে গণমাধ্যমেও বক্তব্য প্রদান করেন।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, এটি জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের অস্ত্র বিলি করার দৃশ্য নয় প্রকৃতপক্ষে, খাবার বিতরণের সময় ধারণ করা ভিডিওকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে অনলাইন গণমাধ্যম Mirror News এর ফেসবুক পেজে একই ঘটনায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় গেটের সামনের জঙ্গলে জামায়াত অস্ত্র বিতরণ করছে, এমন অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে মিরর নিউজ শিরোনামে প্রচারিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আলোচিত ভিডিওতে দেখতে পাওয়া স্থানটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেটের বিপরীত পাশে অবস্থিত বন বিভাগের একটি জায়গা। দীর্ঘ সময় পর রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন নির্বাচন দেখতে সেখানে আসেন বলে মিরর নিউজকে বক্তব্য প্রদানকারী একজন দাবি করেন। তিনি বলেন সেখানকার পরিবেশ মনোরম হওয়ায় তারা সেখানে পিকনিকের আয়োজন করেছেন। আগতদের মাঝে বাদাম বিতরণের সময় কেউ একজন দূর থেকে সেটির ভিডিও ধারণ করে আলোচিত দাবিতে প্রচার করেছেন বলেও তিনি জানান। প্রতিবেদনে পিকনিকের রান্নার ফুটেজের পাশাপাশি একদল তরুণকে বসে শিবিরের গান গাইতেও দেখা যায়। প্রতিবেদনে বক্তব্য প্রদানকারীদের কিংবা ভিডিওটি দেখতে পাওয়া ব্যক্তিদের রাজনৈতিক পরিচয় উল্লেখ না থাকলেও উক্ত গান থেকে ধারণা করা যাচ্ছে, ভিডিওতে দেখতে পাওয়া ব্যক্তিরা জামায়াত শিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িত।
পরবর্তীতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, কালো রংয়ের মত পোশাক পরিহিত একজন ব্যক্তি কয়েকজনের হাতে কিছু একটা দিচ্ছেন। যা নিয়ে বাকিদের খেতে দেখা যায়। ভিডিওটিতে নীল রংয়ের পোশাক পরিহিত একজন ব্যক্তিকে এবং আলোচিত বস্তু বিতরণকারীকে স্পষ্টভাবে হাতে নেওয়া বস্তুটি খেতে দেখা যায়। যা থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়, আলোচিত ভিডিওটিতে অস্ত্র নয় বরং খাবারই দেওয়া হচ্ছিল। কারণ অস্ত্র বিতরণ করা হলে সেটি কারও মুখে পুরে নেওয়াটা বাস্তবসম্মত নয়।

অনুসন্ধানে পরবর্তীতে এ ঘটনায় রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের ফেসবুক পেজে প্রচারিত একটি বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, আলোচিত তথ্যটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরে আসলে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখতে পায় সেখানে বিভিন্ন দলের সমর্থক স্থানীয় উৎসুক লোকজন বাগানের পায়ে হাঁটা পথে ঘুরা ফেরা করছে, গাছের ছায়ায় আড্ডা দিচ্ছে এবং খাওয়া দাওয়া করছে। যার খুব নিকটেই পুলিশ, র্যাব এবং বিজিবি সদস্যদের অবস্থান। বাস্তবতা হচ্ছে এরকম একটি প্রকাশ্য স্থানে পুলিশ, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা এবং মিডিয়া কর্মীদের নাকের ডগায় অস্ত্র বিতরণ করা সম্ভব নয়। কোন একটি মহল উৎসুক লোকজনের আড্ডা দেয়া ও খাওয়ার বিষয়টি দূর থেকে ধারন করে অস্ত্র বিতরণের নামে গুজব ছড়িয়ে জনমনে বিভ্রান্তি ও আতংক ছড়ানোর চেষ্টা করছে। এছাড়াও উক্ত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে সবাইকে গুজব ছড়ানো এবং মিথ্যা তথ্য প্রচার থেকে বিরত থাকার আহ্বানও জানানো হয়।
সুতরাং, রাকসু নির্বাচনকে ঘিরে জামায়াত শিবিরের নেতাকর্মীদের মাঝে অস্ত্র বিলি করার দৃশ্য দাবিতে খাবার বিতরণের ভিডিও প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।