গাইবান্ধায় স্কুল শিক্ষিকা ধর্ষণের শিকার হয়ে লাইভে এসে সহায়তা প্রার্থনার দাবিটি ভুয়া

সম্প্রতি, গাইবান্ধায় একজন স্কুল শিক্ষিকা ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হয়ে ফেসবুক লাইভে এসে প্রশাসনের সহায়তা চেয়েছেন দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসুবকে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। প্রচারিত ভিডিওটিতে একজন নারীকে রক্তাক্ত অবস্থায় সাহায্য প্রার্থনা করতে দেখা যায়।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, গাইবান্ধায় স্কুল শিক্ষিকার ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হয়ে ফেসবুক লাইভে এসে সাহায্য প্রার্থনা করার দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, ভিডিওতে দেখতে পাওয়া নারী পারিবারিক কলহের জেরে নিজেই নিজের মাথায় পানির গ্লাস দিয়ে আঘাত করে আহত হন।

যেহেতু আলোচিত দাবিটি খুবই স্পর্শকাতর সেহেতু এমন কিছু ঘটে থাকলে তা গণমাধ্যমে গুরুত্বসহকারে প্রচার করার কথা। কিন্তু দাবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে গণমাধ্যম কিংবা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে গাইবান্ধায় কোনো স্কুল শিক্ষিকার ধর্ষণের শিকার হয়ে ফেসবুক লাইভে এসে সহায়তা প্রার্থনা করার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

পরবর্তীতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে আলী তানজুম সরকার নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে গত ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে প্রচারিত একটি লাইভ ভিডিওর সন্ধান পাওয়া যায়। ১৫ সেকেন্ডের উক্ত লাইভের সাথে আলোচিত ভিডিওর মিল রয়েছে।

Video Comparison by Rumor Scanner

আলী তানজুম সরকারের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট পর্যবেক্ষণ করে গত ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে প্রচারিত ১৩ সেকেন্ডের আরেকটি লাইভ ভিডিও পাওয়া যায়। সেখানে শুধু নারীকে ‘ও আল্লাহ’ বলতে শোনা যায়।

এছাড়া, ১৭ সেপ্টেম্বর সকালে প্রচারিত আরও একটি লাইভ ভিডিওতে এই নারীকে বলতে শোনা যায়, ‘আসসালামু আলাইকুম! কালকে আপনারা সবাই দেখছেন যে একটা ভিডিও আপলোড হয়ে গেছিলো। তো পারিবারিক একটা ব্যাপারে আমি আমার মাথায় আঘাত করাতে, হঠাৎ আমি জানি না কীভাবে ভিডিওটা আপলোড হয়ে গেছে। আমি কিছু বলতেও পারি নাই৷ তো এখন আমি ভালো আছি। যদি কেউ ভুলভ্রান্তি ভাবে নিয়া থাকেন আমাকে ক্ষমা করে দিয়েন৷ আমি এখন আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।’

পরবর্তীতে ‘Channel A1’ নামক একটি ফেসবুক পেজ থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, আহত নারীর নাম নুসরাত তানজুম। তিনি গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা। উক্ত প্রতিবেদনে থাকা ভুক্তভোগী নারী এবং নারীর স্বামী বক্তব্য থেকে জানা যায়, পারিবারিক কলহের কারণেই উক্ত ঘটনাটি ঘটেছে। উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে এরইমধ্যে ভুক্তভোগী নারী শ্রীপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) দায়ের করেছেন।

অর্থাৎ, আলোচিত ভিডিওর নারী গাইবান্ধার কোনো শিক্ষিকা নন এবং ধর্ষণের শিকারও হননি। পারিবারিক কলহের জেরেই ওই নারী নিজের মাথায় নিজে আঘাত করে রক্তাক্ত হয়েছেন।

বিষয়টি অধিকতর যাচাইয়ের জন্য ভিডিওতে থাকা নারী অর্থাৎ নুসরাত তানজুমের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করা হলে নুসরাত তানজুমের স্বামী রিউমর স্ক্যানারকে জানান, ধর্ষণ বা নির্যাতনের বিষয়টি মিথ্যা। আসলে পারিবারিক কারণে সে (নুসরাত তানজুম) রাগের মাথায় পানি খাওয়ার গ্লাস দিয়ে নিজের মাথায় নিজে আঘাত করে বসে। এতে রক্তাক্ত হয়ে যায়।’

সুতরাং, গাইবান্ধায় স্কুল শিক্ষিকার ধর্ষণের শিকার হয়ে ফেসবুক লাইভে এসে প্রশাসনের সহায়তা প্রার্থনা করার দাবিতে পারিবারিক কলহের জেরে নিজেই নিজেকে আহত করার ভিডিও প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

  • Ali Tanzom Sorkar- Facebook Live (1,2,3)
  • Channel A1- Report 
  • Nusrat Tanzom’s Husband- Statement

আরও পড়ুন

spot_img