এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে উদ্ধৃত করে একাধিক গণমাধ্যমের নামে সম্পাদিত ফটোকার্ড প্রচার 

সম্প্রতি ‘প্রধান উপদেষ্টাকে বিশ্বাস করা ভুল ছিল: নাহিদ’ শিরোনামে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম আরটিভি, ‘প্রধান উপদেষ্টা আখের গুছিয়েছেন, সেফ এক্সিটের বিষয়ে ভাবছেন: নাহিদ ইসলাম’ শিরোনামে কালের কন্ঠ এবং ‘প্রধান উপদেষ্টা প্রতারণা করেছে: নাহিদ ইসলাম’ শিরোনামে একাত্তর টিভির ডিজাইন সংবলিত  তিনটি পৃথক ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। 

এসব ফটোকার্ডে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে উদ্ধৃত এবং তার ছবি যুক্ত করা হয়েছে।

এছাড়া, ‘পিএস সফিক সেফ এক্সিটের কথা ভাবছেন: নাহিদ’ শিরোনামে ডিবিসি নিউজের ডিজাইন সংবলিত  একটি ফটোকার্ডও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত আরটিভির ফটোকার্ডের পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফেসবুকে প্রচারিত কালের কন্ঠের ফটোকার্ডের পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)৷

ফেসবুকে প্রচারিত একাত্তর টিভির ফটোকার্ডের পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)৷

ফেসবুকে প্রচারিত ডিবিসি নিউজের ফটোকার্ডের পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)৷

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তার প্রেস সচিব শফিকুল আলমকে জড়িয়ে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম আলোচিত চারটি ফটোকার্ডে উল্লিখিত মন্তব্য করেননি। এছাড়া, আরটিভি, কালের কন্ঠ, একাত্তর টিভি ও ডিবিসি নিউজ এরূপ কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রচার করেনি। প্রকৃতপক্ষে, এসব গণমাধ্যমের ভিন্ন চারটি ফটোকার্ড ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলো তৈরি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলো পৃথকভাবে যাচাই করেছে রিউমর স্ক্যানার। 

আরটিভির ফটোকার্ড যাচাই:

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ফটোকার্ডটিতে আরটিভির লোগো রয়েছে।

উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে আরটিভির ফেসবুক পেজে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলো পর্যবেক্ষণ করে উক্ত তারিখে আলোচিত শিরোনাম সংবলিত  কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া, কালের কন্ঠের ওয়েবসাইটইউটিউব চ্যানেলে উক্ত দাবির বিষয়ে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাছাড়া, আরটিভির প্রচলিত ফটোকার্ডের শিরোনামের ফন্টের সাথে আলোচিত ফটোকার্ডটির একটি অংশের ফন্টের পার্থক্যও লক্ষ্য করা যায়।

তবে, আরটিভির ফেসবুক পেজে গত ০৪  অক্টোবর প্রকাশিত একটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায় যেটির সাথে আলোচিত ফটোকার্ডটির আংশিক সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।

Comparison: Rumor Scanner 

উক্ত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এটির সাথে প্রচারিত ফটোকার্ডে আরটিভির লোগো এবং নাহিদ ইসলামের ছবির মিল রয়েছে, তবে উভয়ের শিরোনামে ভিন্নতা রয়েছে। মূলত, ‘কয়েকজন উপদেষ্টাকে বিশ্বাষ করা ভুল ছিল: নাহিদ’ শিরোনামে আরটিভির উক্ত ফটোকার্ডটির ‘কয়েকজন’ এর স্থলে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ‘প্রধান’ শব্দটি প্রতিস্থাপন করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।

আরটিভির উক্ত ফটোকার্ডের মন্তব্য ঘরে দেওয়া ওয়েবসাইটের লিংকে একই শিরোনামের একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেখানে বলা হয়েছে, ‘কয়েকজন উপদেষ্টাকে বিশ্বাস করা সবচেয়ে বড় ভুল ছিল বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। সম্প্রতি একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন।’

অনুসন্ধানে জানা যায়, নাহিদ ইসলাম একাত্তর টিভিকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এই বিষয়ে মন্তব্য করেছেন। 

অর্থাৎ, আরটিভির লোগো ও ডিজাইন সংবলিত  ফটোকার্ড সম্পাদনা করে নাহিদ ইসলামের মন্তব্য বিকৃতভাবে প্রচার করা হয়েছে।

কালের কণ্ঠের ফটোকার্ড যাচাই:

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ফটোকার্ডটিতে কালের কন্ঠের লোগো রয়েছে এবং এটি প্রকাশের তারিখ ০৫ অক্টোবর ২০২৫ উল্লেখ করা হয়েছে।

উক্ত তথ্যাবলীর সূত্র ধরে কালের কন্ঠের ফেসবুক পেজে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলো পর্যবেক্ষণ করে উক্ত তারিখে আলোচিত শিরোনাম সংবলিত  কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া, কালের কন্ঠের ওয়েবসাইটইউটিউব চ্যানেলে উক্ত দাবির বিষয়ে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাছাড়া, কালের কন্ঠের প্রচলিত ফটোকার্ডের শিরোনামের ফন্টের সাথে আলোচিত ফটোকার্ডটির একটি অংশের ফন্টের পার্থক্যও লক্ষ্য করা যায়।

তবে, কালের কন্ঠের ফেসবুক পেজে গত ০৫ অক্টোবর প্রকাশিত একটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায় যেটির সাথে আলোচিত ফটোকার্ডটির আংশিক সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।

Comparison: Rumor Scanner 

উক্ত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এটির সাথে প্রচারিত ফটোকার্ডে কালের কন্ঠের লোগো এবং নাহিদ ইসলামের ছবির মিল রয়েছে, তবে উভয়ের শিরোনামে ভিন্নতা রয়েছে। মূলত, ‘অনেক উপদেষ্টা আখের গুছিয়েছেন, সেফ এক্সিটের বিষয়ে ভাবছেন: নাহিদ ইসলাম’ শিরোনামে কালের কন্ঠের উক্ত ফটোকার্ডটির ‘অনেক’ এর স্থলে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ‘প্রধান’ শব্দটি প্রতিস্থাপন করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।

কালের কন্ঠের উক্ত ফটোকার্ডের মন্তব্য ঘরে দেওয়া ওয়েবসাইটের লিংকে একই শিরোনামের একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেখানে বলা হয়েছে, ‘উপদেষ্টাদের অনেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে ফেলেছেন। তারা নিজেদের সেফ এক্সিটের কথা ভাবছেন। তারা মনে করছেন, রাজনৈতিক দলগুলার সমর্থনই তাদের ক্ষমতায় টিকিয়ে রেখেছে।’ বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন নাহিদ ইসলাম।

অনুসন্ধানে জানা যায়, নাহিদ ইসলাম একাত্তর টিভিকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এই বিষয়ে মন্তব্য করেছেন। 

অর্থাৎ, কালের কন্ঠের লোগো ও ডিজাইন সংবলিত  ফটোকার্ড সম্পাদনা করে নাহিদ ইসলামের মন্তব্য বিকৃতভাবে প্রচার করা হয়েছে।

একাত্তর টিভির ফটোকার্ড যাচাই:

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ফটোকার্ডটিতে একাত্তর টিভির লোগো রয়েছে এবং এটি প্রকাশের তারিখ ০৪ অক্টোবর ২০২৫ উল্লেখ করা হয়েছে।

উক্ত তথ্যাবলীর সূত্র ধরে একাত্তর টিভির ফেসবুক পেজে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলো পর্যবেক্ষণ করে উক্ত তারিখে আলোচিত শিরোনাম সংবলিত  কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া, একাত্তর টিভির ওয়েবসাইটইউটিউব চ্যানেলে উক্ত দাবির বিষয়ে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

তবে, একাত্তর টিভির ফেসবুক পেজে গত ০৪ অক্টোবর প্রকাশিত একটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায় যেটির সাথে আলোচিত ফটোকার্ডটির আংশিক সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।

Comparison: Rumor Scanner

উক্ত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এটির সাথে প্রচারিত ফটোকার্ডে একাত্তর টিভির লোগো এবং নাহিদ ইসলামের ছবির মিল রয়েছে, তবে উভয়ের শিরোনামে ভিন্নতা রয়েছে। মূলত, ‘কয়েকজন উপদেষ্টা প্রতারণা করেছে: নাহিদ ইসলাম’ শিরোনামে একাত্তর টিভির উক্ত ফটোকার্ডটির ‘কয়েকজন’ এর স্থলে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ‘প্রধান’ শব্দটি প্রতিস্থাপন করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।

একাত্তর টিভির উক্ত ফটোকার্ডের মন্তব্য ঘরে দেওয়া ওয়েবসাইটের লিংকে একই শিরোনামের একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেখানে বলা হয়েছে, ‘উপদেষ্টা পরিষদের অনেককেই বিশ্বাস করাটা ছিলো অনেক বড় ভুল। তাদের প্রতি আস্থা রেখে প্রতারিত হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। সেইসব উপদেষ্টাদের নাম প্রকাশের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি।’ নাহিদ ইসলাম একাত্তর টিভিকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এই বিষয়ে মন্তব্য করেছেন। 

অর্থাৎ, একাত্তর টিভির লোগো ও ডিজাইন সংবলিত  ফটোকার্ড সম্পাদনা করে নাহিদ ইসলামের মন্তব্য বিকৃতভাবে প্রচার করা হয়েছে।

ডিবিসি নিউজের ফটোকার্ড যাচাই:

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ফটোকার্ডটিতে ‘ডিবিসি নিউজ’ এর লোগো এবং প্রকাশের তারিখ হিসেবে ‘৫ই অক্টোবর, ২৫’ উল্লেখ রয়েছে।

উক্ত তথ্যাবলীর সূত্র ধরে ডিবিসি নিউজের ফেসবুক পেজে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলো পর্যবেক্ষণ করে উক্ত তারিখে আলোচিত শিরোনাম সংবলিত  কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া, ডিবিসি নিউজের ওয়েবসাইটইউটিউব চ্যানেলে উক্ত দাবির বিষয়ে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

তবে, ডিবিসি নিউজের ফেসবুক পেজে গত ০৫  অক্টোবর প্রকাশিত একটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায় যেটির সাথে আলোচিত ফটোকার্ডটির আংশিক সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।

Comparison: Rumor Scanner

উক্ত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এটির সাথে প্রচারিত ফটোকার্ডে ডিবিসি নিউজের লোগো এবং নাহিদ ইসলামের ছবির মিল রয়েছে, তবে উভয়ের শিরোনামে ভিন্নতা রয়েছে। মূলত, ‘অনেক উপদেষ্টা সেফ এক্সিটের কথা ভাবছেন: নাহিদ’ শিরোনামে ডিবিসি নিউজের উক্ত ফটোকার্ডটির ‘অনেক উপদেষ্টা’ এর স্থলে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ‘পিএস সফিক’ শব্দটি প্রতিস্থাপন করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।

ডিবিসি নিউজের উক্ত ফটোকার্ডের মন্তব্য ঘরে দেওয়া ওয়েবসাইটের লিংকে একই শিরোনামের একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেখানে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের একটি বড় অংশ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ বা লিয়াজোঁ স্থাপন করেছেন বলে গুরুতর অভিযোগ করেছেন সাবেক উপদেষ্টা এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি মন্তব্য করেছেন, এই উপদেষ্টারা এখন নিজেদের ‘সেফ এক্সিট’ নিয়ে ভাবছেন।সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন নাহিদ ইসলাম।

অনুসন্ধানে জানা যায়, নাহিদ ইসলাম একাত্তর টিভিকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এই বিষয়ে মন্তব্য করেছেন। 

অর্থাৎ, ডিবিসি নিউজের লোগো ও ডিজাইন সংবলিত  ফটোকার্ড সম্পাদনা করে নাহিদ ইসলামের মন্তব্য বিকৃতভাবে প্রচার করা হয়েছে।

সুতরাং, প্রধান উপদেষ্টা এবং তার প্রেস সচিব শফিকুল আলমকে জড়িয়ে নাহিদ ইসলামের নামে একাধিক গণমাধ্যমের নামে ভিন্ন ভিন্ন শিরোনামে প্রকাশিত ফটোকার্ডগুলো সম্পাদিত। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img