গতকাল ১ অক্টোবর থেকে ‘নিবন্ধন ফিরে পেল আওয়ামী লীগ’ শীর্ষক দাবিতে ইন্টারনেটের বিভিন্ন প্লাটফর্মে একাধিক ভিডিও প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার।

টিকটকে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে।
এই প্রতিবেদন প্রকাশ অবধি উল্লেখিত ভিডিওগুলো সবমিলিয়ে প্রায় ৩ লক্ষবার দেখা হয়েছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন ফিরে পায়নি। প্রকৃতপক্ষে, গত ৩০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয় লীগ নামের একটি দল নিবন্ধনের প্রাথমিক শর্ত পূরণ করেছে বলে জানান নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব আখতার আহমেদ। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ জাতীয় লীগ ভিন্ন দুটি রাজনৈতিক সংগঠন।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত দাবিতে সবচেয়ে ভাইরাল ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এতে ডিবিসি নিউজের একটি প্রতিবেদনের ফুটেজ ব্যবহার করা হয়েছে। তবে উক্ত প্রতিবেদনটিতে আওয়ামী লীগ নিবন্ধন ফিরে পেয়েছে এমন কোনো দাবি করা হয়নি।
প্রতিবেদনে সংবাদ পাঠিকাকে বলতে শোনা যায়, ‘নির্বাচনের কমিশনের চূড়ান্ত নিবন্ধন পেতে যাচ্ছে জাতীয় নাগরিক পার্টি ও বাংলাদেশ জাতীয় লীগ। তাদের নিবন্ধন নিয়ে কারো দাবি আপত্তি থাকলে তা জানতে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করবে ইসি। এনসিপির কাছে প্রতীক চেয়ে দেওয়া হবে চিঠি। নিবন্ধনের শর্ত পূরণ করতে পারেনি সাতটি দল। এছাড়া নয়টি দলের বিষয়ে মাঠপর্যায়ে আবার তদন্ত করা হবে।’ পরবর্তীতে এ নিয়ে ইসির সংবাদ সম্মেলনের কিছু অংশ দেখানো হয় এবং সংবাদ সম্মেলন নিয়ে ডিবিসির এক সংবাদ প্রতিবেদককে তথ্য জানাতে দেখা যায়।
উক্ত প্রতিবেদনের কোথাও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নিবন্ধন ফিরে পেয়েছে এমন দাবি করা করা হয়নি।
এ বিষয়ে অধিকতর নিশ্চিত নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট ঘেটে দেখে রিউমর স্ক্যানার টিম। ওয়েবসাইটে থাকা নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের তালিকায় (আর্কাইভ) বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নাম থাকলেও, দলটির নামের পাশে ব্রাকেটে ‘স্থগিত’ শব্দটি উল্লেখ আছে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ জাতীয় লীগ পৃথক দুটি রাজনৈতিক দল। ঢাকার স্বামীবাগে কে এস দাস লেনের রোজ গার্ডেনে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা হয়। প্রতিষ্ঠাকালে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী দলটির সভাপতি, শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক এবং শেখ মুজিবুর রহমান যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন। আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে যাত্রা শুরু করলেও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় ১৯৫৫ সালের কাউন্সিলে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দেওয়া হয়। নতুন নাম হয়-‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’। স্বাধীনতার পর ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’ নাম নেয় দলটি। অপরদিকে, ১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই পূর্ব পাকিস্তানের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী আতাউর রহমান খানের নেতৃত্বে জাতীয় লীগ গঠিত হয়। আতাউর ১৯৭০ সালের পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে ঢাকা-৩ আসন থেকে ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন। তবে স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি জাতীয় লীগের হয়ে ঢাকা-১৯ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
কোনো রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে অংশ নিতে হলে সে দলের ইসির নিবন্ধন থাকতে হবে। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এই নিয়ম চালু হয়। এরপর কয়েকবার নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছিল জাতীয় লীগ। তবে এবারের আগে কখনোই ইতিবাচক সাড়া পায়নি দলটি।
উল্লেখ্য, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, তার অঙ্গ সংগঠন এবং ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার প্রেক্ষিতে গত ১২ মে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত (আর্কাইভ) করে নির্বাচন কমিশন।
আলোচিত দাবিতে প্রচারিত অন্য ভিডিগুলোতে বলা হয়- ‘সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এর নির্দেশে নিবন্ধন ফিরে পেল আওয়ামী লীগ। ড. ইউনূসের দেশে না থাকার সুযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সরাসরি ভিডিও কলে কথা বলেছেন সেনাপ্রধান।’ তবে ভিডিওগুলোতে পুরোনো বিভিন্ন ঘটনার কিছু অপ্রাসঙ্গিক ফুটেজ ও ছবি ছাড়া দাবির সপক্ষে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করতে দেখা যায়নি।
সুতরাং, নিবন্ধন স্থগিত থাকা রাজনৈতিক দল বাংলাদেশের আওয়ামী লীগের নিবন্ধন ফিরে পাওয়ার দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- DBC News: ইসির চূড়ান্ত নিবন্ধন পেতে যাচ্ছে দুটি রাজনৈতিক দল
- EC Website: নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলসমূহের তালিকা
- Bdnews24: আওয়ামী লীগের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
- Jagonews24: ৫৬ বছর পর মিলছে ইসির নিবন্ধন, ফিরে পেতে চায় লাঙ্গল প্রতীক
- EC Gazette: আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত