নারায়ণগঞ্জের স্কুল ভবনে ফাটল বা ধস নয়, প্রচারিত ভিডিওটি স্কুলের ভবনে বৈদ্যুতিক দূর্ঘটনার 

গত ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে ‘স্কুল চলাকালীন ভবন ভেঙ্গে পড়তেছে’ এবং ‘স্কুল চলাকালীন ট্রান্সমিটারে আগুন, ফা*টল ধরল ভবনে’ ক্যাপশনে একটি ভিডিও বিভিন্ন গণমাধ্যম ও ইন্টারনেটে বিভিন্ন প্লাটফর্মে প্রচার করা হয়েছে।

স্কুলের ভবন ভেঙে পড়েছে দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচারিত প্রতিবেদন দেখুন- যায়যায়দিন (ফেসবুক), মানবকথন (ফেসবুক), বিডি২৪রিপোর্ট (ফেসবুক), নিউজ ২৪ ঘন্টা (ইউটিউব)। 

এরমধ্যে যায়যায়দিন পোস্টের ক্যাপশন ‘স্কুল চলাকালীন ভবন ভেঙ্গে পড়তেছে’ থেকে সম্পাদনা করে ‘স্কুল চলাকালীন ট্রান্সমিটারে আ’গু’ন ভবনে ফা’ট’ল’ করলেও ভিডিওর শিরোনাম অপরিবর্তীত রাখে।

ট্রান্সমিটারে আগুন থেকে স্কুলের ভবনে ফাটল দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচারিত প্রতিবেদন দেখুন- জনকণ্ঠ (ফেসবুক), মোহনা টিভি (ফেসবুক), মাছরাঙা নিউজ( ইউটিউব), বাংলা টিভি ইউরোপ (ইউটিউব)।

ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)৷

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

টিকটকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ইন্সটাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)  

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় বক্তাবলী ইউনিয়নের কানাইনগর সোবহানিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবন ধসে পড়েনি বা ভবনে ফাটল ধরেনি। প্রকৃতপক্ষে, স্কুলটির প্রধান ফটকের বাইরে বিদ্যুতের মিটারে শর্ট সার্কিট থেকে সৃষ্ট আগুনের একটি ভিডিওকে বিভ্রান্তিকরভাবে ভবনে ফাটল ও ভবন ধস দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে Maizur Rahman Munna নামক ফেসবুক প্রোফাইলে গত ২৬ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত পোস্টে আলোচিত ভিডিওটির অনুরূপ একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

পোস্টটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, ভিডিওর ঘটনাটি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার বক্তাবলী ইউনিয়নের কানাইনগর স্কুলে ঘটেছে। সেখানে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট হয়ে মিটারে আগুন লেগে যায়।  

উক্ত তথ্যাবলীর সূত্র ধরে সময় টিভির ওয়েবসাইটে গত ২৭ সেপ্টেম্বর ‘নারায়ণগঞ্জে স্কুলভবন ধস বলে অপপ্রচার, আসলে যা ঘটেছিল’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় বক্তাবলী ইউনিয়নের কানাইনগর সোবহানিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের স্কুল ভবন ধসে পড়নি বা ভবনে ফাটল ধরেনি। 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি সম্পর্কে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, ভবনে কোনো ফাটল ধরেনি বা ধসেও পড়েনি। কেবল বিদ্যুতের মিটারে আগুন ধরে সেটি পুড়ে যায় এবং দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। পরে মিটার পরিবর্তন করা হয়।

স্কুলটির প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নান সময় সংবাদকে বলেন, ‘২৫ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি চলছিল। সকাল সাড়ে দশটার দিকে চারতলা ভবনের নিচতলায় প্রধান ফটকের বাইরে বিদ্যুতের মিটারে শর্ট সার্কিট থেকে আগুন ধরে যায়। শব্দ ও ধোঁয়া বের হলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং সবাই দ্রুত মাঠে অবস্থান নেয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আগুন লাগার প্রায় চার মিনিটের মধ্যে বিদ্যালয়ের নিজস্ব বৈদ্যুতিক মিস্ত্রী বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দিলে আতঙ্ক কেটে যায়। পরে ডিপিডিসির কর্মীরা এসে মিটার পরিবর্তন করে দেয়। ভবনের কোনো ক্ষতি হয়নি।’

প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নান স্পষ্ট করে বলেন, ‘আগুনে শুধু মিটার পুড়েছে। ভবনে কোনো ফাটল ধরেনি বা ভবন ধসেও পড়েনি। এ বিষয়ে যে খবর প্রচার করা হয়েছে, সেটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও গুজব।’

পরবর্তীতে, ঢাকা পোস্টের ওয়েবসাইটে গত ২৭ সেপ্টেম্বর ‘নারায়ণগঞ্জে স্কুল ভবন ধসের গুজব, যা বললেন প্রধান শিক্ষক’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য পাওয়া যায়। 

সুতরাং, নারায়ণগঞ্জের কানাইনগর সোবহানিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের স্কুল ভবন বৈদ্যুতিক দূর্ঘটনার ভিডিওকে স্কুল ভবনে ফাটল এবং ভবন ধস দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img