সম্প্রতি ‘এই দেশ শেখ হাসিনা সরকার ছাড়া কেউ শাসন করতে পারবে না জয় বাংলা শেখ হাসিনা ফিরছেন।’ শিরোনামে একটি ভিডিও ‘শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরাতে জনতার স্রোত’ ক্যাপশনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)৷
এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি ফেসবুকে প্রচারিত সর্বাধিক ভাইরাল ভিডিওটি সাড়ে ৭ হাজারবার দেখা হয়েছে, এটিতে প্রায় ৮ শত পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে এবং ভিডিওটি ১২৯ বার শেয়ার করা হয়েছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরাতে আয়োজিত কোনো মিছিলের দৃশ্য নয়। প্রকৃতপক্ষে, চলতি বছরের আগস্ট মাসে ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর দুর্বৃত্তদের হামলা এবং বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের ভাঙচুর থেকে উদ্ভুত পরিস্থিতির ভিডিওকে শেখ হাসিনার জন্য আয়োজিত ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হয়েছে
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে Joy Islam নামক ইউটিউব চ্যানেলে গত ০১ সেপ্টেম্বর ‘মধ্য রাতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ময়মনসিংহ’ শিরোনামে প্রকাশিত আলোচিত ভিডিওটির অনুরূপ একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিওর শিরোনামে থাকা তথ্যের সূত্র ধরে জনকণ্ঠের ওয়েবসাইটে গত ৩১ আগস্ট ‘বাকৃবিতে শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগতদের হামলা’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে সংযুক্ত ছবির সাথে আলোচিত ভিডিওটির দৃশ্যের মিল রয়েছে।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ৩১ আগস্ট রাত পৌনে ৮টার দিকে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) কম্বাইন্ড ডিগ্রির দাবিতে আন্দোলনকারীদের উপর দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হামলা করেছে দুর্বৃত্তরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনের আশপাশে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের উপর দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এ সময় বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের শব্দও শোনা যায়। হামলার ঘটনায় সাংবাদিকসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবন ভাঙচুর করে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এতে ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি উত্তাল হয়ে ওঠে। ক্যাম্পাসে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্যের উপস্থিতি দেখা যায়নি।
এর আগে, কম্বাইন্ড ডিগ্রি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আয়োজিত একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত আশানুরূপ না হওয়ায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) পশুপালন ও ভেটেরিনারি অনুষদের একক কম্বাইন্ড ডিগ্রির দাবি করা শিক্ষার্থীরা জরুরি সভায় উপাচার্যসহ উপস্থিত সকল শিক্ষককে অবরুদ্ধ করে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছিল। শিক্ষকদের প্রায় ৬-৭ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখার পর এক পর্যায়ে দ্বিতীয়বারের মতো একাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এক পর্যায়ে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মুফিদুল আলম এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সেখানে উপস্থিত হন। এরপর শিক্ষকরা বাইরে আসার সাথে সাথে জেলা প্রশাসকের সামনেই বহিরাগতরা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালায়।
এই বিষয়ে কালের কন্ঠের ওয়েবসাইটে গত ৩১ আগস্ট ‘অনির্দিষ্টকালের জন্য বাকৃবি বন্ধ, শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ’ প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেই একই তথ্য পাওয়া যায়৷
সুতরাং, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরাতে জনতার মিছিল দাবিতে বাকৃবির ভিন্ন ঘটনার ভিডিও প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা৷